ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনে প্রাণের উচ্ছ্বাস

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনে প্রাণের উচ্ছ্বাস

সরকার আব্দুল্লাহ তুহিন ॥ উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের নিমিত্তে ২০০৬ সালের ৯ মে, দুখুমিয়ার স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহ শহরের অদূরে ত্রিশালে প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। দেখতে দেখতে শিক্ষালয়টি ১১ বছরে পা রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর গত ১৯ এপ্রিল ২০১৭ ইং প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। আর এই উৎসবমুখর দিনটি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। ৪২ একরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণটি সেজেছিল দৃষ্টিনন্দন সাজে। সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। প্রিয় মুখগুলোর সঙ্গে আনন্দ উচ্ছ্বাসে রঙিন একটি দিন কাটল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের। প্রাণপ্রিয় ক্যা¤পাসে স্মৃতিময় পুরো দিনটি কাটালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-সহপাঠীদের সঙ্গে মাতলেন ক্ষাণিকটা সময়। প্রত্যেকেই যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য ফিরে গিয়েছিলেন ফেলে আসা সেই দিনগুলোতে। হাতড়ে ফিরেছেন ক্যা¤পাস জীবনের বিগত বছরগুলোর সেই উচ্ছ্বল, বাধাহীন, তারুণ্য ও যৌবনের ছোট গল্পগুলোকে। বর্ণাঢ্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাস মুখর পরিবেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হলো। বুধবার (১৯ এপ্রিল) সকাল থেকে সমাবর্তনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ছিল বর্ণাঢ্য আয়োজন। প্রথমবারের মতো সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেছিলেন প্রায় ১৪শ’ শিক্ষার্থী। সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন পুরনো খেলার মাঠে। অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে স্টেজ ও প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছিল এবং নির্মাণ করা হয়েছিল দুটি হেলিপ্যাডও। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যও। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান। রাষ্ট্রপতির আগমনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয়েছিল বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা। এদিকে ¯œাাতক ও ¯œাতকোত্তর পর্যায়ে সর্বোচ্চ নম্বরধারী ২৯ জন শিক্ষার্থীকে ৩২টি স্বর্ণপদক দেয়া হয়। এদের মধ্যে বিভিন্ন বিভাগের ১৭ জন মেধাবী ছাত্রী ও ১৫ জন ছাত্র রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বারের মতো আয়োজন করা হয়েছে এই মিলন মেলার। প্রথম সমাবর্তনে থাকতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছেন অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ক¤িপউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুন্নাহার জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য গর্বের বিষয়। পড়াশোনা শেষ করে আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পদক গ্রহণ করা আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি।’ অনেকে এসেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউবা স্বামী, স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে এসেছেন নিজের কাটিয়ে যাওয়া চিরচেনা সেই ক্যা¤পাসে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যা¤পাস মুখরিত হয়েছিল নবীন-প্রবীণের এক অন্যরকম মিলনমেলায়। নবীনরা বরণ করে নিয়েছিল তাদের অগ্রজদের। নিজেদের আবাসন ছেড়ে জায়গা করে দিয়েছে ক্যা¤পাস থেকে চলে যাওয়া সিনিয়র ভাইয়া-আপুদের। শিক্ষাজীবনের বহু কাক্সিক্ষত এই মাহেন্দ্রক্ষণের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দলবেঁধে যোগ দিয়েছিলেন নতুন-পুরনো শিক্ষার্থীরা। ক্যা¤পাস জীবনের ফেলে আসা সেই স্মৃতিময় দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলেন প্রাক্তন এ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-সহপাঠীদের সংমিশ্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থান পরিণত হয়েছিল মহোৎসবে। চক্রবাক কেন্টিন, জয় বাংলা ভাস্কর্য, স্বাধীনতা চত্বর, কলাভবন, বটতলা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, রুদ্র মঙ্গল ছাতাসহ ক্যা¤পাসের প্রায় প্রতিটি জায়গায় দেখা গিয়েছিল আড্ডার ছড়াছড়ি। পাশাপাশি সমাবর্তনের ক্যাপ আকাশে ছুড়ে দিয়ে বাঁধভাঙা উল্লাাস-উচ্ছ্বাসের প্রকাশে মেতে উঠতে দেখা গেছে প্রাক্তন এসব শিক্ষার্থীকে। ক্যা¤পাস জীবনের প্রাণের সতীর্থদের স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তোলার মহড়া চলে; ক্যা¤পাসের আনাচে-কানাচে থেকে ভেসে আসে ক্যামেরার ’ক্লিক ক্লিক’ শব্দ। সমাবর্তন একটি শিক্ষার্থীর জীবনে শেষ মুহূর্তের সুখ-দুঃখের অনুভূুতি। সমাবর্তন যেমন একটি শিক্ষার্থীর পূর্ণতা দেয়, তেমনি বিদায়ের ঘণ্টা বাজায়। ‘এই তো সেদিন এসেছিলাম নতুন আঙ্গিনায়, দেখতে দেখতে কেটে গেল অনেক বছর। আজ বিদায়ের অনুষ্ঠান, আমার প্রিয় এই বিদ্যাপীঠ থেকে নিতে হবে বিদায়।‘ একটু আবেগাপ্লুত হয়েই কথাগুলো বলছিলেন স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত চারুকলার ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী দিদারুল লিমন। তিনি আরও বলেন, ‘বাবা-মা ও শিক্ষকদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ, আমার এ ভাল ফলাফল পরবর্তী জীবনে দেশমাতৃকার উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই।‘ উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্যে একনেকের বৈঠকে একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। ২০০৫ সালের ১ মার্চ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০৭ এর ২৫ মার্চ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনে দুটি অনুষদের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। ৩ জুন ২০০৭ এ প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়। প্রথম ব্যাচে কলা অনুষদের অধীনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, সংগীত বিভাগ এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের অধীনে ক¤িপউটার বিজ্ঞানও প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়।
×