ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৩৫ রকমের পণ্যে সাজানো পাটমেলার বাহারি স্টল ॥ শেষ হচ্ছে আজ

সোফা টি টেবিল জ্যাকেট শাড়ি বেডশীট- সবই পাটের তৈরি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১১ মার্চ ২০১৭

সোফা টি টেবিল জ্যাকেট শাড়ি বেডশীট- সবই পাটের তৈরি

এমদাদুল হক তুহিন ॥ পাটপণ্য দিয়ে নান্দনিকভাবে সাজানো ঘর। সেই ঘরে পাটের তৈরি সোফা। সোফার সামনে টি টেবিল। সেটিও তৈরি হয়েছে পাট দিয়ে। আর সেই টেবিলে সাজানো পাটের তৈরি নানা ধরনের খেলনা। বহুমুখী পাটপণ্য মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ঘর সাজানো থেকে শুরু করে নারী-পুরুষের ব্যবহার উপযোগী এমন কোন পণ্য নেই, যা মেলায় নেই। কেউ কেউ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছেন- এটিও পাট দিয়ে তৈরি হয়! মেলায় রয়েছে পাটের তৈরি সোফা, টি টেবিল, জ্যাকেট, শাড়ি, বেডশীট, জানালা-দরজার পর্দা। রয়েছে দাবা খেলার ঘুঁটি ও কোর্টও। দেশে প্রথমবারের মতো পালিত জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্য মেলার দ্বিতীয় দিন শুক্রবার দর্শনার্থীদের ঢল নামে। প্রবেশপথের দীর্ঘ লাইন মূল ফটক ছাড়িয়ে তা রাস্তা পর্যন্ত গড়ায়। শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ ঘুরে দেখছিলেন প্রতিটি স্টল। ১৩৫ রকমের পণ্য নিয়ে সাজানো এ মেলা শেষ হবে আজ। দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। এদিকে জাতীয় পাট দিবস ও মেলা উপলক্ষে খামারবাড়ির আশপাশের রাস্তাকেও সাজানো হয়েছে পাট দিয়ে। খামারবাড়ি মোড়ে শোভা পাচ্ছে বিশালাকায় নৌকায় সাজানো পাট আর চারদিকের রাস্তায় ছড়িয়ে রাখা পাটখড়ি। রয়েছে সচেতনতামূলক ব্যানার ফেস্টুন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের খোলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত মেলায় প্রবেশের পর চোখে পড়বে পাটের তৈরি সাজানো ঘর। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে নাÑ পাট দিয়ে এত সুন্দর করে ঘর সাজানো যায়! জুট ডাইভার সিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এ স্টল সাজিয়েছে। মেলায় ওমেন্স পাওয়ার নামক স্টলে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আসমা আক্তার শিমুর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমদের স্টলে ১২ ধরনের পণ্য রয়েছে। লেডিস ব্যাগ ছাড়াও পুরুষের ব্যবহার উপযোগী ব্যাগও রয়েছে। ব্যাগগুলোর দাম ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। বৃন্তা জুট হ্যান্ডিক্রাফটসের স্টলে কথা হয় স্মিতা চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের স্টলে জুতা, পাটের তৈরি ব্যাগ, লেডিস ও জেন্টস ব্যাগ, ফটোফ্রেমসহ ৮ থেকে ১০ ধরনের পণ্য রয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, পাটের প্রতি মানুষের যে অনাগ্রহ ছিল এখন তা আর নেই। মেলায় এসে মানুষ তার পছন্দমতো পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের স্টলে পাটের তৈরি ব্লেজার, পাঞ্জাবি, শাড়ি, বেডশীট, সোফার কভার, জুতাসহ নানা পণ্য শোভা পাচ্ছিল। স্টলের দায়িত্বে থাকা আহসানউল্লার সঙ্গে হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, শো কালেকশনের মধ্যে আমাদের ১০ হাজারের ওপরে স্টাইল আছে, যার সবগুলোই পাটের তৈরি। এখানে আমরা আমাদের পণ্যগুলো প্রদর্শন করছি, যা বাইরে রফতানি হয়। এছাড়া আমাদের কিছু কিছু পণ্য জেডিপিসি সেন্টারে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ জুট ক্রাফট ইকো ক্রাফটসের স্টলে ফুলের টবের নিচের অংশ পাট দিয়ে সাজানো হয়েছে, যা দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এ স্টলে কথা হয় মোঃ পল্লবের সঙ্গে। তিনি বলেন, পাট বলতে কেবল ছালার বস্তা নয়, তা দিয়ে বাগানের সৌন্দর্যও বাড়ানো যায়। তা তুলে ধরতেই আমাদের এ প্রদর্শনী। গার্ডেনিং প্রোডাক্টস ছাড়াও আমাদের কিছু টেক্সটাইলপণ্যও রয়েছে। বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের স্টলের সামনে কথা হয় দর্শনার্থী কামাল উদ্দিনের সঙ্গে। মেলায় প্রবেশ করেই তিনি পাটের তৈরি পলিথিন ব্যাগ দেখছিলেন। কামাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, দেখে মনে হচ্ছে সাধারণ পলিথিন থেকে এটি একটু মোটা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি হাতে পেলে ভাল লাগবে। এ স্টলে দর্শনার্থীরা পাট থেকে তৈরি হওয়া ভিসকস ও ভিসকস থেকে তৈরি হওয়া সুতাও ছুঁয়ে দেখছিলেন। দেখা গেছে, টিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারযোগ্য জুটোফাইবার সম্পর্কেও জেনে নেন দর্শনার্থীরা। জানা গেছে, জুটোফাইবার দিয়ে ঘর তৈরি করলে তা ১০০ বছরের ওপর টেকসই হয়। হ্যান্ড টাচ ভাই ভাই জুট প্রোডাক্টসের স্টলে কথা হয় বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা আরমানা আলমের সঙ্গে। এ স্টল থেকে তিনি নিজের জন্য দরদাম করে পছন্দসই পাটের শাড়ি ক্রয় করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে আরমানা বলেন, সাধারণত পাটের জিনিসপত্র আড়ং থেকে কিনি। মনে হচ্ছে এখানে তুলনামূলকভাবে দামটা বেশি। তারপরও কিনছি দেশীয় জিনিস বলে। কারণ এগুলো মেলা হলেই পাওয়া যায়। দেখা গেছে, এখানে পাটের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ টাকা করে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) স্টলে ইয়ার্নসহ তাদের উদ্ভাবিত নানা ধরনের পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছিল। মনি জুট গুডস এ্যান্ড হ্যান্ডিক্রাফটের স্টলে কথা হয় ফাহিমা খানমের সঙ্গে। তিনি বলেন, মুজিবকোট, ব্লেজারসহ এখানে অন্তত ১০ ধরনের পণ্য আছে, যার সবগুলোই পাটের তৈরি। পাটজাত বহুমুখী পণ্যের প্রতি মানুষেরও বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাজকন্যা। মায়ের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে দেখছিল প্রতিটি স্টল। তারা মেলায় এসেছে লালবাগ থেকে। রাজকন্যা জানায়, পাটের তৈরি পাখির বাসাসহ সে তিনটি ব্যাগ কিনেছে। আবদুল্লাহ আহমেদ চৌধুরী ও জেবিন আক্তার। মেলায় ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন প্রতিটি স্টল। পছন্দ হলেই সংগ্রহ করছিলেন টুকটাক। এ দম্পত্তি জনকণ্ঠকে জানয়, মূলত আমারা মেলায় এসেছি পাট দিয়ে তৈরি ঘর সাজানোর কিছু আসবাব কিনতে। বেশকিছু সংগ্রহ করেছি। প্রথমবারের মতো আয়োজিত মেলা ঘুরে বেশ ভাল লেগেছে। পাট সম্পর্কেও জানতে পেরেছি নতুনভাবে। সামগ্রিকভাবে বহুমুখী পাটপণ্য মেলা দৃষ্টি কেড়েছে নগরবাসীর।
×