ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রহনপুর রেলবন্দর পূর্ণাঙ্গতা পায়নি ২৭ বছরেও

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৯ মার্চ ২০১৭

রহনপুর রেলবন্দর পূর্ণাঙ্গতা পায়নি ২৭ বছরেও

ডি এম তালেবুন নবী, রহনপুর ঘুরে এসে ॥ উত্তরাঞ্চলের একমাত্র রেলবন্দর গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর। একটি সম্ভাবনাময় রেলবন্দর চলছে মহাসঙ্কটের মধ্যে। দুই যুগের অধিক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও নেই কোন অবকাঠামোগত উন্নয়ন। ২৭ বছর ধরে এলসি স্টেশন থেকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দরে রূপান্তর করার কোন উদ্যোগ নেই এখন পর্যন্ত। অথচ ভারত, ভুটান, নেপালসহ একাধিক দেশ যারা মংলা পোর্ট ব্যবহার করে পণ্য আনা-নেয়া করে তাদের ব্যবহার করতে হয় রহনপুর রেলবন্দরকে। প্রথম দিকে কিছুদিন এই রেলবন্দর ব্যবহারের পর ভারতের আপত্তির কারণে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের শত মাইল রেলপথ সংস্কার করা হয়। এমনকি আমনুরা জংশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের রেলপথ ও সংস্কার করা হয়েছে। তারপরেও রহনপুর রেল বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দরে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। অথচ প্রতিমাসে লক্ষ্যমাত্রার কয়েক গুন বেশি রাজস্ব আদায় হচ্ছে রহনপুর রেলবন্দর থেকে। যেমন গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ কোটি ১৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা বেশি। জানুয়ারি ২০১৭ সালেও অনুরূপভাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রাজস্ব আদায় হলেও বন্দরের উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিগত বেশ কয়েক অর্থবছরে রেলবন্দর দিয়ে ৪০২ র‌্যাক ভর্তি মালামাল আমদানি করা হয়। এর ওজন ছিল প্রায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৪৯৪ মেট্রিক টন। যার মূল্য ছিল কোটি টাকার বেশি। এর বিপরীতে রাজস্ব আসে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৪৭২ টাকা। যার অধিকাংশ ছিল পাকুড়ের পাথর। পদ্মা সেতু, রূপপুর আনবিক কেন্দ্রসহ ২৮ জেলায় প্রায় শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে এই পাথর ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শত কোটি টাকার ২১ প্রকল্পের উন্নয়নে আনা হচ্ছে কুচি পাথর। পাশাপাশি ভারত থেকে আসা ডিজেল ও মংলা বন্দর হয়ে আনা পণ্য যাচ্ছে নেপাল ও ভুটানে। বিশাল অংকের রাজস্ব আসছে এসব পণ্য থেকে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে ২২১ র‌্যাকে আসা প্রায় ৪৯ কোটি টাকা মূল্যের পণ্যে রাজস্ব এসেছে ২৩ কোটি ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫৩ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। রহনপুর রেল বন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সঞ্জিত কুমার আচার্য জনকণ্ঠকে জানান, রহনপুর পূর্ণাঙ্গ বন্দরে পরিণত হলে প্রতিমাসেই রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে কয়েকগুণ বেশি রাজস্ব আসবে। তার আগে রহনপুরে নির্মাণ করতে হবে ইয়ার্ড, ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা ও ওয়ার হাউস। আমদানি রফতানি কারকরা তবেই অধিকহারে ঝুঁকবে এই দিকে। এ পথে তারা ব্যবসার প্রসার ঘটাতে চান। কারণ রেল পথে রাজস্ব কম ও প্রচুর পরিমাণে দ্রুত মালামাল এনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে এই পথে হাঁটতে চাচ্ছে না। যদিও রহনপুর রেলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করতে চাইলে সর্ব প্রথম প্রয়োজন হবে জমিনের। যা পর্যাপ্ত আকারে রহনপুরে রয়েছে। রেলের প্রায় ৩০ একরের অধিক জমি অবৈধ দখলদার বা নানান ভাবে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করছে। এই মাটির উপর করে রেখেছে বিশাল বস্তি। এই সব উচ্ছেদে রেল কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলেও প্রভাবশালীরা নানান কৌশল ব্যবহার করে অর্থের দাপটে তা দখলে রেখেছে। জমি উদ্ধার হলে বন্দরের কাজে লাগানো যাবে। এ ছাড়াও রেলে বিভিন্ন সমস্যার কারণে মালামাল যথাসময়ে রেলপথে গন্তব্যে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে এখানে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা থাকলে সড়ক পথেও দেশের বিভিন্ন স্থানে আমদানি করা মালামাল খুব সহজে ও কম সময়ে পাঠানো সম্ভব। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়ে প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরের এই রেল বন্দরের কার্যক্রম চলে আসছে একটি ভাড়া বাড়িতে। নিজস্ব অফিস নির্মাণেও নেই কোন উদ্যোগ। এমনকি পরীক্ষাগার, কাস্টমস অটোমেশন, ওয়েট ব্রিজ ও ডাম্প ইয়ার্ড নির্মাণ করার বিষয়েও মাথা ঘামাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। যার কারণে রাজস্ব আদায়ের একটি বিরাট অংশ চলে যাচ্ছে কিছু ব্যক্তির পকেটে। এই মহলটি খুবই সুপরিকল্পিত ভাবে নিজস্ব স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বন্দরের উন্নয়নে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। সম্ভবনাময় রেল বন্দরটি ব্যক্তি ইচ্ছার কাছে জিম্মা হয়ে রয়েছে যুগের পর যুগ।
×