ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

এম শাহজাহান ॥ আঞ্চলিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভুটানও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাই সার্কভুক্ত এই দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভুটান থেকে জলবিদ্যুত আমদানি করা হবে। তাই বিদ্যুত উৎপাদনে ভুটানকে সহযোগিতা এবং সেই বিদ্যুত বাংলাদেশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অটিজম সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার ভুটান সফরে যাচ্ছেন। তার দুদিনের ওই সফরে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, ভুটান ও নেপাল থেকে বিদ্যুত আমদানি করতে হলে ভারতের ভূখ- ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের সম্মতির প্রয়োজন। চার দেশীয় ট্রানজিট চুক্তির (বিবিআইএন) আওতায় শীঘ্রই এ সংক্রান্ত জটিলতা দূর করা হবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এসব চুক্তির আলোকেই আগামীতে ভুটান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুত আসার সুযোগ তৈরি হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্যে ভুটান বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠছে। বিশেষ করে জলবিদ্যুত উৎপাদন এবং বিনিয়োগের সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশ। এছাড়া বাণিজ্য বৈষম্য ভুটানের অনুকূলে রয়েছে। অথচ বাংলাদেশের অনেক পণ্য ভুটানে রফতানির সুযোগ রয়েছে। সার্ক চেম্বারের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ বলেন, বিবিআইএন বা চারদেশীয় ট্রানজিট চুক্তি কার্যকর করতে হলে ভুটানের সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভুটানের সঙ্গে সব সময় বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। দেশটি জলবিদ্যুত উৎপাদন ও রফতানির সক্ষমতা অর্জন করেছে। আবার বাংলাদেশের পোশাক ভুটানে রফতানি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে হলে ভারত, ভুটান নেপালকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। শুধু তাই নয়, ভুটানের জলবিদ্যুত প্রকল্পে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে ভুটানের এক হাজার ১২৫ মেগাওয়াটের কুরি-১ জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগ করার বিষয়ে কথা চলছে। এ কারণে যৌথ ইশতেহার ও উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য কাঠামোগত চুক্তির আওতায় উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রদানের বিপরীতে মাসুল ধার্যের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের মধ্যে সম্পাদিত সহযোগিতা চুক্তি ও যৌথ ইশতেহারের অগ্রগতি কতটুকু সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর থেকে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা আছে। দ্বৈতকর পরিহার চুক্তি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তি, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং সংস্থার সঙ্গে ভুটানের স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং সংস্থার একটি সমঝোতা স্মারক, কৃষি সহযোগিতার জন্য সমঝোতা স্মারক এবং বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহার করে ভুটানের পণ্য যাতায়াতের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সফর করবেন এবং রাজধানী থিম্পুতে একটি অটিজম কনফারেন্সে বক্তৃতা দেবেন। আগামী ২০ এপ্রিল ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সফরের সময় একটি চুক্তি ও একটি প্রটোকল স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ছিল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির সংশোধন ও নবায়ন করে একটি প্রটোকল এবং ঢাকায় ভুটানের স্থায়ী দূতাবাস স্থাপনের জন্য একটি চুক্তি। এছাড়া ওইসময় শেখ হাসিনা ও শেরিং তোবগের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, জলবিদ্যুত, ট্রানজিট ও বিনিয়োগ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ভুটানের জলবিদ্যুত প্রকল্পে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও সেখান থেকে বিদ্যুত আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা জানানো হয়। ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় আড়াই কোটি ডলার। কিন্তু গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ভুটানে ১৯ লাখ ১০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। একই সময়ে ভুটান থেকে দুই কোটি ২৫ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এ হিসাবে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি।
×