ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কে এই মুসা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৯ মার্চ ২০১৭

কে এই মুসা

শংকর কুমার দে ॥ সিলেটের শিববাড়ী এলাকার জঙ্গী আস্তানা আতিয়া মহলে জঙ্গীবিরোধী অভিযানে নিহত চার জঙ্গীর মধ্যে একজন মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা! কে এই মুসা? যে ছবি দিয়ে মুসা বাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গী আস্তানা গড়ে তুলেছিল, সেই ছবির সঙ্গে পুলিশের কাছে থাকা ছবির মধ্যে মিল রয়েছে। নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মুসা সিলেটের শিববাড়ীর আতিয়া মহলে জঙ্গী আস্তানা গড়ে অবস্থান করছেন এমন খবরের ভিত্তিতেই টানা চার দিন ধরে অভিযান চালানো হয়েছে জঙ্গী আস্তানাটিতে। এমনটাই জানিয়েছেন, তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহীর বাগমারায় জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড ফাঁসিতে ঝুলানো ছিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের হাত ধরে প্রকাশ্যে জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতায় হাতেখড়ি হয়েছিলেন মাঈনুল ইসলাম মুসার। ঐ সময় মুসা বাগমারার তাহেরপুর ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। মুসার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। তিনি উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের বুজরুককোলা গ্রামের আবুল কালাম মোল্লাহর ছেলে। ১৯৮৮ সালের ২০ ডিসেম্বর তার জন্ম। মুসার বাবা আবুল কালাম মোল্লাহ মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। তিনি মারা গেছেন। মুসা গ্রামে খুব কম আসতেন। মুসা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন। পরে সেখান থেকে রেফার্ড নিয়ে ঢাকা কলেজে চলে আসেন। ঢাকা কলেজ থেকে অনার্সে উত্তীর্ণ হওয়ার পর উত্তরার লাইফ স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। এলাকায় মেধাবী ছাত্র হিসেবে মুসার পরিচিতি ছিল। ঢাকা কলেজে ইংরেজী সাহিত্য বিভাগে সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী শেষ করে তিনি উত্তরার লাইফ স্কুলে যোগ দেন। এরপর থেকেই তাদের পারিবারিক অবস্থার উন্নতি হয়। উত্তরার লাইফ স্কুলের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের তাদের বলেছেন, মুসা এ (২০১৬) বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাস পর্যন্ত তাদের স্কুলে ইংরেজী পড়াতেন। পরে চাকরি ছেড়ে দেন। এরই মধ্যে বাগমারার বাসুপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সাঁইপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ে তৃষ্ণামনিকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি ৬তলা বাড়িতে ওঠেন। এই বাড়িতেই সপরিবারে ভাড়া থাকতেন মেজর জাহিদ। মুসা মেজর জাহিদের মেয়েকে পড়াতেন। তার স্ত্রী তৃষামনিকে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর আশকোনার এক জঙ্গী আস্তানা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ওই আস্তানায় অভিযানের আগেই মুসা পালিয়ে যায়। মুসার মা সুফিয়া বেগম বলেছেন, মেজর জাহিদ, জেএমবির আরেক নেতা তানভীর কাদিরসহ অনেক নেতাকে নিয়ে বাসার ছাদে মিটিং করতেন। ঐ মিটিংয়ে মুসা অংশগ্রহণ করেই জঙ্গীতে ঢুকে পড়ে। গত ৮ মাস আগে সে গ্রামের বাড়িতে আসে। ওই সময় সৌদি আরব যাবে বলে ৩ লাখ টাকার জমি বিক্রি করে বাড়ি থেকে চলে যায়। যাওয়ার সময় বাড়িতে থাকা তার ছবিসহ বেশকিছু কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলে। তিনি বলেন, আমার ছেলের ঘটনায় লজ্জিত আমি। এক সময় আমার ছেলে ভাল ছাত্রও ছিল। জানি না আমার ছেলের ভাগ্যে কি আছে। তবে আমার ছেলের মতো আর কোন ছেলে যেন জঙ্গীতে জড়িয়ে না পড়ে। এলাকার লোকজনের সঙ্গে তার তেমন যোগাযোগও ছিল না। দীর্ঘ ১০ মাস ধরে তার ছেলে ও ছেলের স্ত্রী-সন্তানের কোন সন্ধান তারা পাননি বলে জানিয়েছেন মুসার মা সুফিয়া বেগম। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর আশকোনায় জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের পর আলোচনায় আসেন মাঈনুল ইসলাম মুসা। তার সাংগঠনিক ছদ্মনাম মুসা। ওই আস্তানা থেকে মুসার স্ত্রী ও জাহিদের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে আত্মসমর্পণ করলেও আরেক নারী বোমা ফাটিয়ে আত্মঘাতী হন।
×