মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় রাজশাহীর নগর সড়কগুলোর এখন বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। শুধু সড়ক নয় ফুটপাথেরও করুন অবস্থা। সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। কোথাও পুরো গাঁথুনিই উঠে গেছে। কোথাও আবার উঠে গেছে পিচ। ফুটপাথের সøাব উঠে মরণপাদে পরিণত হয়েছে নগরজুড়েই। সামান্য বৃষ্টিতেই জমছে পানি। সবখানে এবড়ো-থেবড়ো অবস্থা।
এসব গর্তগুলোতে সতর্কতা হিসেবে বাঁশ দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে লাল কাপড়ের নিশানা। এ কাজটিও করেছেন স্থানীয়রা। এক সময়ের ঝকঝকে শহরের রাস্তা-ঘাট ক্রমেই হয়ে উঠেছে ভাঙ্গাচোরা। ফলে বেড়েছে নাগরিক বিড়ম্বনা।
রাজশাহী নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম তালাইমারী-কাশিয়াডাঙ্গা সড়কের অবস্থা এখন এ রকমই। একই দশা ভদ্রা মোড় হয়ে পদ্মা আবাসিক এলাকার রেলওয়ে কোয়ার্টারের পেছন দিয়ে নওদাপাড়া পর্যন্ত সড়কের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে নাটোরমুখী সব যানবাহনই এই পথে যাতায়াত করে। সড়কটি খানাখন্দকে ভরে যাওয়ায় অহরহই ঘটছে দুর্ঘটনা। ভোগান্তি চরমে উঠেছে যাতায়াতকারীদেরও। দীর্ঘদিন ধরে এই বেহালদশা থাকলেও সিটি কর্পোরেশনের কোন মাথা ব্যথা নেই। এ কারণে ক্ষোভ বাড়ছে নাগরিকদের। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘নগরীর প্রবেশদ্বার তালাইমারী হয়ে শিরোইল বাস টার্মিনাল ও সাহেববাজার দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। শহরের বাইরে থেকে অনেক রোগীবাহী গাড়ি আসে। সবারই দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। মনে হয়, হাতের মুঠোই প্রাণটা নিয়ে চলাচল নিত্যদিনের। কিন্তু বার বার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও সিটি কর্পোরেশন উদ্যোগ নিচ্ছে না। দ্রুত সড়কগুলো সংস্কারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হলে নগর ভবন ঘেরাও করেই জনগণের দাবি পূরণ করা হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
জানা গেছে, নগরীর রেলওয়ে কোয়ার্টারের পেছনের সড়ক দিয়ে ভদ্রা আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে নওদাপাড়া টার্মিনালে যাতায়াত করে বাস। এ বাসগুলো আন্তঃজেলা রুটে চলাচল করে। কিন্তু এই সড়ক খানা-খন্দকে ভরে গেছে। আবার ভদ্রা মোড়ের স্মৃতি অম্লান থেকে তালাইমারি মোড় পর্যন্ত সড়কেরও একই অবস্থা। সম্প্রতি নগরীর ভদ্রা এলাকায় একটি আলু ভর্তি ট্রাক ভাঙ্গা সড়কে পড়ে বিকল হয়ে যায়। কয়েকদিন আগে পদ্মা আবাসিক এলাকার রেলওয়ে কোয়ার্টারের পেছনের সড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস গর্তে পড়ে। সেটি বিকল হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে রেকার নিয়ে এসে বাসটি সরানো হয়। রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের বাসচালক আলী ইমাম জানান, শহরের মধ্যে তালাইমারি, ভদ্রা, নওদাপাড়া এলাকার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। অধিকাংশ স্থানে বড় ও ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। চালক একটু অসতর্ক হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া একটি যানবাহন আরেকটিকে ওভারটেকিং বা বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনকে স্পেস দিতে গিয়ে বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর তালাইমারি এলাকার রাস্তার মধ্যে এবং দুই পারের অংশ ভেঙ্গে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। আর বেশিরভাগ স্থানে পিচ উঠে গেছে। এদিক-ওদিক ছড়িয়ে আর ছিটিয়ে পড়ে আছে সড়কের পাথর ও ইট।
এদিকে ভদ্রা স্মৃতি অম্লান চত্বরের রাস্তারও বেহালদশা। সড়কে ওপরের অনেক জায়গাতেই উঠে গেছে পিচ। ফলে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় সিটি কর্পোরেশন কয়েকদিন আগে ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করে। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতে আবার একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাশেই রেশম বোর্ড এলাকার সামনে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
নগরবাসী জানান, নগরীতে চলাচলের জন্য অধিকাংশ সময় অটোরিক্সায় উঠতে হয়। কিন্তু সড়কের বেহাল দশার কারণে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। রেশম বোর্ডের কর্মচারী লুৎফর রহমান বলেন, ‘শিরোইল টার্মিনাল থেকে অফিসে যাতায়াত করেন তিনি। এজন্য রিক্সা এবং অটোরিক্সায় উঠতে হয়। কয়েকদিন আগে ভাঙ্গা রাস্তায় রিক্সা উল্টে আহত হয়েছেন তিনি। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন চারদিন। এরপর থেকে হেঁটে অফিসে যাতায়াত করছেন বলে জানান এ কর্মচারী। এদিকে, সোনামসজিদ থেকে প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক নগরীর তালাইমারী হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। কিন্তু সড়কে খানাখন্দকের কারণে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এতে সময় বেশি লাগছে। যানবাহনেরও ক্ষতি হচ্ছে। অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তাদের চলাচল করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে রাজশাহী জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাদরুল ইসলাম বলেন, এর আগে কখনই নগরীর সড়কগুলোর এমন বেহাল অবস্থা আমরা দেখিনি। মনে হচ্ছে শহরের কোন মা-বাপ নেই। বছরের পর বছর ধরে ভাঙ্গাচোরা রাস্তা পড়ে আছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক-বাসসহ অটোরিক্সা চলাচল করছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের কোন ভ্রƒক্ষেপই নেই’। তিনি অবিলম্বে সড়কগুলো সংস্কারের জোর দাবি জানান।
এ ব্যাপারে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, তালাইমারি এলাকার রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে সব কার্যক্রম প্রায় হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হয়ত কাজ শুরু হয়ে যাবে। এছাড়া নগরীর অন্য সড়কগুলো সংস্কারের ব্যাপারেও অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: