বেনজির আবরার
যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুণী সুমাইয়া কাজির নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? ফেনীর মেয়ে সুমাইয়া বছরখানেক আগে নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্বের সেরা ৫০ প্রভাবশালী উদ্যোক্তা। সুমাইয়া কাজির আইটিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সুমাজি ডট কম কাজ করছে তরুণীদের নিয়েই। এটা তো বাইরের দেশে বাঙালী তরুণীর সফলতার গল্প, আসুন এবার জেনে নেই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আইটি খাত ব্যবহার করে তরুণীরা যেভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন-
আধুনিক বিশ্বে উন্নয়নের অন্যতম উপাদান তথ্য ও প্রযুক্তি। বর্তমানে বিভিন্ন দেশ তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি অর্জন করছে। চার দশক আগে যে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সে বাংলাদেশ এখন আর নেই। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশীদের চেয়ে এগিয়ে আছে। বর্তমানে দেশের তরুণীরা প্রযুক্তিবান্ধব হয়ে উঠছে। আইসিটি বা তথ্যপ্রযুক্তিতে পুরুষদের পাশাপাশি বর্তমানে নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছেন। কিছু দিন আগেও এ খাতের শিক্ষা, সেবা ও ব্যবসা ছিল পুরুষদের দখলে। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক প্রশিক্ষণে শতকরা ৩০ ভাগ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই বয়সে তরুণী। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক্স ডিজাইন, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব পোর্টাল, কল সেন্টার, মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন, সামাজিক যোগাযোগসহ নানা ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর পেশায় অংশগ্রহণ করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে আমাদের বাঙালী মেয়েরা। গার্মেন্টস বা গৃহস্থালির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আজকের তরুণীরা পড়ালেখার বিষয় হিসেবে বেছে নিচ্ছে আইটি সেক্টর। যার কারণে পদচারণা বাড়ছে প্রযুক্তিবিষয়ক কাজে।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাবহার করে কলসেন্টারে তরুণীদের অংশগ্রহণ এখন উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে, দেশের বেশিরভাগ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে মেয়েদেরই নেয়া হয় কলসেন্টার অথবা অভ্যর্থনাকক্ষের কাজে। প্রতিযোগিতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইটি খাতে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে প্রশংসা অর্জন করেন এমন একজন তরুণীর সঙ্গে কথা হলো ডি প্রজন্মের সঙ্গে। নাম আনিকা সিদ্দিকা, বয়স ২২। এ বয়সেই আনিকা ৬টি প্রতিষ্ঠিত ওয়েবপেজের ডেভেলপমেন্টের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। তার কাজের সাফল্য দেখে তার বেশকিছু বন্ধুও আগ্রহী হয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার ব্যাপারে। তরুণীদের পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়া হলে আর পারিবারিকভাবে যদি তাদের আইটিখাতে শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করা হয়, তবে ঘরে বসেও আজকের তরুণীরা হতে পারে পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি। ঢাকার একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ স্কুলে কম্পিউটার শিখতেন নাজিয়া রহমান, পড়ছেন ইডেন কলেজে। সেখানেই শেখার একপর্যায়ে দেখলেন আরেকজন আউটসোর্সিংয়ের কাজ শিখছেন বসে বসে, বিস্তারিত বুঝতে চাইলেন। আজকের নাজিয়ার গল্পটা অনেক সুন্দর, নাজিয়া প্রতি মাসে বিশ হাজার টাকার মতো আয় করছেন আউটসোর্সিং করেই।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে একুশ শতকের উপযোগী দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারও ইতোমধ্যেই গ্রামগঞ্জে আইসিটি খাতে তরুণীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সরকারের আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে সারাদেশে তাদের জন্য লার্নিং ও আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়া, ‘টেকসই নারী উন্নয়নে আইসিটি’ সেøাগানের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আইসিটি ডিভিশন মোবাইল আইসিটি ট্রেনিং ল্যাব চালু করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ৭টি বাসের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলার ২ লাখ ৪০ হাজার তরুণী ও মেধাবী নারীকে তথ্যপ্রযুক্তির মৌলিক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রতিটি বাসে একসঙ্গে ২৫ জনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যেই, অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাবে ল্যাপটপ, বড় এলইডি স্ক্রিনের টিভি, সাউন্ড সিস্টেম, ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংবলিত ৫টি স্মার্টবাসের মাধ্যমে দু’দিনের ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চলমান রয়েছে বিভিন্ন জেলায়। এ দু’দিনের প্রশিক্ষণের পর যারা আইটি সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী তাদের ৫০ দিনের (২০০ ঘণ্টা) এ্যাডভান্সড প্রশিক্ষণে গ্রাফিক্স, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের প্রদানের মাধ্যমে প্রফেশনাল আউটসের্সিং পার্সোনালিটিতে রূপান্তরিত করা হবে। দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে মেয়েদের শুধু অঙ্ক, ইংরেজী ও বিজ্ঞানে ভাল জানলেই হবে না। তাদের প্রযুক্তিনির্ভর কম্পিউটার কোডিং এবং প্রোগ্রামিংও শিখতে হবে।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অল্প শিক্ষিত তরুণীরা স্বল্প কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন কাজে সাফল্য আনছে। আমাদের দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। এই বিশাল জনশক্তিকে প্রযুক্তির জ্ঞানে জ্ঞানী করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সম্পৃক্ত করা হলে নিশ্চিত হবে তাদের পূর্ণ ক্ষমতায়ন। নারীরা তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজের ঘরে বসে আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং করে বৈদেশিক মুদ্রাসহ বিপুল অর্থ আয় করতে পারবে, যা আমাদের অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনবে। ডিজিটাল নারীদের হাতেই পূর্ণ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: