অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নগদে লভ্যাংশ দিয়ে মূলধন হারাচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। যথাযথভাবে খেলাপি ঋণ নবায়ন হচ্ছে না। এতে বাড়ছে মুনাফা। আর এ মুনাফার ওপর ভর করেই নগদে লভ্যাংশ দেয়া হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নগদে লভ্যাংশ দেয়ার অনুমোদন কোন ক্রমেই ঠিক হবে না। তবে, বোনাস শেয়ার দেয়ার অনুমোদন দিলে একদিকে ব্যাংকগুলোর মূলধন শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয় করে নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে ব্যাংকগুলো। এতে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যাবে। তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো শতকরা ১৫ ভাগ বোনাস শেয়ার দিলে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার মূলধন বেড়ে যাবে ব্যাংকগুলোর।
জানা গেছে, আইনের বাধ্যবাধকতায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছে না। ফলে নীতিমালা শিথিল করেও টাকার প্রবাহ কাক্সিক্ষত হারে বাড়ছে না পুঁজিবাজারে। বাজারে নতুন বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ করার সুযোগ দিতে হবে। আর এ জন্য ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ানো জরুরী হয়ে পড়েছে। এ জন্য বার্ষিক মুনাফা নগদে না দিয়ে বোনাস শেয়ার দিলে মূলধন বেড়ে যাবে।
জানা গেছে, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনানুযায়ী, আইনের বাধ্যবাধকতায় ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ নামিয়ে না আনা পর্যন্ত ব্যাংকগুলো নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছে না। এ কারণে বেশিরভাগ ব্যাংক ও মার্চেন্ট ব্যাংক তাদের আগের কেনা শেয়ার সমন্বয় করতে না পেরে লোকসানের খাতা থেকে বের হতে পারছে না। এ লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেতে এবং বাজারে নতুন বিনিয়োগ করতে ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এ জন্যই নগদে লভ্যাংশ দেয়ার পরিবর্তে বোনাস শেয়ার দেয়ার ওপর তাগিদ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, তার ব্যাংকের ওপর পরিচালকদের বোনাস শেয়ারের পরিবর্তে নগদে লভ্যাংশ দেয়ার চাপ রয়েছে। কারণ, পরিচালকরা পূর্ব অনুমোদন ব্যতীত তাদের শেয়ার বিক্রি করতে পারেন না। কিন্তু নগদে লভ্যাংশ দিলে সরাসরি সুবিধাভোগী হন তারা। এ কারণে পরিচালকরা নগদে লভ্যাংশ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অনেকেই এমডির ওপরও চাপ দিচ্ছেন। ওই এমডি জানিয়েছেন, যথাযথ প্রভিশন সংরক্ষণ না করে বেশিরভাগ ব্যাংকই খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছেন। ফলে নগদে লভ্যাংশ দিলে ব্যাংকের মূলধনের ওপরই চাপ বাড়বে।
তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো নগদে লভ্যাংশ দেয়ার পরিবর্তে বোনাস শেয়ার দিলে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার অনুমোদন কোনভাবেই ঠিক হবে না। কারণ, ব্যাংকগুলো সঠিক উপায়ে খেলাপি ঋণ নবায়ন করছে না। এর ফলে যথাযথভাবে প্রভিশন সংরক্ষণ করছে না।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: