ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপিতে জয় ॥ মোদি আরও শক্তিধর

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৫ এপ্রিল ২০১৭

ইউপিতে জয় ॥ মোদি আরও শক্তিধর

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্য বিধান সভার নির্বাচনে বিজেপির নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার ওপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কব্জা আরও সুদৃঢ় হয়েছে। মাসব্যাপী নির্বাচনে বিজেপি এই বিশাল রাজ্যে এ যাবতকালের বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। আর ১৯৮০-এর দশক থেকে এটা ছিল যে কোন দলের জন্য বৃহত্তম বিজয়। ৪০৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৩১২টি আসনে জয়ী হয়। এত বিশাল বিজয় কেউ ধারণাও করতে পারেনি। উত্তর প্রদেশ ভারতের এক বিশাল রাজ্য। মোটামুটিভাবে ব্রিটেনের সমান। সেখানে প্রায় ২২ কোটি লোকের বাস। অর্থাৎ জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির জনসংখ্যা এক করলে যা দাঁড়ায় তার চেয়েও বেশি। নরেন্দ্র মোদিসহ ভারতের ১৫ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ৯ জন উত্তর প্রদেশ হয়ে নয়াদিল্লীর ক্ষমতার মসনদে এসেছেন। লোকসভায় ইউপির আসন সংখ্যা ৮০। অর্থাৎ অন্য যে কোন রাজ্যের তুলনায় বেশি। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের এই দেশটিতে ইউপি রাজনৈতিক ইঞ্জিন রুম হিসেবে পরিচিত। কাজেই এমন একটি রাজ্য গত মাসে যখন রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন শুরু হয় গোটা ভারত নড়েচড়ে বসে। সবার দৃষ্টি সেদিকে চলে যায়। এমনকি বহির্বিশ্বেরও। সবার মনে প্রশ্ন জাগে, ২০১৪ সালে মোদি ম্যাজিকে বিজেপি ৩০ বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনে বৃহত্তম বিজয় অর্জন করেছিল। এবারও কি মোদি ম্যাজিক আগের মতো ভোটার টানতে পারবে? গত তিন বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী সর্বক্ষণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সেøাগান তুলে গেছেন। অথচ বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান তেমন হয়নি। এ অবস্থায় দেশবাসী তার সেøাগান শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়েনি তো? এই প্রশ্ন উঠেছে। অর্থনীতিবিদরাও নীতিনির্ধারক হিসেবে মোদির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে বড় অঙ্কের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রশ্নটাকে আরও তীর্যক করেছে। জনমনেও সৃষ্টি হয়েছিল অসন্তোষ। সরকার নোট বাতিলের পক্ষে যে যুক্তি দেখিয়েছিল সেটা যেমন ছিল গোলমেলে তেমনি গোলমেলে ছিল এর বাস্তবায়ন। বদলি নোটের ঘাটতি ছিল। ফলে ব্যাংকগুলোতেও এটিএমএ দীর্ঘ লাইন পড়ে গিয়ে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলে। বড় নোট বাতিলের লক্ষ্য ছিল কালো টাকা উদ্ধার। কিন্তু সে উদ্দেশ্য অর্জিত হয়নি। মাঝখানে মোদির এই পদক্ষেপের কারণে এ বছর ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৬ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ১ শতাংশ কমবে এবং ভারত চীনের পেছনে এসে দাঁড়াবে।কিন্তু এত কিছুর পরও বিজেপি উত্তর প্রদেশের নির্বাচনকে মোদির নেতৃত্বের উপর গণভোট হিসেবে বেছে নিয়েছিল। অনেকের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও তারা মোদিকেই এই নির্বাচনের কেন্দ্রীয় চরিত্রে পরিণত করেছিল। কারণ মোদিই ছিলেন তাদের নির্বাচনী প্রচারের সবচেয়ে কার্যকর প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির কার্যকলাপ, তার সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। কিন্তু সাধারণ ভোটারদের কাছে মনে হয়েছে মোদির সমালোচনা করা সহজ। কিন্তু তিন বছরের সময়কালের মধ্যে তিনি আর কতই বা করতে পারেন। অন্তত তিনি দেশকে তো কিছু দেয়ার চেষ্টা করছেন। ভোটারদের কাছে এই ছিল মোদি ইমেজ। এই মানুষটিই কিছু দেবেন এমন বিশাল প্রত্যাশাই ছিল তাদের। তাই তারা বিপুল সংখ্যায় বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। এটা ছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনের বিপুল বিজয়ের পুনরাবৃত্তি। সে সময় দুর্নীতি আর কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত কংগ্রেসী জোট শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল মানুষ। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণী একটা পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে উঠেছিল। তারা মোদিকেই সেই পরিবর্তনের বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছিল। তিন বছর পার হয়ে গেছে। মোদির প্রতিশ্রুত সংস্কারের ব্যাপারে ভারতীয়দের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ আছে। তাঁর বড় নোট বাতিলের পদক্ষেপে অনেক নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু তারপরও বিজেপি মোদিকে ধনিক এলিটশ্রেণীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো একজন লোকরঞ্জনবাদী নৈতিক যোদ্ধা হিসেবে হাজির করেছে। আয়ের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান অসাম্যের একটি দেশ যেখানে শীর্ষ মহলের দুর্নীতির এক কলঙ্কিত ইতিহাস আছে সেখানে মোদিকে বিস্মৃতি হয়ে যাওয়া গরিবদের ত্রাণকর্তা হিসেবে দেখানো হয়েছে। এতে কাজ দিয়েছে। বড় নোট বাতিলে মানুষের দুর্ভোগ হলেও তারা এটাকে কালো টাকার মালিক ধনীদের বিরুদ্ধে অভিযান হিসেবে দেখেছে। এর ফল হয়েছে নির্বাচনে বিজেপির বিজয়। এই নির্বাচন কংগ্রেসের জন্য আঘাত হিসেবে এসেছে। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস উত্তর প্রদেশে ২০১২ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা একটি দলের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল। আশা করেছিল যে ২০১৫ সালে বিহার নির্বাচনে বিজেপি যেমন কংগ্রেস ও অন্যান্য দলের জোটের কাছে হেরে গিয়েছিল ইউপিতেও তাই হবে। কিন্তু হয়েছে উল্টোটি। মোদি ব্র্যান্ডের কাছে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই টিকতে পারেনি। তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাই সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×