ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয় সরকারের ১১৫তম জন্মজয়ন্তী আজ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিজয় সরকারের ১১৫তম জন্মজয়ন্তী আজ

রিফাত-বিন-ত্বহা, নড়াইল ॥ ‘এই পৃথিবী যেমন আছে, তেমনিই ঠিক রবে, সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে’। এই গানের রচয়িতা অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা চারণকবি বিজয় সরকারের ১১৫তম জন্মজয়ন্তী আজ। বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের আজকের দিনে নড়াইলের ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মা হিমালয়া দেবী। বিজয় সরকারের দুই স্ত্রী-বীণাপানি ও প্রমোদা অধিকারীর কেউই বেঁচে নেই। সন্তানদের মধ্যে কাজল অধিকারী ও বাদল অধিকারী এবং মেয়ে বুলবুলি অধিকারী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। এবার কণ্ঠযোদ্ধা হিসেবে বিজয় সরকারকে স্বাধীনতা পদক দেয়ার দাবি উঠেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বিজয় সরকার কবিগান গেয়ে যে টাকা উর্পাজন করতেন, তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করতেন। তাই কণ্ঠযোদ্ধা হিসেবে বিজয় সরকারকে স্বাধীনতা পদক দেয়ার দাবিসহ জাতীয় চারণকবির স্বীকৃতি প্রদান, বিজয় সরকারের নামে নড়াইলে ফোকলোর ইনস্টিটিউট নির্মাণ এবং পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা চারণকবি বিজয় সরকারের বসতভিটা এখন সংরক্ষণের অভাবে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। ২০০৯ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বিজয় সরকারের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদিতে ভবন ও বিজয় মঞ্চ নির্মিত হলেও অযতœ-অবহেলায় তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে ময়লা-অবর্জনার স্তূপ জমেছে। সংগ্রহশালা নির্মাণের দাবিও উপেক্ষিত। তার বাড়িটি দেখভালের জন্য নেই কোন লোকবল। মাত্র দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার কারণে দর্শণার্থীরা পড়েন বিপাকে। গ্রাম্য মেঠো পথের মতোই রয়ে গেছে রাস্তাটি। এদিকে, ঘন ঘাস ও বনজঙ্গলে ছেয়ে গেছে বিজয় সরকারের বসতভিটা। দেখভালের জন্য নেই কোন লোকবল। বিজয় সরকারের আত্মীয় বিভাষ চন্দ্র সিকদার জনকণ্ঠকে বলেন, কবির বসতভিটা এলাকায় বর্তমানে আমার পরিবারই বসবাস করছে। অন্যরা ডুমদি ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছেন অনেক আগেই। কবির বসতভিটা এবং বাসভবন দেখার কেউ নেই। থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। রয়েছে টয়লেট ও পানির সমস্যা। তাই দেশ-বিদেশের দর্শণার্থীরা হতাশ হয়ে ফিরে যান। চারণকবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম আকরাম শাহীদ চুন্নু জনকণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বিজয় সরকারের অবদান রয়েছে। তিনি কবিগান গেয়ে যে টাকা উর্পাজন করতেন, তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করতেন। তাই কণ্ঠযোদ্ধা হিসেবে বিজয় সরকারকে স্বাধীনতা পদক দেয়ার দাবিসহ জাতীয় চারণকবির স্বীকৃতি প্রদান, বিজয় সরকারের নামে নড়াইলে ফোকলোর ইনস্টিটিউট নির্মাণ এবং পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু বলেন, লোককবি বিজয় সরকারের স্মৃতিধন্য ডুমদি গ্রামে স্মৃতিসংগ্রহশালা নির্মাণসহ তার বসতভিটা রক্ষণাবেক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। নড়াইল জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ জনকণ্ঠকে বলেন, বিজয় সরকারের বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণসহ তার স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বিজয় সরকারের অবদান রয়েছে। তাই কণ্ঠযোদ্ধা হিসেবে বিজয় সরকারকে স্বাধীনতা পদকের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রতিকৃতি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বিজয় সরকারের বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তাটিও পাকাকরণের ব্যবস্থা করা হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা বিজয় সরকার বার্ধ্যকজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের ২ ডিসেম্বর ভারতের হাওড়ার বেলুডে পরলোকগমন করেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়। একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন তিনি। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য সরকার উপাধি লাভ করেন। ১৮০০ বেশি গান লিখেছেন। সুরের মূর্ছনায় আজো বেঁচে আছেন হাজারো মানুষের হৃদয়ে। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন বিজয় সরকার। এদিকে, কণ্ঠযোদ্ধা হিসেবে বিজয় সরকারকে ‘স্বাধীনতা পদক’,পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা এবং কবিকণ্ঠের গান পা-ুলিপি আকারে সংরক্ষণসহ বিজয় সরকারের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী তার জন্মভূমি নড়াইলের ডুমদিতে পালনের জোর দাবি জানিয়েছেন বিজয়ভক্তরা। এ বছর বিজয় সরকারের জন্মদিন উপলক্ষে কবির জন্মস্থান নড়াইলের ডুমদিতে আগামী ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
×