ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রী জানেন না, কথা বলতে চান না সচিব

বিমানে পরিচালক পদে নিয়োগ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৩ জুন ২০১৭

বিমানে পরিচালক পদে নিয়োগ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড

আজাদ সুলায়মান ॥ বিমানের প্রকৌশল পরিচালক উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামানের চাকরির মেয়াদ ৩১ মার্চের পর আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ছিল আরও অন্তত তিন মাস আগের। তিনি যথারীতি চলেও গেলেন। এ পদ এখনও শূন্য। গত দুই মাস পদটি খালি থাকার পরও বিমানের টনক নড়েনি। বিমান ম্যানেজমেন্ট যে শম্বুক গতিতে কাজ করছে- তাতে আগামী তিন মাসেও এ পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। একইভাবে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে পরিচালক পরিকল্পনা ও প্রকিউরমেন্টের দুটো পদ। এগুলো পূরণের দিকে বিমানের কোন নজর নেই। অথচ মাত্র কদিন আগে পদোন্নতি দিয়ে পরিচালক মার্কেটিংয়ের শূন্যপদ পূরণ করা হয়েছে। এখন আবার হঠাৎ এই পদে আবারও পরিচালক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। বিমান ম্যানেজমেন্টের এহেন কা- দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এটা কিভাবে করা হয়, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তিনি এ নিয়ে সচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। যোগাযোগ করা হলে সচিব এস এম গোলাম ফারুক বলেন, বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যদি ভাল ও যোগ্য লোক পাওয়া যায় তাহলে সমস্যা কোথায়? তবে এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। এটা দেখে বিমান বোর্ড ও ম্যানেজমেন্ট। তারা কি চিন্তাভাবনা করছে কি কৌশল অবলম্বন করছে এটা তারাই ভাল বলতে পারবে। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য নেয়াই ভাল। বিমান সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিমানের পরিচালক প্রশাসন ও মার্কেটিং পদে পদোন্নতি দিয়ে শূন্য পদ পূরণ করা হয়। তখন যোগ্য লোক থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি দিয়ে পূরণ করা হয়নি কাস্টমার সার্ভিস ও প্রকিউরমেন্ট পদ। এ দুটো পদ খালি রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। মাসের পর মাস ধরে এমন গুরুত্বপূর্ণ দুটো পদ খালি থাকায় বিমানের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। স্থবিরতা দেখা দিয়েছে এ সব শূন্য পদের দফতরগুলোতে। এভাবে পদ খালি রেখে হঠাৎ গত সপ্তাহে বিমান বিজ্ঞপ্তি দেয় মার্কেটিং ও কাস্টমার বিভাগে দুটো পরিচালক পদে লোক নিয়োগের। এতে বিমানের সংশ্লিষ্ট শাখার লোকজন বিস্মিত হয়ে প্েড়। কেন না মাত্র ক’দিন আগেই আলী আহসান বাবুকে পদোন্নতি দিয়ে মার্র্কেংটি পরিচালকের শূন্যপদ পূরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে বছরের পর বছর ধরে কাস্টমার সার্ভিস পদের দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন আতিক সোবহান। নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না রহস্যজনক কারণে। একইভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে খান মোশাররফ হোসেনকে। অন্য দিকে প্রকৌশল শাখাার পরিচালকের পদ খালি রাখা হচ্ছে দু’মাস ধরে। এ পদে বিগত ৭ বছর ধরে চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন করা উইং কমান্ডার গত ৩১ মার্চ চলে গেছেন ফের চাকরির মেয়াদ নবায়ন না করায়। তাকে এ পদে রাখা হবে না এমন সিদ্ধান্ত ছিল আরও অন্তত তিন মাস আগে। এখনও শূন্য রাখা হচ্ছে এ পদ। সম্প্রতি এ পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও বিমান ম্যানেজমেন্ট যে শম্বুক গতিতে কাজ করছে তাতে আরও অন্তত তিন মাস লাগবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। যার অর্থ দাঁড়ায় এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ ৬ মাস ধরে শূন্য। প্রকৌশল শাখার মতো এমন গুরুত্বপূণ পদ পূরণ করতে গিয়ে বিমান ম্যানেজমেন্ট যে অদূরদর্শিতা ও সিদ্ধান্তহীনতার পরিচয় দিয়েছে তা এয়ারলাইন্সটির চরম দৈন্যেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী। তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী এভিয়েশন সেক্টরকে সঠিক সময়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েই টিকতে হচ্ছে। যে এয়ারলাইন্স যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেটা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে। এখানে যোগ্যরাই টেকে। কাউকে ভাল লাগা, না লাগা দিয়ে আর যাই হোক এয়ারলাইন্স চলে না। উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান চলে যাওয়ার অন্তত আরও তিন মাস আগে থেকে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা ছিল জরুরী। বিমান সেটা করতে পারেনি। জানা যায়, প্রকৌশল শাখা ছাড়াও শূন্য রয়েছে-কাস্টমার সার্ভিস, পরিকল্পনা ও প্রকিউরমেন্ট শাখার তিনটা পদ। সম্প্রতি পরিচালক মার্কেটিং পদে পদোন্নতি দেয়া হয় আলী আহসান বাবু ও পরিচালক প্রশাসন পদে দেয়া হয় মমিনুল ইসলামকে। এদের পদোন্নতি দিয়ে এ দুটো পদ পূরণের পর ক’দিন পরই বিমান বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় এ দুটো পদে বাইরে থেকে আরও দুজন পরিচালককে নিয়োগ দেয়ার। এতে বিমানে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। তবে ওপর মহলের তদ্বিরের দরুন শেষ পর্যন্ত পরিচালক প্রশাসন পদে ফের লোক নিয়োগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় বিমান। এরপর শুধু পরিচালক মার্কেটিং পদে ফের লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এতে আরও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বিমানের এহেন সিদ্ধান্তহীনতা ও তুঘলকি কা-ে তীব্র সমালোচানা দেখা দেয়। অথচ পরিকল্পনা ও প্রকিউরমেন্ট শাখায় যথেষ্ট উপযুক্ত লোক থাকা সত্ত্বেও তাদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিব বলেন, বিমান বোর্ড ও টপ ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তহীনতা ও হীনম্মন্যতার জন্য এসব পদ দীর্ঘদিন ধরেই রহস্যজনক কারণে শূন্য ফেলে রাখা হয়েছে। এ সম্পর্কে নানা গুঞ্জন রয়েছে। সদ্য পদোন্নতি পাওয়া এক ‘নাবালক’ জিএমকে ওই পদের দায়িত্বভার দেয়ার পাঁয়তারা চালানেরা হচ্ছে। এ কারণেই এ দুটো পদ খালি রাখা হচ্ছে। এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সচিব এস এম গোলাম ফারুক জনকণ্ঠকে বলেন, এ সব অভিযোগ যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে খতিয়ে দেখতে হবে। বিমানের ভেতরের এতকিছু আমার জানা নেই।
×