ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

কীটনাশকে কৃষকের সর্বনাশ

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কীটনাশকে কৃষকের সর্বনাশ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ ভালো উৎপাদনের আশায় ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করে এবার মাথায় হাত পড়েছে রাজশাহীর কয়েকশ প্রান্তিক আলু চাষির। কীটনাশকের প্রভাবে এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে জেলার মোহনপুর, পবা ও তানোর উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠের আলু। ফলে চরম দুর্যোগের মুখে পড়েছেন চাষিরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আলু ক্ষেতে ব্লেসিং এগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কার্বন্ডাজিম গ্রুপের ‘নিউজাম’ কীটনাশক প্রয়োগে তিনশ বিঘা আলুর ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় দুই কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়েছে প্রান্তিক চাষিরা। আলু ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়া চাষিরা ইতোমধ্যেই ক্ষতিপূরণ চেয়ে মোহনপুর উপজেলা প্রশাসন ও রাজশাহী জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদনও করেছে। পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির এই ব্যান্ডের ছত্রাকনাশক জব্দ এবং বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মুনজুরে মাওলা। কৃষকদের আবেদন বলা হয়েছে, জেলার পবা উপজেলার মাধবপুর, মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি, গোদাগাড়ি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে, তানোর উপজেলার মোহাম্মাদপুর ও কুসুমপুকুর, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর বটতলী এলাকায় ভুক্তভোগীরা জমি লিজ নিয়ে আলুর আবাদ করে থাকেন। এবারও তারা ওইসব এলাকায় আলু চাষ করেছেন। ক্ষেত থেকে বেশ কয়েক দিন আগে আলু গাছের দু-একটি পাতায় ফসকা পড়া পচন রোগ দেখা দিলে প্রতিবছরের মতো মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি বাজারের মেসার্স আল্লাহর দান ট্রেডার্স থেকে কোম্পানির প্রতিনিধি সেলিম রেজার সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিনিধির পরামর্শে তাদের দোকান থেকে ছত্রাকনাশক নিউজাম (কার্বন্ডাজিম-যার রেজিনং এপি-২২৪৪, ব্যাচ নং ১৩১২১৬০৫) কিনে দুই সপ্তাহ আগে ক্ষেতে স্প্রে করেন। নিউজাম স্প্রে করার পর থেকে গাছ এবং পাতার রং হলুদ হয়ে যায়। পাশাপাশি আলু তুলে দেখা যায়, প্রতিটি আলু পাথরের মতো শক্ত, কোনোটা ফেটে গেছে এবং আলুতে গাছ গজিয়েছে। ক্ষেতগুলো পরিদর্শন করে সত্যতাও পেয়েছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় কীটনাশক ডিলার মোজ্জাফর শেখ ও কোম্পানির প্রতিনিধি সেলিম রেজা অবহিত করলে তারা কোম্পানির কথা বলে কালক্ষেপণ শুরু করেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোহনপুরের মৌগাছি গ্রামের মাসুদ রানা ও রেজাউল, মাধবপুর গ্রামের মুনতাজ আলী বলেন, যেসব ক্ষেতে ‘নিউজাম’ স্প্রে করা হয়েছে তার সবগুলো একই দশা হয়েছে। তারা এখন চোখে সরষের ফুল দেখছেন। কোম্পানি খেসারত না দিলে অনেককে পথে বসতে হবে বলে জানান তারা। এদিকে হিমাগার মলিকরাও এসব আলু হিমাগারে না নেয়ার হুমকি দিয়েছে। আলু ক্ষেতের এমন অবস্থা স্বীকার করে স্থানীয় ডিলার মোজ্জাফর শেখ বলেন, তিনি দীর্ঘদিন থেকে ওই কোম্পানির ছত্রাক ও কীটনাশক বিক্রি করে আসছেন। হঠাৎ করে নিউজাম (কার্বন্ডাজিম-যার রেজিনং এপি-২২৪৪, ব্যাচ নং ১৩১২১৬০৫) এই লটের প্রায় ৫০ কার্টনে এমন অবস্থা হয়েছে। কোম্পানির প্রতিনিধিরাও সরজমিনে ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, ওই লটের মাত্র ১৫-১৬ কার্টন আধা কেজির প্যাকেট চাষিদের দেয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে ক্ষেতের বিরূপ অবস্থা দেখে কৃষি কর্মকর্তারা এই ছত্রাকনাশক বিক্রিতে নিষেধ করেছেন। এরপর থেকে তিনি আর ওই নিউজাম কোনো চাষিকে দিচ্ছেন না। ওই ছত্রাকনাশক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কয়েকটি প্যাকেট কৃষি কর্মকর্তারা নিয়ে গেছেন বলে জানান ওই ডিলার। এ বিষয়ে কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে বলেন, ক্ষেত পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ওই ছত্রাকনাশক পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। জেলার পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মুনজুরে মাওলা বলেন, ওই নিউজাম স্প্রে করাতে কৃষকের আলু ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোম্পানির এই ব্যান্ডের ছত্রাকনাশক জব্দ এবং বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
×