ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনা-বাঙালী নদীর ভাঙ্গনকবলিত মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই

৪০ ভূমিহীন পরিবারের আশ্রয় মিলল

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২১ মার্চ ২০১৭

৪০ ভূমিহীন পরিবারের আশ্রয় মিলল

সমুদ্র হক ॥ এক ঠিকানা হারিয়ে নতুন আরেক ঠিকানা পেয়েছে ওরা। নদী ভাঙনে বসতভিটা জমিজিরাত হারিয়ে ওরা হয়ে পড়ে যাযাবর। কখনও খোলা আকাশের নিচে। কখনও ভিন্্ গ্রামে কোন আত্মীয়র বাড়িতে ক্ষণিকের আশ্রয়ে থাকে। কোথাও গতর খেটে দিনগুজরান করে একপর্যায়ে বিতারিত হয়ে চলে যায় আরেক গাঁয়ে। কেউ শহরের এক প্রান্তে গিয়ে খোলা জায়গা খুঁজে নিয়ে বস্তি গড়ে। এক সময় সেখান থেকেও হয় উচ্ছেদ। তাদের এমন যাযাবর জীবনের অবসান ঘটেছে। ওদের জন্য নির্মিত হয়েছে গুচ্ছগ্রাম। এমনই এক গুচ্ছগ্রাম বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার সিচারপাড়ায়। যেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে ভূমিহীন ৪০ পরিবারের প্রায় এক শ’ সদস্য। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার সান্তাহারে সাইলো উদ্বোধনের পর যে ১৬ প্রকল্প উদ্বোধন করেন তার একটি এই গুচ্ছগ্রাম। মার্চের প্রথম দিনেই সিচারপাড়া গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নিয়েছে ৪০ ভূমিহীন পরিবার। এই গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন বগুড়া-১ (সোনাতলা, সারিয়াকান্দি) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান। যমুনা ও বাঙালী নদীর ভাঙন রোধে অবকাঠামো নির্মাণসহ ভাঙন কবলিত মানুষদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিতে সরকারের কাছে এই এলাকার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেন তিনি। তারপর প্রকল্প পাস করিয়ে আনেন। এরই ধারাবাহিকতায় নির্মিত হয়েছে সিচারপাড়া গুচ্ছগ্রাম। এ ধরনের আরও কয়েকটি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ পর্যায়ে রয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ক্লাইমেট ভিক্টিম রিহ্যাবিলিটেশন প্রকল্পের (সিভিআরপি) আওতায় যমুনা-বাঙালী নদীর চরের কাছে ৮ দশমিক ৩৪ একর ভূমির ওপর নির্মিত হয়েছে সিচারপাড়া গুচ্ছগ্রাম। ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৪ লাখ টাকা। সোনাতলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জানালেন, প্রতি পরিবারের জন্য ৪ শতাংশ করে জায়গার ওপরে একটি শোবার ঘর, একটি রান্নাঘর, চুলা, উঠান ও শৌচাগার (স্যানিটারি লেট্রিন) নির্মাণ করা হয়েছে। আরসিসি খুঁটির ওপর টিনের ঘর পরিবেশবান্ধব করেই নির্মিত হয়েছে। সুপেয় পানি প্রাপ্তিতে আপাতত সবার ব্যবহারের জন্য মাটির গভীরে পাইপ বসিয়ে একটি টিউবওয়েল স্থাপিত হয়েছে। শীঘ্রই আরও টিউবওয়েল বসানো হবে। গুচ্ছগ্রামের ভেতরে তিন বিঘার ওপরে একটি পুকুর বানানো হয়েছে যা গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা সমবায়ের ভিত্তিতে পরিচালনা করবে। রোজগারের জন্য সমবায় ভিত্তিতে তারা মাছ চাষ করতে পারবে। একই সঙ্গে তারা গৃহপালিত পশু পাখি হাঁস মুরগি গরু ছাগল পালন করতে পারবে। গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় পাওয়া গোঁসাইবাড়ি গ্রামের কনা বেগম (৪৫) শামসুল আলম (৫৫) জোবেদা বেগম (৫৬) বলেন, বসতভিটা জমিজিরাত নদী গর্ভে যাওয়ার পর নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন। অস্তিত্ব রক্ষায় কত কিই না করতে হয়েছে। এখন ঠিকানা পেয়ে দুঃসহ জীবনের অবসান ঘটে নতুন জীবন শুরু হলো। যারা এখনও আশ্রয়হীন হয়ে রয়েছে তাদের জন্য সরকারের কাছে এমন ধরনের আরও গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের আবেদন জানালেন গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় পাওয়া ঠাকুরপাড়া গ্রামের আসাদুল ম-ল। বগুড়া-১ আসনের এমপি আব্দুল মান্নান সরকার আরও দুটি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করবেন এমনটি বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন। এই প্রকল্পের সভাপতি সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নত করা শিশুদের স্কুলে পাঠানোর সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্রামের লোকজন বলল, গুচ্ছগ্রামে আশ্রিতদের তারা নিজেদের পড়শীর মতোই মনে করে। ভিটেমাটি হারানো মানুষের দুঃখের জীবনের অবসান ঘটায় গ্রামের মানুষ সরকারকে অভিনন্দিত জানিয়েছে।
×