ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্জয়ের বায়োপিক ‘দত্ত’-এর কয়েকটি অজানা তথ্য

প্রকাশিত: ২০:২৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সঞ্জয়ের বায়োপিক ‘দত্ত’-এর কয়েকটি অজানা তথ্য

অনলাইন ডেস্ক ॥ ২০১৬-য় মুক্তি পেয়েছে বেশ কয়েকটি বায়োপিক। সব ক’টিই ভালই ব্যবসা করেছে। লক্ষ্মীও এনেছে ভরপুর। এ বছরও মুক্তির অপেক্ষায় আরও কয়েকটি। সঞ্জয় লীলা ভংসালীর ‘পদ্মাবতী’ থেকে ‘আবদুল কালাম’— সব নিয়েই দর্শকদের উন্মাদনা রয়েছে। এর মধ্যেই নজরে রয়েছে ‘দত্ত’। রাজকুমার হিরানীর ওই ছবিতে সঞ্জয় দত্তের জীবনকাহিনি ফুটে উঠবে। সিলভার স্ক্রিনে জীবন্ত হয়ে উঠবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। ‘খলনায়ক’ সঞ্জুবাবার ভূমিকায় তাক লাগাতে নিজের ওজনও বাড়িয়ে ফেলেছেন রণবীর কপূর। সঞ্জয়ের বাবা সুনীল দত্তের চরিত্রে দেখা যাবে পরেশ রাওয়ালকে এবং মা নার্গিসের ভূমিকায় অভিনয় করবেন মনীষা কৈরালা। অভিনয়ে রয়েছেন দিয়া মির্জাও। এ সব তথ্য ইতিমধ্যে জানা। আর যা জানা নয়? ‘দত্ত’ ছবির অজানা কিছু তথ্য নিয়েই এই গ্যালারি। সঞ্জয় দত্তের বাবা-মায়ের গল্প, প্রথম সাক্ষাত্, তাঁদের বিয়ে: সঞ্জয়ের জীবনে ঢুকে পড়ার আগে, তাঁর বাবা সুনীল দত্ত এবং মা নার্গিস দত্তের গল্পটা জানাটা জরুরি বলে মনে করেছেন রাজকুমার হিরানী। মেহবুব খানের ছবি ‘মাদার ইন্ডিয়া’তে দু’জনেই প্রথম বার একসঙ্গে কাজ করেন। কী করে সিনেমার সেটে সুনীল দত্ত রিয়েল লাইফ হিরো হয়ে নার্গিসকে ভয়াবহ আগুনের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন, তাও দেখা যাবে ছবিতে। শেষমেশ তাঁদের বিয়ে। সুনীল এক প্রকার পারিবারিক যুদ্ধ করেই মুসলিম নার্গিসকে বিয়ে করেন। সঞ্জয়ের শৈশব এবং তাঁর বড় হয়ে ওঠা: ছোটবেলাটা কেমন ছিল স্টারকিড সঞ্জয়ের? পরিবারের বড় ছেলে সঞ্জয়ের সঙ্গে তাঁর দুই বোন নম্রতা ও প্রিয়া দত্তের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন? স্কুল জীবন থেকে বোর্ডিং, তার পরে কলেজ— সবটাই জায়গা পেয়েছে এই বায়োপিকে। বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক: সঞ্জয়ের সেলিব্রিটি ‘বাবা-মা’ কেমন ছিলেন? সঞ্জয় মায়েরই বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এবং আদুরেও বটে।বাবা সুনীল শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকতেন। বাড়িতে থাকতেন খুব কম সময়। অন্য দিকে, নার্গিস বলিউডের জগত্ ছেড়েই দিয়েছিলেন সঞ্জয়ের জন্মের পর। তবে, সঞ্জয় যে একেবারেই তাঁর বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন তাও নয়। বায়োপিকে বাবা মায়ের সঙ্গে সঞ্জয়ের সম্পর্কের সব দিকই মাথায় রেখেছেন পরিচালক। তাঁর প্রথম ছবি: সাল ১৯৮১। সিনেমার নাম ‘রকি’। সঞ্জয়ের বয়স তখন ২৩। প্রথম আত্মপ্রকাশ অভিনেতা হিসাবে। তবে অনেকেই জানেন না ঠিক ১০ বছর আগে ১৯৭১-এ সঞ্জয়কে প্রথম দেখা যায় বাবা সুনীল দত্তের ছবি ‘রেশমা অউর শেরা’তে। একটি কাওয়ালি গানের এক দৃশ্যে দেখা গিয়েছিল ছোট্ট সঞ্জয়কে। ‘রকি’ সিনেমা হিট করেছিল বটে। কিন্তু, তার প্রিমিয়ারের ঠিক ৪ দিন আগেই মারা গিয়েছিলেন সঞ্জয়ের মা নার্গিস। নার্গিসের মৃত্যু: তাঁর জীবনে দাগ কেটেছিল মায়ের মৃত্যু। ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গিয়েছিলেন নার্গিস। দেখে যেতে পারেননি ছেলের প্রথম ছবি। স্বপ্ন দেখতেন, ছেলেকে সিলভার স্ক্রিনে দেখবেন। তা আর হয়ে ওঠেনি। যথাসাধ্য চেষ্টাও করেছিলেন সুনীল-সঞ্জয়। তবে দু’জনেই বিফল হয়েছিলেন। কম বয়সে মাকে হারানোটা সঞ্জয়ের কাছে ছিল যথেষ্ট মর্মান্তিক। মাদকাসক্ত সঞ্জয় এবং রিহ্যাব: সঞ্জয়ের মা তখন চিকিত্সাধীন। সে সময়েই সঞ্জয় কুসঙ্গে পড়েন। মায়ের ম়়ৃত্যুর পর তাঁর মাদকাসক্তি যেন বেড়ে যায়। যা উপার্জন করতেন সবই খরচা হয়ে যেত মাদকে। এমনকী, নিজের জুতোর ভিতরে রেখে নাকি পাচার করতেন মাদক। রিহ্যাবে থাকার সময়ের ঘটনাও থাকছে ছবিতে। এই সময়ে তাঁর সঙ্গে বাইরের জগতের কোনও যোগাযোগও ছিল না। অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকে তাঁর বেশ কয়েকটি সিনেমা। কামব্যাক ও স্টারডম: ‘রকি’র পর সঞ্জয় দত্ত ‘বেকারার’, ‘জনি আই লাভ ইউ’, ‘ম্যায় আওয়ারা হুঁ’, ‘দো দিলও কি দাস্তাম’-এর মতো বেশ কয়েকটি ছবিতে কাজ করেন। তবে সে সব সিনেমা হিট করেনি। ছবির সমালোচকেরা তাঁকে বলতেন ‘উ়ডেন অ্যাক্টর’। ১৯৮৬ সালে মহেশ ভট্টের ছবি ‘নাম’-এ মহেশের শ্যালক কুমার গৌরবের সঙ্গে অভিনয় করেন সঞ্জয় দত্ত। ‘নাম’ সে সময়ে বেশ সাড়া ফেলেছিল। সঞ্জয়ের অভিনয়ও তখন বেশ পরিণত। তার পরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। পর পরই বেশ কিছু বড় হিট দিতে থাকে তাঁর অভিনীত পরের সিনেমাগুলো। ঞ্জয়ের তিন-তিন বার বিয়ে: শিরোনামে ছিলেন তিনি, তিন তিনটি বিয়ে করে! সহ-অভিনেত্রীদের সঙ্গে একের পর এক সম্পর্ক। টিনা মুনিম থেকে মাধুরী দিক্ষিত, বিত‌র্ক কম হয়নি সঞ্জয়কে নিয়ে। ১৯৮৭ সালে তাঁর প্রথম বিয়ে হয় রিচা শর্মার সঙ্গে। মেয়েও হয়, ত্রিশলা দত্ত। রিচা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১৯৯৬তে। তার পরে ১৯৯৮তে দ্বিতীয় বিয়ে করেন রিয়া পিল্লাইকে। সাত বছর একসঙ্গে থাকার পর বিচ্ছেদ ঘটে সম্পর্কের। ২০০৮-এ সঞ্জয় বিয়ে করেন মান্যতাকে। মান্যতা এখন যমজ সন্তানের মা। শাহরণ ও ইকারা। সঞ্জয়ের এ হেন বৈবাহিক জীবনের বিতর্কিত অধ্যায়ের অনেক অংশই থাকবে সিনেমাতে। তাঁর অপরাধ জীবন ও বিচারপর্ব: ১৯৯৩। মুম্বই বিস্ফোরণের সময় অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগ ওঠে অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের বিরুদ্ধে। হাজতবাস করতে হয় এক বছরেরও উপর। সে সময়েই মুক্তি পায় সঞ্জয়ের আর একটি সিনেমা ‘খলনায়ক’ যা বাড়িয়ে দেয় দর্শকের উন্মাদনা, তবে অন্য দিকে আটকে যায় সে সময়ের তাঁর অভিনীত বহু সিনেমা। পরের দিকে তিনি জামিনে ছাড়া পান। তবে মামলা চলতে থাকে। চলতে থাকে কোর্টে হাজিরাও। সিনেমা নিয়েও ব্যস্ত হতে হয় সঞ্জয়কে। বক্স অফিস হিটও হয় সেই সিনেমাগুলো। সে সময়ের টানাপড়েন, ব্যর্থতা নিয়ে সঞ্জয়ের জীবন ফুটে উঠবে ‘দত্ত’তে। হাজতবাস এবং মুক্তি: বাবা সুনীল দত্ত মারা যান ২০০৫-এ। আবার অসহায় বোধ করেন সঞ্জয়। ২০১৩তে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়। আবার হাজতবাস হয় সঞ্জয়ের। ঠাঁই হয় পুণের একটি জেলে। তবে তত দিনে সব ক’টি সিনেমাই শেষ করে ফেলেছিলেন সঞ্জয়। ২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে তাঁর জেলের মেয়াদ শেষ হয়। ২৩ বছরের ধকল কাটিয়ে মুক্তি পান সঞ্জুবাবা। তাঁর দেখা জেল কুঠুরি, তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলোও যেমন রয়েছে তেমনই সেই অন্ধকার জীবন থেকে বেরিয়ে তাঁর দেখা খোলা আকাশের গল্পও রয়েছে এই ছবিতে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×