ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক

থামছে না হাতির তাণ্ডব

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

থামছে না হাতির তাণ্ডব

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ রৌমারী, রাজীবপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় বুনো হাতির তা-ব বেড়েই চলেছে। গত কয়েক মাস থেকে ভারতের গারো হিলসহ নিকটবর্তী পাহাড় থেকে বুনো হাতির দল সন্ধ্যার পর কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। রাতভর হাতির দল সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলগুলোতে ফসলের পাশাপাশি ঘরবাড়ির ক্ষতি সাধন করে ভোরের দিকে আবার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চরম আতঙ্কের মধ্যে রাত পার করছে সীমান্ত এলাকার মানুষজন। রাতভর আগুন জ্বালিয়ে ও ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়ানোর কাজ করছে গ্রামবাসী। জানা গেছে, রৌমারী থেকে দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটারব্যাপী কাঁটাতার রয়েছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ১০৬৭ থেকে ১০৭৪ সীমান্ত দিয়ে বুনো হাতিগুলো বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে। এর মধ্যে পিলার ১০৭১-এর ২৩ এস ও ১০৭৪ পিলার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার কাঁটাতার না থাকায় ক্ষুধার্ত হাতি সহজেই সমতল ভূমিতে নেমে আসে। এলাকাবাসী জানায়, গত দুই মাস ধরে চলছে বুনো হাতির তা-ব। এতে কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজীবপুর উপজেলার শতাধিক কৃষকের রোপা বোরোক্ষেত ১শ’ একর, গম ১৫ একর, কলাবাগান দুই একর, ভুট্টাক্ষেত ১০ একর, আখ ১৫ একরসহ প্রায় দেড় শ’ একর ফসলি জমি নষ্ট করে। এছাড়াও ভাংচুর করেছে অর্ধশতাধিক ঘর, ২৫টি স্যালো মেশিন, পাঁচটি নলকূপসহ রৌমারী উপজেলার চরবড়াইবাড়ি গ্রামের হযরত আলী, সিরাজুল, রফিক, শাহাজামাল, শাখাওয়াত হোসেন ও ফাতেমা বেগমসহ বেশকিছু ঘরবাড়িতে আক্রমণ চালায়। এ সময় ঘরে রক্ষিত খাবারের জিনিস ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে। বিএসএফ সদস্যরা কাঁটাতারের গেট খুলে লাইট জ্বালিয়ে বুনো হাতির দলকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয়ায় হাতি সহজেই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। রৌমারীর যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, ভারতের মাইনকারচর থানার কালাইরচর সীমান্ত দিয়ে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর, রৌমারী ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে রাতেই বুনো হাতি নেমে আসে। কয়েক দিন পরপর এ ঘটনা ঘটছে। আমরা সরকারের নিকট আবেদন জানাই, এর যেন একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সংসদ সদস্য রুহুল আমিন জানান, ভারতীয় হাতি দলবেঁধে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এ অঞ্চলের দরিদ্র মানুষকে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে। এ বিষয়টি তিনি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করবেন এবং দু’দেশের মধ্যে আলোচনা করে এর সমাধান করার চেষ্টা করবেন। ৩৫-বিজিবি পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, উত্তেজিত হাতির দলকে ঠেকাতে না পারায় এ ঘটনা ঘটছে। বিএসএফ তাদের সীমান্তে সার্চলাইট জ্বালিয়ে দেয়ায় হাতিগুলো ফেরত যেতে পারে না। এতে আমাদের লোকজনের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। তিনি আরও বলেন, হাতির নিজস্ব চলাচলকে কেউ আটকাতে পারে না। এ ব্যাপারে উভয় দেশের পরিবেশবিদদের আলোচনা করা দরকার, যাতে ক্ষতি কমানো যায়।
×