ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ

ভ্যাট ১৫ ভাগের বদলে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব ডিসিসিআইর

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

ভ্যাট ১৫ ভাগের বদলে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব ডিসিসিআইর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নতুন আইনে ভ্যাট ১৫ ভাগের পরিবর্তে ৭ শতাংশ আরোপ করার প্রস্তাব করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। এছাড়া আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলেছে বেসরকারী খাতের এই সংগঠনটি। পাশাপাশি বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রেল ও নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে যানজট কর, কার পুলিং, কার ফ্রি দিবস এবং উচ্চহারে পার্কি চার্জ আরোপ করার সুপারিশ করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম অর্থনৈতিক করিডর উন্নয়ন, জ্বালানি ও বিদ্যুত খাতের সমৃদ্ধিকরণ এবং গবেষণা বাড়ানোর কথা বলেছে ডিসিসিআই। শনিবার ডিসিসিআই ভবনের অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাজেট সামনে রেখে এসব প্রস্তাব করেন সংগঠনটির সভাপতি আবুল কাসেম খান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে সরকার খুচরা পর্যায়ে ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের ক্ষুদ্র ও স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি আর্থির ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিও চাপের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, এর মূল কারণ দেশের ৮০ শতাংশ শিল্পকারখানা এসএমই খাত ভিত্তিক। আর এসব খাতে ৭৫ ভাগ কর্মসংস্থান হচ্ছে। তিনি বলেন, টার্নওভার ট্যাক্স লিমিট বর্তমান ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে বৃদ্ধি করে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার শূন্য থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ‘নো ভ্যাট’ এবং ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি ২০ লাখ পর্যন্ত ৩ শতাংশ হারে মূসক প্রদান করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম থেকে অর্থাৎ আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ব্যবসায়ীদের অনুরোধের পরও এখন পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্তে অনড় তিনি। কিন্তু ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হলে দেশের বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম এবং মূল্যস্ফীতিও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবুল কাসেম খান বলেন, ভ্যাটের আওতামুক্ত ব্যবসায়ীদের জন্য একটি পৃথক ডাটা বেইজ (ইবিআইএন) গঠন করা যেতে পারে। যাতে প্রকৃত তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবসার ধরন চিহ্নিত করা যায়। এসএমইবান্ধব কর নীতি প্রণয়ন, বিশেষায়িত ও আইসিটি নির্ভর ভ্যাট সাপোর্ট সেন্টার দেশের সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করা উচিত। আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে ডিসিসিআই-এর সেক্টর ভিত্তিক কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। প্রস্তাবনাগুলো মধ্যে রয়েছে- শিল্প ও জিডিপির হার ২৯ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো, শিল্প কর্মসংস্থানের হার ১৮ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি এবং শিল্পনীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জ্বালানি, বিদ্যুত ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন করা। আয়কর, আইন ও বিধি সংক্রান্ত প্রস্তাব পারকুইজটি সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত করা। নন-ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে লেনদেনে ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ টাকা করা। নগদ যানবাহন ভাতা ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত সুবিধা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। ব্যক্তি শ্রেণীর কর হারের সীমা প্রস্তাব প্রথম সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে শূন্য শতাংশ, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১০ শতাংশ, ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১৫ শতাংশ এবং ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ২০ শতাংশ এবং এর বেশি আয়ে ২৫ শতাংশ কর ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। নারী ও বয়স্ক (৬৫ বছর) করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। বাজেট প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, প্রত্যেক ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন হোল্ডারদের সরকারী খরচে ইসিআর মেশিন স্থাপনসহ ভ্যাট স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করতে হবে। এছাড়া নীট সম্পদের মূল্য সারর্চাজের হার ৫ কোটি টাকা র্পযন্ত শূন্য শতাংশ, ৫-১৫ কোটি টাকা মধ্যে ১০ শতাংশ, ১৫-২৫ কোটি টাকার মধ্যে ১৫ শতাংশ, ২৫-৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ২০ শতাংশ এবং ৩৫ কোটি টাকার বেশি হলে ২৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করেছে ব্যবসায়ী সংগঠনটি। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ মোট জিডিপি-বিনিয়োগের অনুপাত ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে ডিসিসিআই। আগামী অর্থবছরে বাজেট এডিপিতে বরাদ্দ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন আবুল কাসেম খান। এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সকল স্মার্ট ফোন, ট্যাব, সকল মোবাইল ফোন ক্রয় করমুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
×