ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লর্ডস সভায় ব্রেক্সিট নিয়ে আরেকটি সংশোধনী প্রস্তাব

ফের ধাক্কা খেল ব্রিটিশ সরকার

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৯ মার্চ ২০১৭

ফের ধাক্কা খেল ব্রিটিশ সরকার

ব্রেক্সিট ইস্যুতে আবার ধাক্কা খেল ব্রিটিশ সরকার। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ লর্ডস সভায় মঙ্গলবার একটি সংশোধনী প্রস্তাব ৩৬৬-২৬৮ ভোটে পাস হয়েছে। এর ফলে এখন ‘অর্থবহ’ পার্লামেন্টারি ভোটের জন্য বিলটি এখন কমন্স সভায় যাবে। ব্রেক্সিট ইস্যুতে সরকারের অবস্থানের বিরোধিতা করায় প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে তার এক উপদেষ্টাকে বরখাস্ত করেছেন। খবর বিবিসি ও টেলিগ্রাফ অনলাইনের। ব্রেক্সিট বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পরও দেশটিতে অবস্থানরত ইইউভুক্ত দেশের ৩৩ লাখ নাগরিক যাতে সেখানে বাস করতে পারেন সেটি অনুমোদন করে গত সপ্তাহেই হাউস অব লর্ডসে একটি বিল পাস হয়েছিল। ওই ঘটনায় টেরেসা মের সরকার প্রথম একটি বড় প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। এর পর বুধবারের ভোটাভুটি সরকারের জন্য দ্বিতীয় বড় বাধা। এর আগে সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে কোন ধরনের সংশোধনী ছাড়াই বিলটি পাস হয়েছিল। এখন উচ্চকক্ষ সংশোধনী চাওয়ায় বিলটি আবার নিম্নকক্ষ কমন্স সভায় ফেরত আসবে। নিম্নকক্ষ ওই সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ না করলে বিলটি পার্লামেন্টের এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে বার বার চালাচালির ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এর আগে মঙ্গলবার সংশোধনী বিলটির ওপর তিন ঘণ্টা বিতর্ক হয়। হাউস অব লর্ডসের সদস্যরা দ্বিতীয়বারের মতো বিলটিতে সংশোধনী আনেন। মে’কে এখন যুক্তরাজ্য যে ইইউ ছাড়তে ইচ্ছুক সে কথা জোটকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করতে হবে। এছাড়া এই বিল ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনা শুরুর ক্ষেত্রে একটি দিক নির্দেশনা হিসেবে গণ্য হতে পারে। লর্ড হ্যাসেলটাইনসহ ক্ষমতাসীন টোরি দলের ১৩ এমপি সরকারের ব্রেক্সিট পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি বিষয়ক উপদেষ্টা হ্যাসেলটাইনকে মে বরখাস্ত করেছেন। হ্যাসেলটাইন মার্গারেট থ্যাচারের মন্ত্রিসভারও সদস্য ছিলেন। লর্ড সভায় থাকাকালে তিনি আকস্মিকভাবেই তাকে বরখাস্ত করার সংবাদটি পান। এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। তবে আমি সরকারকে গত ছয় বছর ধরে যে সেবা দিয়ে আসছিলাম সেটি আর আমি দিতে পারব না। বুধবার গৃহীত ভোটাভুটি সম্পর্কে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এটি ছিল (ব্রেক্সিট ঠেকানোর) শেষ চেষ্টা। হাউস অব লর্ডসে আমার সহকর্মীদের আমি বলেছি, ব্রিটেনের ভবিষ্যত ইউরোপীদের সঙ্গে সম্পর্ক বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। নবীন জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য দেশকে আমরা কোন্ জায়গায় রেখে যাচ্ছি তা নির্ধারণের জন্য পার্লামেন্টের উচিত নিজস্ব সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করা। বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পে পরামর্শ দেয়ার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন হ্যাসেলটাইনকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। গত বছর ২৩ জুন অনুষ্ঠিত গণভোটে যুক্তরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইইউ ত্যাগের পক্ষে ভোট দেয়। জনগণের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করতে পার্লামেন্টের অনুমোদন আবশ্যক না থাকলেও হাইকোর্টের রায়ে বিষয়টি শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্টে আনতে হয়। বিবিসির রাজনীতি বিষয়ক বিশ্লেষক লরা কুয়েনবার্গ বলেছেন, বিলটি শেষ পর্যন্ত কমন্স সভায় পাস হবে কি হবে না; তা বলা সম্ভব নয়। কারণ, মন্ত্রীরা লর্ডস সভার সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, ব্রিটেন শেষ পর্যন্ত ইইউ ত্যাগ করবেই। হতে পারে এর জন্য কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে। আগামী মাসে ইইউ সনদ অনুযায়ী ৫০ ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু করবেন টেরেসা মে। আলোচনা চূড়ান্ত হতে দুই বছর সময় লাগবে। তবে আদালতের রুল অনুযায়ী ইইউ ত্যাগের এখতিয়ার এখন পার্লামেন্ট সদস্যদের হাতে। এ কারণে পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া তিনি আলোচনা শুরু করতে পারবেন না।
×