ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যুগ যুগ ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৫ মার্চ ২০১৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যুগ যুগ ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ জ্ঞান একটি মোমবাতির আলোর মতো। শিক্ষার ক্ষেত্রে আলোর চেয়ে বড় রূপক আর হয় না। বর্তমান ও ভবিষ্যত সমস্যা সমাধানে জ্ঞান প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। যুগ যুগ ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। তাই বর্তমান শিক্ষার্থীদের উচিত হবে তাদের উত্তরসূরী হওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিওর প্রেসিডেন্ট ও উপাচার্য অধ্যাপক অমিত চাকমা প্রধান বক্তা হিসেবে এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শনিবার দুপুরে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রফেসর ড. অমিত চাকমার হাতে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব সায়েন্স’ ডিগ্রী তুলে দেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এই সমাবর্তনে ৮০ জন কৃতী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে ৯৪ স্বর্ণপদক, ৬১ জনকে পিএইচডি এবং ৪৩ জনকে এমফিল ডিগ্রীসহ ১৭ হাজার ৮৭৫ জন গ্র্যাজুয়েটকে সনদ প্রদান করা হয়। সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরীন আহমাদ বক্তব্য দেন। সমাবর্তন বক্তা প্রফেসর ড. অমিত চাকমা বলেন, মাতৃভূমির সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়নি কিন্তু পারিবারিকভাবে এই বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার আবেগমাখা সম্পর্ক। কর্মজীবনে তার সফলতার রহস্য সম্পর্ক তিনি বলেন, আমি মনোযোগ সহকারে পড়ালেখা করেছি। আমার সমান পড়ালেখা করেও অনেকে সফল হয়নি। সফলদের মধ্যে যোগ্যতা, কর্মনিষ্ঠ ও চরিত্র এ তিন ধরনের গুণ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যোগ্যতা এমন গুণ ব্যক্তি হিসেবে ব্যক্তিতে কোন ব্যবধান নাও থাকতে পারে। কিন্তু চরিত্রে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির অনেক ব্যবধান থাকে। চরিত্র সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, চরিত্রকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। এ সময় তিনি বলেন, বিকশিত চরিত্র কাজে লাগালে সফলতা লাভ করা যাবে। অমিত চাকমা আরও বলেন, শাস্ত্র জ্ঞান অর্জনই শিক্ষার লক্ষ্য নয়। শিক্ষার মাধ্যমে মনের জানালা খোলা এবং বিকশিত করাই শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর উপদেশ দিয়ে তিনি বলেন, সমাবর্তন জ্ঞান চর্চার সমাপ্তি নয়, এটা একটা মাইলফলক। তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত জ্ঞান সৎকাজে লাগালে জ্ঞান আরও বিকশিত হবে। আপনারা মেধাবী, আপনাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল। আপনাদের মেধা দিয়ে চরিত্র দিয়ে মানব জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসবেন। ঢাবি থেকে ডিগ্রী অর্জন করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এই ডিগ্রী বা মেধাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় তার ওপর নির্ভর করে আপনাদের সফলতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, মার্চ মাস এলেই আমরা গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ফিরে যায়। ফরাসী দার্শনিক আঁর্দ্রে মার্লোর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় নিয়ে করা মন্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় পৃথিবীর একমাত্র বিশ^বিদ্যালয় যেখানে মৃত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা জীবিত ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক বেশি। উপাচার্য বলেন, বর্তমান শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। এই লক্ষ্য অর্জনে বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে জ্ঞানভিত্তিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ সময় তিনি বলেন, শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে, শিক্ষার্থীদের কাছে মানুষের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন করতে গবেষণা নিবিড় কেন্দ্রিক বিশ^বিদ্যালয় গড়ে তোলা সময়ের দাবি। ঢাবি সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরিন আহমাদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। মঞ্চে ছিলেন সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আখতারুজ্জামান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীনসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ। এর আগে বেলা এগারো ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আচার্য কার্জন হলের সামনে থেকে শোভাযাত্রা করে সমাবর্তনস্থলে উপস্থিত হন। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু ও শেষ হয়। এছাড়া ছিল ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ এবং নৃত্যকলা বিভাগের আয়োজনে নৃত্য পরিবেশিত হয়। কালো গাউন আর মাথায় ক্যাপ পরে সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন সমাবর্তনপ্রার্থীরা। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস জীবনের শেষ দিনের এই স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য অনেককে ফ্রেমবন্দী হতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোহতাসিম বিল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, দেখতে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবুও কেন যেন মনে হচ্ছে মাত্র কিছু দিন আগে আসছি ক্যাম্পাসে। তাই দিনটিকে স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় করে রাখতে গত তিনদিনে কয়েকশ ছবি তুলেছি।
×