ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

হল জীবন ॥ এই তো বেশ আছি

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২ এপ্রিল ২০১৭

হল জীবন ॥ এই তো বেশ আছি

ছাত্রজীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন ও স্মৃতিবহুল হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জীবন। বারবার ছুটে যেতে ইচ্ছে হয় যেখানে। হাসি-কান্না, গল্প-আড্ডা-গানে মেতে থাকার যে জায়গা সেটিই ক্যাম্পাস। স্মৃতির পাতায় অমলিন হয়ে থাকা সময়গুলো বারবার দাগ কেটে যায় হৃদয়ে। ইচ্ছে হয়, সারাটা জীবন যদি এভাবেই কাটিয়ে দেয়া যেত স্মৃতিমাখা মধুর ক্যাম্পাসটিতে, হয়তো মন্দ হতো না। দক্ষিণ এশিয়ার কৃষিশিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকৃতিকন্যা নামে খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এসেছিলাম এক রাজ্য স্বপ্ন নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন বলতে অনেকাংশেই যা বোঝায়, তা হলো হলের জীবন। বলা হয়ে থাকে, যে হলে থাকে না সে জানে না কিভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। যে হলে থাকে না, সে জানে না কিভাবে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসতে হয়। যে হলে থাকে না, সে জানে না শত বাধা-বিপত্তিতেও কিভাবে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনিবাসগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আচ্ছাদিত একটি হলের নাম শহীদ নাজমুল আহসান হল। হলজুড়েই আম, নারিকেল গাছের সারি। গাছে গাছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। পাখি ডাকা ভোরে জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই মনটা ভরে উঠে বাগানের মিষ্টি ফুলের চাহনিতে। এর সঙ্গেই আবার রয়েছে খেলার মাঠ। সময় পেলেই চলতে থাকে গান, কবিতা, আড্ডা আর গলাবাজি। বৃষ্টির দিনে সবাই মিলে একসঙ্গে ফুটবল খেলা, যখন তখন পুকুরে দলবেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়া। এ যেন এক নতুন আনন্দ ভুবনের স্বপ্ন বিলাস। হলে থাকার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে সব ধরনের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। বড়ভাইদের ¯েœহ আর বন্ধুদের বন্ধুপ্রতিম ভালবাসায় যেন এক অন্যরকম জীবন। প্রথম যখন হলে পদার্পণ করেছিলাম, এত অপরিচিত মুখ দেখে ভেবেছিলাম, হয়ত কখনও এদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে উঠতে পারব না। কিন্তু হলের জীবন এমনই অসাধারণ যে, খুব অল্প সময়েই সবার সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠল। তারপর কাটতে থাকল দিন, ভারি হতে থাকল স্মৃতির পাতা আনন্দ-বেদনা আর নতুন নতুন অভিজ্ঞতায়। শহীদ নাজমুল আহসান হলে কিছুটা আসন সঙ্কট থাকায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় গণরুমে। থাকতে কিছুটা কষ্ট হলেও বড়ভাইদের ¯েœহ-ভালবাসা, নিয়মিত খোঁজ-খবর নিতে আসা আর রুমের বন্ধুদের পারস্পরিক সহযোগিতায় গণরুমের জীবনটাও হয়ে উঠে মধুময়। শহীদ নাজমুল আহসান হলের সবচেয়ে আনন্দময় স্থানটি হলো হলের টিভি রুম। বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচ কিংবা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবল ম্যাচের দিন এক মিনি স্টেডিয়ামে পরিণত হয় টিভি রুমটি। ইচ্ছেমতো গলাবাজি, হৈচৈ আর সবাই মিলে এক সঙ্গে খেলা দেখার সময়গুলো সত্যিই অসাধারণ। হলে থাকাতে পড়ালেখার ব্যাপারে বড়ভাইদের সহযোগিতা যেমন পাওয়া যায়, তেমনি বিপদ-আপদে ও পাশে থাকেন তারা। পথ চলতে আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেন তারা। বিভিন্ন অভিজ্ঞতার গল্পও শুনতে পাওয়া যায় তাদের থেকে। আর যাদের কথা না বললেই নয়, তারা হলো ব্যাচমেট। জীবনের সবচেয়ে শক্ত ও গভীর বন্ধুত্ব তৈরি হয় এদের সঙ্গেই। দুষ্টুমিতে জুড়ি নেই যাদের, খাবার-দাবার থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ভাগ বসায় যারা, কোন বিপদ-আপদ হলে ছায়ার মতো পাশে পাওয়া যায় সেই তাদেরকেই। গানবাজনা, আড্ডা, গল্প নানা আনন্দ আয়োজনে কাটে হল জীবনের প্রতিটা সময়। রাতে লেকের পাড়ে বসে গল্প করা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা আর পরীক্ষার আগের রাতে রুমের সবাই মিলে রাত জেগে পড়াশোনা করা। সব আনন্দ-আয়োজনের মাঝেও পারস্পরিক সহযোগিতা। এই তো জীবন। এই তো বন্ধুত্ব। তাই তো দিনশেষে সেই চিরচেনা কথাটিই বলতে হয়-তোরা ছিলি, তোরা আছিস, তোরাই থাকবি। মো. জাহিদ হাসান
×