ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাহী আদেশে ট্রাম্পের স্বাক্ষর ॥ সাত মুসলিম দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের প্রবেশ স্থগিত

সিরীয় শরণার্থী নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

সিরীয় শরণার্থী নিষিদ্ধ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরীয় শরণার্থীদের এবং অন্য ছয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চরমপন্থী ইসলামী সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে রাখতে নতুন ভেটিং (পরীক্ষা করে দেখা) ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য তিনি ওই আদেশ জারি করেছেন। তিনি বলেন, আমরা তাদের এখানে চাই না। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও বিবিসির। বড় ধরনের ওই আদেশে সব ধরনের শরণার্থী গ্রহণ চার মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। ছয়টি মুসলিমপ্রধান দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটক প্রবেশও তিন মাসের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। মানবাধিকার গোষ্ঠী ও বড় বড় রাজনৈতিক নেতা ওই পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন। পেন্টাগনে শুক্রবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে জেনারেল জেমস ম্যাটিসের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে সই দেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমি কেবল তাদেরই আমাদের দেশে গ্রহণ করতে চাই, যারা আমাদের দেশকে সমর্থন এবং আমাদের জনগণকে গভীরভাবে ভালবাসবে। নির্বাহী আদেশে সিরীয় শরণার্থীদের গ্রহণ অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন’ না ঘটা পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে; ব্যাপকতর শরণার্থী কর্মসূচী ইউএস রিফিউজি প্রোগ্রাম ১২০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। ইরাক, সিরিয়া ও ‘উদ্বেগজনক অঞ্চল’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে লোকজনের আগমন ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। এসব অঞ্চল বলতে ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনকে বোঝানো হয়েছে বলে জানা যায়। ওই আদেশে ধর্মীয় কারণে নির্যাতিতদের ভবিষ্যতে শরণার্থী হওয়ার আবেদন করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে গ্রহণ করা হবে এমন শরণার্থীর সংখ্যা ৫০ হাজারে সীমিত করে দেয়া হয়েছে। এটি প্রেসিডেন্ট ওবামা নির্ধারিত সর্বোচ্চ সংখ্যার চেয়ে অর্ধেকেরও কম। গত বাজেট বছরে যুক্তরাষ্ট্র ৮৪ হাজার ৯৯৫ শরণার্থী গ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে ১২ হাজার ৫৮৭ জন ছিল সিরীয়। আদেশে বলা হয়, যদিও শরণার্থী কর্মসূচী স্থগিত থাকবে, তবু যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় স্বার্থে ক্ষেত্রবিশেষে শরণার্থী গ্রহণ করতে পারে এবং সরকার ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত হচ্ছে এমন লোকজনের শরণার্থী হওয়ার আবেদনপত্র প্রক্রিয়াকরণ করে যাবে। তবে শর্ত থাকে যে, ধর্মটি সংশ্লিষ্ট দেশের সংখ্যালঘুদের হতে হবে। এতে বোঝা যায়, সরকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো থেকে খ্রীস্টানদের গ্রহণ করতে পারে। সিবিএস নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে ট্রাম্প বলেন, শরণার্থী মর্যাদার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে নির্যাতিত খ্রীস্টানদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা তাদের সাহায্য করতে যাচ্ছি, যাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ হচ্ছে। ট্রাম্পের নিজ দলের কেউ কেউ শরণার্থীবিষয়ক পদক্ষেপের প্রশংসা করলেও কোন কোন ডেমোক্র্যাট এর জোর সমালোচনা করেন। সিনেট মাইনরিটি লিডার চাকসুমার বলেন, অভিবাসী ও শরণার্থী গ্রহণ কেবল মানবিকই নয়, এটি দশকের পর দশক ধরে আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প ঘোষণা করেন, আমাদের সৈন্যরা বিদেশে যে হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করছে, আমরা যে ঠিক সেই হুমকিকেই আমাদের দেশে ঢুকতে দিচ্ছি না, সেটিই আমরা নিশ্চিত করতে চাই। প্রতি বছর আমেরিকায় কতসংখ্যক শরণার্থী গ্রহণ করা হবে, তা স্থির করার ক্ষমতা ট্রাম্পের রয়েছে। তিনি শরণার্থী গ্রহণ কর্মসূচী স্থগিত করতে পারেন। ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পরপর শরণার্থী আবেদন প্রক্রিয়াকরণ স্থগিত রাখা হয় এবং কয়েক মাস পর তা আবার শুরু হয়। আদেশে বলা হয়, সব অভিবাসন কর্মসূচীতে আবেদনকারীর সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখার সম্ভাবনার মূল্যায়ন করার মতো প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর কমলা হ্যারিস লিখেছেন, আদেশটি হলোকস্ট মেমোরিয়াল ডেতে সই করা হয়েছে। ভুল করবেন না, এটি এক মুসলিম নিষেধাজ্ঞা। তিনি বলেন, হলোকস্টের সময় আমরা এ্যান ফ্রাঙ্কের মতো শরণার্থীদের আমাদের দেশে ঢুকতে দিতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। আমরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে দিতে পারি না।
×