ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গভীর সমুদ্রে জাহাজ আটকা ॥ ২২ শ্রমিক অনাহারে ৭ দিন

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৫ এপ্রিল ২০১৭

গভীর সমুদ্রে জাহাজ আটকা ॥ ২২ শ্রমিক অনাহারে ৭ দিন

নিজস্ব সংবাদদাতা, মংলা, ৪ এপ্রিল ॥ বন্দরের অদূরে গভীর সমুদ্রে বাণিজ্যিক জাহাজে আটকেপড়া বাংলাদেশী ২২ শ্রমিকের দূরবস্থা এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। টানা সাত দিন অনাহারে থাকা শ্রমিকরা ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সঙ্কটে পড়া শ্রমিকদের মধ্যে হাহাকার বিরাজ করছে। বৈরী আবহাওয়া ও সমুদ্র উত্তাল থাকায় রসদ নিয়ে কোন নৌযান ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারছে না। বাণিজ্যিক এ জাহাজটিতে দেশী-বিদেশী ৪৫ নাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের উদ্ধারে রওনা হয়েছে নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ। পানামা পতাকাবাহী জাহাজ এমভি স্টার অথয়া গত ১০ মার্চ ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৮ জাহার ৫শ’ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে মংলা বন্দরের ফেয়ার ওয়ে বয়া এলাকায় অবস্থান নেয়। আর গত ২৬ মার্চ সেখানে কাজে যোগ দেয় দেশীয় ২২ জন শ্রমিক। প্রথম দফায় লাইটারযোগে ২ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন কয়লা খালাস করা হয়। গত ২৮ মার্চ সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠলে সমুদ্র পথে জাহাজটির সঙ্গে নৌযানের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। নৌযান না যেতে পারায় জাহাজটিতে থাকা শ্রমিকদের বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য এবং রসদ ফুরিয়ে যায়। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন সমুদ্রে অবস্থান করায় বিদেশী নাবিকরাও খাদ্য সঙ্কটে পড়ে। বিদেশী ২৩ জন ক্রু তাদের নিজেদের মজুত খাদ্য নিয়ে দুরস্থায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্দর এলাকায় ভিড়তে না পারলে তাদেরও ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে। ওই জাহাজটিতে বর্তমানে অবস্থানরত ক্রেন ড্রাইভার মোঃ মাসুদ মোবাইল ফোনে জানান, গত ২৮ মার্চ থেকে জাহাজ হতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের কোন খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে না। যে কারণে টানা ৭ দিন অনাহারে থাকা শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যিক জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট কসমস শিপিং লাইন্সের খুলনার ম্যানেজার মোঃ সিরাজুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, জাহাজ থেকে দেশীয় সকল শ্রমিককে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে এলে প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহসহ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার এম ওয়ালিউল্লাহ জানান, কয়লা বোঝাই জাহাজটি হিরন পয়েন্ট থেকে প্রায় ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করছে। আর মংলা বন্দর হতে এ দূরত্ব প্রায় ১২০ নটিক্যাল মাইল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও সমুদ্র উত্তাল থাকায় কোন প্রকার কার্গো ও কোস্টার ওই এলাকায় পৌঁছতে পারছে না। যে কারণে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য রসদ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না জাহাজটিতে। এ অবস্থায় বিদেশী এ জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ও স্টিভিডর বন্দর কর্তৃপক্ষের সাহায্য চেয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত সোমবার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ ঘটনাস্থলে অবস্থান করলে বাণিজ্যিক জাহাজটির সঙ্গে ভিড়তে ব্যর্থ হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে হিরন পয়েন্ট থেকে নৌ বাহিনীর আরও একটি জাহাজ ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছে। এ দিকে জাহাজে থাকা বাংলাদেশী ২২ শ্রমিকের অধিকাংশই অনাহারে থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
×