ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি বিষয়ে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে এ্যাটর্নি জেনারেল

প্রয়োজন নেই, বলেছেন রাষ্ট্রপতি, এখন এটা তাঁর কাছেই পাঠাতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রয়োজন নেই, বলেছেন রাষ্ট্রপতি, এখন এটা তাঁর কাছেই পাঠাতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নে কেন সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে তার লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। আজ রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলমকে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ বিষয়ে আপীল বিভাগে আজ আবারও শুনানির দিন ঠিক করে আদেশ দেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আপীল বিভাগের আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এক প্রশ্নর জবাবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই। এটি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটির বিশেষ অংশ সংশোধন করে পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে’। ‘আমি আদালতের কাছে সে কথাটিই বলেছি, এটি পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আদালত আমাকে লিখিতভাবে উল্লেখ করে দরখাস্ত করতে বলেছেন। আজ সেটি দেয়া হবে’। তিনি বলেন, ‘রুলস ফ্রেইম করবেন তো রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি একবার অপারগতা প্রকাশ করেছেন বা এটার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে জানিয়েছেন। কাজেই ফের যদি এটি করতেই হয়, তাহলে সেটি সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির কাছেই পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো উচিত। সেটিই করা হয়েছে’। বিষয়টি নিয়ে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটা তো আমার পক্ষে বলা সম্ভব না। তার কারণ, যে রুলস সুপ্রীমকোর্ট চেয়েছিলেন, সেটির কোন কোন জায়গায় আইন মন্ত্রণালয় বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার খর্ব হয়। এটি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে’। তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে জানানো হয়েছে, এখন আর কোনো অসুবিধা নেই। এটি সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করা হবে। তবে পুনর্বিবেচনার বিষয় যেহেতু, গেজেট প্রকাশে একটু সময় লাগতে পারে’। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর হাজির করতে এ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশ দেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। এর মধ্যে ১২ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত দেন রাষ্ট্রপতি। পরে অবশ্য দুই সচিব আদালতে হাজির হওয়ার পর গেজেট প্রকাশে সময় দেন আদালত। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। আপীল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রীমকোর্টে পাঠায়। গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপীল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা-সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালের সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। এরপরই সুপ্রীমকোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। একইসঙ্গে ৬ নবেম্বরের মধ্যে তা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। গত বছরের ৬ নবেম্ব^র সে অনুসারে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি জানাতে পারেননি। পরে আপীল বিভাগ বিধিমালা চূড়ান্তের বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে এ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়ে ৭ নবেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেন। ওইদিন এ্যাটর্নি জেনারেল আট সপ্তাহের সময়ের আবেদন জমা দেন। যাতে বিধিমালাটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন তিনি। সর্বোচ্চ আদালত ২৪ নবেম্বর পর্যন্ত সময় দেন। গত বছরের ২৪ নবেম্বর এ্যাটর্নি জেনারেল গেজেট প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় চাইলে আপীল বিভাগ তা মঞ্জুর করেন। পরে ১ ডিসেম্বর আইনমন্ত্রী ফিলিপাইনে রয়েছেন বলে ফের এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়। সময় মঞ্জুরের পরও ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে আরও কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নেন রাষ্ট্রপক্ষ।
×