ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের

হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন এ্যালায়েন্স হতে পারে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৪ এপ্রিল ২০১৭

হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন এ্যালায়েন্স হতে পারে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কোন ধর্মীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠী কিংবা কোন সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপোসের অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ উল্লেখ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপোস করবে বা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করবে, যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে তারাই এমন হাস্যকর অভিযোগ করতে পারে। আর বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে কোথায় বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ, মর্যাদা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব খর্ব হয়েছে তা খালেদা জিয়াকে জাতির সামনে প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় করজোড়ে জাতির কাছে তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের জবাবে দিতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের আদর্শের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামী আদর্শের কোন মিল নেই। তাই তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন এ্যালায়েন্স (জোট) হয়নি, হতে পারে না। সুপ্রীমকোর্ট থেকে ভাস্কর্য অপসারণের উদ্যোগ এবং কওমী মাদ্রাসার উচ্চশিক্ষার সনদের স্বীকৃতি দেয়া মানে হেফাজতের সঙ্গে আপোস নয়। সরকার বাস্তবতা বিবেচনা করে কওমী মাদ্রাসার সনদে স্বীকৃতি দিয়েছে, হেফাজতকে নয়। জনগণের আবেগ এবং একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর শিক্ষার স্বীকৃতি দিতেই প্রধানমন্ত্রী বাস্তবসম্মত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই কোন সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপোসের কথা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিক ও সামাজিক যে বাস্তবতা, আমরা যারা রাজনীতি করি; আমাদের রিয়েলস্ট্রিক এ্যাপ্রোচ (বাস্তবমুখী পদক্ষেপ) নিয়ে জনগণের আবেগে-অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত যারা নিতে পারে, তারাই এদেশের সত্যিকারের প্রগতিশীল রাজনীতি করে। প্রগতির সামাজিক বাস্তবতা রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে চলতে পারে না। তিনি বলেন, হেফজাতের কোন ব্যক্তি কি কথা বললো, হেফাজতের আদর্শের সঙ্গে বা তাদের সঙ্গে কোন প্রকার আদর্শিক সামঞ্জস্যের কোন বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। আমরা কওমী মাদ্রাসার ১৪ লাখ ছাত্রছাত্রী এবং ৭০ হাজার কওমী মাদ্রাসা বাংলাদেশে আছে, এটা হলো একটা বাস্তবতা। এদের আমরা অবজ্ঞা করতে পারি না। তাদের আমরা সরকারী স্বীকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারি না। আমরা বাংলাদেশের স্বার্থে, বাংলাদেশের জনগণের যে আবেগ অনুভূতি; একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর তাদের ভবিষ্যতকে সরকার হিসেবে আমরা অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিতে পারি না। তাদের শিক্ষার একটা স্বীকৃতি আমাদের দেয়া উচিত। এটা বাস্তবভিত্তিক ন্যায়ানুগ একটা সিদ্ধান্ত। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, এই যে বেগম জিয়া, তারা তো ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে। এদেশে ধর্ম নিয়ে তারা কত অধর্মের কাজ করেছে। আজকে উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি, এই শক্তির উসকানিদাতা কারা? এ দেশে এদের পৃষ্ঠপোষক কারা? এটা সবাই জানে। সারা দুনিয়া জানে। নতুন করে বলার কিছু নেই। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙালীর ঐতিহ্যের অংশ। এটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর অত্যন্ত কার্যকরী, ফলপ্রসূ ও সমগ্র জাতির জন্য মর্যাদাপূর্ণ ছিল দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই সফর সম্পর্কে গতানুগতিক মিথ্যাচার ও অন্তঃসারশূন্য এক বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। আমরা আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টির অপপ্রয়াসে বিএনপির এ ধরনের অসত্য, বানোয়াট ও দূরভিসন্ধিমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং বিএনপি নেত্রীকে কোন কিছু না জেনে, না বুঝে ‘অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে মারার’ অপরাজনীতি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে কতিপয় অর্বাচীন ব্যক্তি ও দল সময়ে সময়ে এক ধরনের ‘ভারতীয় জুজু’-কে পুঁজি করে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির অপচেষ্টা চালায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার এই নোংরা খেলা নতুন নয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ভারতবিরোধিতার রাজনীতি’র কৌশল বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সচেতন দেশপ্রেমিক জনগণ বিএনপির ভারতবিরোধিতার বহুল প্রচারিত এই ভাঙ্গা রেকর্ড বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য ছিল মিথ্যচার, অজ্ঞতা ও বিকৃত তথ্যে ভরপুর। এ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেত্রীর বক্তব্যের কোন সারমর্ম ছিল না। তিনি কিছু চটকদার, বায়বীয় ও বানোয়াট তথ্য সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেছেন। যা একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রত্যাশিত ছিল না। খালেদা জিয়ার মন্তব্য ছিল উদ্ভট, হাস্যকর ও স্ববিরোধী দাবি করে তিনি আরও বলেন, উনি একদিকে বলছেন এই চুক্তি গোপনচুক্তি, আবার বলছেন- এই চুক্তির মাধ্যমে দেশ বিক্রি করে দেয়া হয়েছে! আমার প্রশ্ন, গোপনই যদি হয়ে থাকে তবে উনি দেশ কেনা-বেচার বিষয়টি জানলেন কীভাবে? আসলে বিএনপি নেত্রী মনগড়া ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য শুধু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতই নয়, উসকানিমূলকও। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, এই চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে তাঁর কথা অনুযায়ী বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ, মর্যাদা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কোথায়, কীভাবে খর্ব হলো তা জাতির সামনে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় করজোড়ে জাতির কাছে তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাপরিষদ সদস্য মুকুল বোস, সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, একেএম এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিয়য়ক সম্পাদক ইঞ্জি. আব্দুস সবুর, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
×