ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি,এবার ফাঁসছেন ইইডির প্রধান প্রকৌশলী

প্রকাশিত: ২০:৩১, ২০ এপ্রিল ২০১৭

মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি,এবার ফাঁসছেন ইইডির প্রধান প্রকৌশলী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণপূর্ত, এলজিইডির পর এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ হানজালা ফেঁসে যাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির অভিযোগে। মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে শিক্ষা প্রশাসনে। ভুয়া মুুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে চাকরির এমনকি চাকরি মেয়াদ বৃদ্ধিসহ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের গুরুতর অভিযোগে আদালতে মামলা করা হয়েছে। ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) অভিযোগ জমা পড়েছে। পাঠানো হয়েছে লিগ্যাল নোটিস। প্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ হানজালা মঙ্গলবার বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে আদালতে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় যদি আমি জয়ী হই ভাল, যদি জয়ী না হই তবে যে রায়ই হোক আমি মেনে নেব। তার দাবি একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। জানা গেছে, দেওয়ান মোঃ হানজালা ১৯৮১ সালের ১২ ডিসেম্বর সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। সরকারী বিধান অনুযায়ী চাকরির মেয়াদ ৫৯ বছর পূর্ণ হলে অবসর না নিয়ে পিআরএলএ যাওয়ার কথা। ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট তার চাকরির মেয়াদ ৫৯ বছর পূর্ণ হয়। কিন্তু তিনি অবসরে না গিয়ে চাকরিতে প্রবেশের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা না দিয়ে ঊর্ধতন একটি মহলকে ম্যানেজ করে সাময়িক সনদপত্র দিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর পদে বর্ধিত সময়ের জন্য বহাল তবিয়তে আছেন। এছাড়া তার অধস্তন পদ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদে দীর্ঘদিন ধরে কোন পদায়ন করা হচ্ছে না। তিনি নিজেই এ পদটিও আকড়ে আছেন। এছাড়া কোন সহকারী প্রকৌশলীর পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। প্রধান প্রকৌশলী পদে চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি এবং পরবর্তীকালে দুই বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ চার দফতরের প্রধানকে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়েছে। মোঃ খালিদ হোসেনের পক্ষে ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম এ নোটিস পাঠান। এতে বলা হয়, প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। ১৯৫৬ সালে তার জন্ম। ১৯৮১ সালের ১২ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগদানকালে তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা দেননি। এছাড়া মুক্তিবার্তায় (লালবই) তার নাম নেই। ২০১৫ সালে তার স্বাভাবিকভাবে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা। কিন্তু ভুয়া দলিল দাখিল করে তিনি ২০১৬ সাল পর্যন্ত অতিরিক্ত এক বছর চাকরি করেন। পরে আরও দুই বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নেন। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও হানজালা সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে জামুকা নির্বিকার ছিল। এটি রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা ও সরকারের আর্থিক ক্ষতি। সঙ্গত কারণে কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না সেটি জানাতেও ওই নোটিসে বলা হয়েছে। সরকারী বিধি মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরিতে যোগদানের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। অন্যথায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা হলেও চাকরির বর্ধিত সময়-সুযোগ ভোগ করতে পারবেন না। চাকরিতে প্রবেশের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা না দেয়ায় ইতোমধ্যে সরকারী অনেক দফতর থেকে বর্ধিত সময় চাকরি করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। গেল বছর ৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব গোলাম রহমান মিঞা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়। যেখানে চাকরিতে যোগদানের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা না দিয়ে যারা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা অতি দ্রুত বাতিল করার নির্দেশ দেয়া হয়। শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, প্রধান প্রকৌশলীর মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্রটি ‘সাময়িক সনদপত্র’। সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক সাময়িক সনদপত্র বা মুচলেকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ অনুশাসন জারি করা হয়। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রতি স্বাক্ষরিত সনদ হতে হবে। হানজালার মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্রে প্রধানমন্ত্রীর কোন প্রতিস্বাক্ষর নেই। লাল মুক্তিবার্তাতে হানজালার নাম নিবন্ধিত নেই। তারপরও তিনি কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে আদালতে।
×