ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় সাক্ষী নৃপেন কৃষ্ণের জবানবন্দী

হবিগঞ্জের লিয়াকত আলীরা গ্রামের অনেক লোককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

হবিগঞ্জের লিয়াকত আলীরা গ্রামের অনেক লোককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে হবিগঞ্জের লাখাইয়ের রাজাকার কমান্ডার লিয়াকত আলীসহ দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় সাক্ষী নৃপেন কৃষ্ণ রায় জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, রাজাকার, আলবদর ও পাকিস্তান আর্মিরা গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে লোকজনদের ধরে আনে। এরপর রাজাকার লিয়াকত আলী ও আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী ও অন্যরা তাদের ওপর গুলি করে। এতে অনেক মানুষ হতাহত হয়। তিনটি গ্রামের ১১৯টি লাশ সংকার করতে না পেরে হাওরে ভাসিয়ে দেই। সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে আজ সোমবার আসামিপক্ষের আইনজীবীকে জেরা করার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম নৃপেন কৃষ্ণ রায়। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৪/৬৫ বছর। আমার ঠিকানা- গ্রাম- কৃষ্ণপুর (গোকুলনগর পাড়া), থানা- লাখাই, জেলা হবিগঞ্জ। আমি ১৯৭২ সালে এসএসসি পাস করেছি। আমি কমার্শিয়াল আর্টিস্ট ছিলাম। বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৯.২০ বছর। সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর আনুমানিক ৫টা বা সাড়ে ৫টার দিকে আমি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার ঠাকুরমা বলেন, পাঞ্জাবি ও রাজাকাররা এসেছে। আমাদের গ্রাম আক্রমণ করেছে। আমাদের কৃষ্ণপুর গ্রামের চতুর্দিকে তখন স্পিডবোট টহল দিচ্ছিল যাতে কেউ পালাতে না পারে। তখন আমাদের গ্রামের লোকজন চিৎকার করে পালানোর চেষ্টা করছিল। আমি রান্নাঘর থেকে দেখতে পাই, রাজাকার, আলবদর ও পাকিস্তান আর্মিরা আমাদের গ্রাম থেকে লোকজনদের ধরে আমাদের বাড়ির পাকা বাউন্ডারির ভেতরে ঘাটলার পাশে খালি জায়গায় জড়ো করছে। দুপুর একটার দিকে ঐ সকল রাজাকার ও আর্মিরা তাদের দক্ষিণ মুখ করে তিনটি সারিতে দাঁড় করায়। এদের মধ্যে লিয়াকত আলী, আলবদর কমান্ডার আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী ও রাজাকার লাল খাকে (বর্তমানে মৃত) চিনতে পারি। সাক্ষী আরও বলেন, রাজাকার ও আলবদরের দল আমাদের বাড়িতে ঢুকে ৪৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা পয়সা নিয়ে যায়। আহত অবস্থায় বেঁচে যাওয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকা লোকজনদের মধ্যে আমাদের গ্রামের হরিদাস রায়, নবদ্বীপ রায়, ভূষণ সূত্রধর, কৃষ্ণ কুমার রায়, বনবিহারী রায় এবং সুকুমার সূত্রধরকে আমরা রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করি। এদের মধ্যে হরিদাস রায় ও সুকুমার সূত্রধর বেঁচে আছে। হরিদাস রায় নিজ গ্রামে এবং সুকুমার সূত্রধর ভারতে রয়েছে। অন্যরা জীবিত নেই।
×