ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২১ এপ্রিল ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ এখনও টাটকা ১৪২৪ বঙ্গাব্দ। বাংলা নববর্ষের কয়েকদিন গত হলেও, উৎসবের আমেজটা রয়ে গেছে। তার চেয়ে বড় কথাÑ এবার পহেলা বৈশাখ ছিল প্রতিবাদ প্রতিরোধের। ধর্মীয় মৌলবাদীদের আস্ফালন, পানের পিক ফেলতে ফেলতে দেয়া ফতোয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালী। ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ উৎসবে যোগ দিলে জাত চলে যাবে। ধর্ম থাকবে না। মঙ্গল শোভাযাত্রা মানে হিন্দু দেব-দেবীর পূজা। প্রার্থনা। এমন আরও কত শত মূর্খের প্রলাপ! পিছিয়ে থাকা কুয়োর ব্যাঙদের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ নিয়মিত কানে আসছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নিরাপত্তার নামে কম বাধার সৃষ্টি করেনি। এত কিছুর পরও পহেলা বৈশাখে ঢাকার রাস্তায় জনস্রোত নেমেছিল। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি ফুটপাথ উদ্যান পার্ক সবখানেই ছিল মানুষ আর মানুষ। মতিঝিলের শাপলা চত্বর দখলে নিয়ে তারা কেউ তা-ব নৃত্য করেনি। আগুন দিয়ে সব পুড়িয়ে দেয়নি। বাঙালী চেতনার উৎসবে মেতেছিল সবাই। তাতেই ধর্মের দোকানদাররা চুপ। তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। সরকারী আপ্যায়নের বিপরীতে এমন চপেটাঘাত সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মনে রাখবে বলেই আশা করছেন ঢাকাবাসী। শহর ঢাকার আরেক আলোচনা গণপরিবহন। এ খাতে নৈরাজ্য ছিল। আছে। তাই বলে বাস মালিকেরা দেশের মালিক বনে যাবেন? ঘটনা যেন তা-ই। আরও একবার পরিবহন মালিকদের কাছে নতি স্বীকার করল সরকার। সিটিং সার্ভিস নামে যে প্রতারণা চলছে তা বন্ধের একটা চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সফল হয়নি সরকার। পিছু হটেছে। সিটিং সার্ভিসের বাসে আবারও যাত্রীরা দাঁড়িয়ে যাতায়াত করছেন। অথচ গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। মাঝখানের কয়েকটা দিন ছিল চরম দুর্ভোগের। পরিহবন শ্রমিকরা মাস্তানির সর্বোচ্চটা দেখিয়েছে। তাদের অন্যায় আচরণ গু-ামি আড়াল থেকে উপভোগ করেছেন মালিক কর্তৃপক্ষ। ভিন্ন প্রসঙ্গ। ভারতের খ্যাতিমান অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ্ এখন ঢাকায়। একা আসেননি। সঙ্গে এসেছে তার নাটকের দল মোটলির সদস্যরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এসে পৌঁছেন সবাই। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় দলটি পরিবেশন করবে নাটক ‘ইসমত আপা কে নাম’। ইসমত চুঘতাইয়ের রচনা। মঞ্চরূপ দিয়েছেন নাসিরুদ্দিন শাহ্। অভিনয়ও করছেন তিনি। একই নাটকে অভিনয় করবেন স্ত্রী অভিনেত্রী রতœা পাঠক ও হিবা শাহ্ প্রমুখ। ‘চুই মুই’, ‘ঘরওয়ালি’ ও ‘মুঘল বাচ্চা’ এই তিন গল্পে নারীর সংগ্রামকে তুলে ধরার প্রয়াস। হাস্যরস যেমন থাকবে তেমনি উচ্চারিত হবে নারীর অধিকারের কথা। নাসিরুদ্দিন শাহ্ ও তার অভিনয় সরাসরি দেখার বিরাট সুযোগ কাজে লাগাবেন দর্শক। টিকেটও ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে ‘ট্র্যাভেল এ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার।’ তিনদিনব্যাপী মেলার আয়োজন করেছে ট্যুর অপারেটরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ টোয়াব। মেলায় রয়েছে ১০টি প্যাভিলিয়ন। ১৮টি মিনি প্যাভিলিয়ন। স্টল রয়েছে ১৪০টি। অংশ নিয়েছেন ১৩ দেশের ৫০ জন এক্সিবিউটর। মেলায় বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর, ট্র্যাভেল এজেন্ট, বিমান সংস্থা, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক হোটেল, রিসোর্ট, ব্যাংকের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট পর্যটন প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। বিদেশী অংশগ্রহণের মধ্যে রয়েছে নেপালের জাতীয় পর্যটন সংস্থা নেপাল ট্যুরিজম বোর্ড, নেপাল এ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর এ্যান্ড ট্র্যাভেল এজেন্টস (নাটা), ট্যুরিজম অথরিটি অব থাইল্যান্ড, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার পর্যটন মন্ত্রণালয়। এছাড়াও ভুটান, নেপাল, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, দুবাই, ফিলিপাইন্স, আসাম, তুরস্ক, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, কাশ্মীর ও ত্রিপুরার শীর্ষস্থানীয় ট্যুর অপারেটর ও ট্র্যাভেল এজেন্টরাও এ মেলায় অংশ নিচ্ছে। মেলার দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দেশীয় ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মেলার প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×