ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত বন্ধ থাকা রেল সংযোগ চালুর উদ্যোগ;###;ব্রডগেজ রেললাইন বসানোর কাজ দ্রুত এগোচ্ছে

চিলাহাটি-হলদীবাড়ি রেললিঙ্ক চালু হচ্ছে ৫২ বছর পর

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৯ মার্চ ২০১৭

চিলাহাটি-হলদীবাড়ি রেললিঙ্ক চালু হচ্ছে ৫২ বছর পর

সমুদ্র হক ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগিতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরানো সীমান্ত রেলওয়ে সংযোগ পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এপারে উত্তরাঞ্চলের চিলাহাটি এবং ওপারে ভারতের হলদীবাড়ির মধ্যে রেলের ইন্টারচেঞ্জ লিংক চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে উভয়প্রান্তে পরিত্যক্ত হয়ে থাকা ব্রডগেজ রেললাইন পুনর্¯’াপনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ৫২ বছর ধরে এই সীমান্ত রেলওয়ের ইন্টারচেঞ্জ লিংক বন্ধ ছিল। দুদেশের মধ্যে রেলে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে একটি সীমান্ত রেলওয়ে সংযোগ ব্যবহার করা হচ্ছিল। এপারে যশোরের বেনাপোল ও ওপারে ভারতে পেট্রাপোলের মধ্যে রেল সংযোগ আছে। কিছুদিন ধরে এপারের দর্শনা ও ওপারের গেদে স্টেশনের মধ্যে ইন্টারচেঞ্জ লিংক চালু হয়েছে। দিনাজপুরের বিরল সীমান্ত রেলপথে দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। চিলাহাটি রেলপথটিও আগামী দুই বছরের মধ্যে চালু লক্ষ্যে রেললাইন বসানোসহ অবকাঠামো স্থাপনার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। চিলাহাটি রেলস্টেশন নীলফামারী জেলার সীমান্ত এলাকা। ওপারে ভারতের কোচবিহারের হলদীবাড়ি রেলস্টেশন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে দুই দেশের মধ্যে এই ইন্টারচেঞ্জ চালু ছিল। প্রতিদিন সকাল ১০টায় একটি যাত্রীবাহী ট্রেন ও প্রান্তের হলদীবাড়ি পৌঁছে ভারত গমনের যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বিকেল তিনটায় ফিরতি ট্রেনে এই দেশে আগমনের যাত্রীদের নিয়ে আসত। যাওয়া-আসার সময় চিলাহাটিতে ইমিগ্রেশমন ও কাস্টমস চেকিং হতো। ‘৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে সেপ্টেম্বর সকাল থেকে দুই দেশের মধ্যে ইন্টারলিংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আর চালু হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর চিলাহাটি-হলদীবাড়ি রেল সংযোগ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারের নিহত হওয়ার পর সামরিক শাসকরা সেই উদ্যোগ বাতিল করে দেয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে চিলাহাটি-হলদীবাড়ি ইন্টারচেঞ্জ লিংক চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই সময়ের রেলমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন বলেছিলেন উভয়প্রান্তের পরিত্যক্ত রেললাইন বসিয়ে দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ পুনর্স্থাপিত হবে। পরে সে প্রকল্প আর এগোয়নি। বর্তমানে প্রকল্পটির সঙ্গে আরও অবকাঠামো যোগ করে নতুন করে চিলাহাটি-হলদীবাড়ির মধ্যে রেল সংযোগ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই রেলপথ চালু হলে ইন্টারচেঞ্জ ব্যবস্থায় রেল যোগাযোগে ঢাকা থেকে কোচবিহার শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। চিলাহাটি অংশে ৭ কিলোমিটার ও ভারতের হলদীবাড়ি অংশে ৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হবে। এই রেলপথ ব্রডগেজের। এই প্রকল্পে ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। হলদীবাড়িতে ভারতীয় অংশের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। চিলাহাটি অংশের রেললাইন বসানোর কাজ ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ হবে। আরেকটি সূত্র জানায়, উপ-আঞ্চলিক রেল সংযোগের আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সকল পুরাতন রেল সংযোগ চালু করার লক্ষ্যে বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মংলা বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশ ভারত নেপাল ভুটানের সঙ্গে চতুর্দেশীয় বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে। এতে বাংলাদেশ লাভবান হবে। এই চার দেশের মধ্যে পর্যটন শিল্পেরও উন্নয়ন হবে। বাংলাদেশে পর্যটক আগমনের সংখ্যা বাড়বে। বাংলাদেশের পর্যটক বর্তমানে স্থলপথের হিলি কিংবা বুড়িমাড়ি দিয়ে ভারত -নেপাল-ভুটানে যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) ভারতের কলকাতা ও আগরতলা পর্যন্ত স্থলপথে সরাসরি সংযোগ চালু করেছে। আকাশপথে ভারতের কলকাতা মুম্বাই-চেন্নাই-ব্যাঙ্গালুরু ফ্লাইট চালু আছে। রেলপথে ঢাকা থেকে কলকাতার সরাসরি সংযোগ আছে যশোরের বেনাপোল-বনগাঁর পেট্রাপোল চেক পয়েন্ট হয়ে। চিলাহাটি-হলদীবাড়ি ইন্টারেচঞ্জ লিংক চালু হলে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় উন্নয়নের দুয়ার খুলে যাবে। এতে লাভবান হবে উভয় দেশ। প্রজন্মের মধ্যে সম্প্রীতির মেলবন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে।
×