ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থবছরের নয় মাসে প্রবৃদ্ধি ৩.৯৭ শতাংশ

৯ মাসে রফতানি আয় ২৫৯৪ কোটি ডলার

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৬ এপ্রিল ২০১৭

৯ মাসে রফতানি আয় ২৫৯৪ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মেয়াদে অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রফতানি খাতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৫৯৪ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। যা গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের রফতানি আয়ের তুলনায় ৯৯ কোটি টাকা বেশি। এ সময়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। বছরের ব্যবধানে রফতানি আয় বাড়লেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এদিকে একক মাস হিসেবে মার্চে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩১০কোটি ৯৭ লাখ মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। বুধবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে মোট ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে প্রথম ৯ মাসে ২ হাজার ৭১১ কোটি ১১ লাখ ডলার রফতানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৫৯৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ কম। ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ সময়ে রফতানি আয় হয়েছে ৩১০কোটি ৯৭ লাখ মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে তৈরি পোশাক খাতের পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৯২ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার। এ খাতের রফতানি আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাড়লেও অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মেয়াদে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রফতানিতে ১ হাজার ১৪ কোটি ৩৫ লাখ ডলার এবং ওভেন গার্মেন্টস পণ্য রফতানিতে ১ হাজার ৭৮ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, অর্থবছরের প্রথম জুলাই মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় অর্জিত হয় ২১১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। পরের মাস আগস্টে এ খাত থেকে রফতানি আয় আসে ২৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে ঈদ-উল-আজহার কারণে বেশ কিছুদিন ছুটি থাকায় রফতানি আয়ে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তৈরি পোশাক রফতানি থেকে গত অক্টোবরে ২৫০ কোটি ১৩ লাখ, নবেম্বর মাসে কিছুটা কমে ২৩১ কোটি ৯৯ লাখ ও ডিসেম্বর মাসে ২৫৭ কোটি ৮৪ লাখ ডলার অর্জিত হয়। নতুন বছরের প্রথম মাসে জানুয়ারি মাসে পোশাক রফতানি থেকে আয় এসেছে ২৭০ কোটি ৩৫ লাখ, ফেব্রুয়ারি মাসে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। সবশেষ মার্চে রফতানি আয় এসেছে ২২৯ কোটি ডলার। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে পোশাক শিল্পকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোর দরপতন, ব্রেক্সিট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রভাবের কারণে আমাদের পণ্যের দরপতন হলেও ২ বছরে গ্যাস সঙ্কটসহ নানাবিধ কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ। অন্যদিকে আমাদের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার যুক্তরাজ্যে ওই সময়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫.১৯ শতাংশ। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সারা বিশ্বেই বর্তমানে অর্থনীতিতে একটি শ্লথগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চীনে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে। অন্য দেশেও প্রবৃদ্ধি বেশি ইতিবাচক ধারায় নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের সরে আসার সিদ্ধান্ত (ব্রেক্সিট), পাউন্ড ও ইউরোর দরপতন সব মিলিয়ে বৈশ্বিক হিসেবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ভাল। রফতানি প্রবৃদ্ধি এখনও ভাল অবস্থানে। তবে ‘নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেটে’ আমাদের রফতানি বাড়াতে হবে। ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্য পণ্যের মধ্যে গত ৯ মাসে হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এই সময়ে আয় এসেছে ৫৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ সময়ে সার্বিক রফতানি আয় বাড়লেও তা মূলত পোশাক খাতনির্ভর। সরকার পাট ও পাটজাত পণ্যের প্রতি বিশেষ নজরদারির কারণে এ খাতে গত ৯ মাসে ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এ সময়ে আয় এসেছে লক্ষ্যমাত্রার ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ বা ৭৩ কোটি ডলার। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। আয় হয়েছে ৯২ কোটি ২৯ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া গত ৯ মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৩৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এই সময়ে আয় এসেছে ৯ কোটি ১৪ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া গত ৯ মাসে কৃষি পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এই সময়ে আয় এসেছে ৪০ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
×