ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আয়কর পরিশোধ নিয়ে বিপিসি ও এনবিআর মুখোমুখি অবস্থানে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

আয়কর পরিশোধ নিয়ে বিপিসি ও এনবিআর মুখোমুখি অবস্থানে

রশিদ মামুন ॥ আয়কর পরিশোধ নিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এবং জাতীয় রাজস্ববোর্ড (এনবিআর) মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। রাজস্ববোর্ড বলছে নতুন নিয়মে বিপিসি তাদের লোকসান সমন্বয় করতে পারবে না। অন্যদিকে বিপিসি তাদের লোকসান সমন্বয়ের জন্য জ্বালানি বিভাগের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। জ্বালানি বিভাগ থেকে সম্প্রতি বিপিসির লোকসান সমন্বয়ের অনুরোধ জানিয়ে এনবিআরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বিপিসি এবং এনবিআর এর মতবিরোধের বিষয়টি উঠে আসে। জ্বালানি বিভাগ এবং এনবিআর সূত্র জানায়, বিপিসির কাছে এনবিআর সাত হাজার ৫১৬ কোটি টাকা কর দাবি করছে। কিন্তু বিপিসি বলছে ১৫ বছর ধরে লোকসান দেয়ার পর এখন তাদের পক্ষে বিপুল কর পরিশোধ সম্ভব নয়। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ৩৮ ধারায় বলা হয়েছে কোন করদাতার ব্যবসা বা পেশাগত লোকসান আয়ের বিপরীতে পরবর্তী অনধিক ছয় বছর পর্যন্ত সমন্বয় করা যাবে। কিন্তু এনবিআর গত বছর ১৮ আগস্ট জারি করা এক পরিপত্রে ৮২-এর (সি) ধারায় কিছু পরিবর্তন করেছে। যাতে পূর্বের লোকসান সমন্বয়ের সুযোগ রাখা হয়নি। ওই পরিপত্র জারির পর বিপিসির কাছে এনবিআর কর দাবি করছে। বিপিসি তাদের আইন উপদেষ্টার কাছে মতামত নিয়ে জ্বালানি বিভাগকে গত বছর ২৪ নবেম্বর জানায়, ৮২ (সি) ধারায় কিছু পরিবর্তন আনা হলেও ৩৮ ধারা বাতিল করা হয়নি। সঙ্গত কারণে বিপিসি এই সুবিধা ভোগ করতে পারে। এক্ষেত্রে বিপিসি লোকসান সমন্বয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে। গত ৮ জানুয়ারি বিপিসির পক্ষে জ্বালানি বিভাগ থেকে উপসচিব ফারজানা মমতাজ সই করা চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে কর আদায় না করার জন্য অনুরোধ করা হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, আয়কর অধ্যাদেশের ৩৮ ধারা বাতিল করা হয়নি বিধায় বিপিসিকে এই ধারায় সুযোগ দেয়া যেতে পারে। এজন্য চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট আয়কর অফিসকে নির্দেশনা দেয়ার বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানানো হয়। বিপিসি বলছে, ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত টানা ১৫ বছর বিপিসি লোকসান গুনেছে। বেশি দামে তেল কিনে কমদামে বিক্রি করায় সারাদেশের তেল বিতরণকারী কর্তৃপক্ষের এই লোকসান হয়। টানা ১৫ বছরে এই লোকসানের পরিমাণ ৩৩ হাজার ২৭৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। বিপিসির বিপুল লোকসানের পরও চট্টগ্রামের আয়কর অফিস বিপিসির কাছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা কর বাবদ আদায় করার উদ্যোগ নিয়েছে। মন্ত্রণালয় বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে বিপিসি লাভের মুখ দেখেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার পরেও বিপিসি দেশীয়বাজারে ওই অর্থে দাম কমায়নি। এরফলে বিপিসির তহবিলে বিপুল অর্থ জমা হয়েছে। সঙ্গত কারণে বিপিসিকে এখন আর লোকসানী প্রতিষ্ঠান বলা চলে না। তবে বিপিসি বলছে, তারা মাত্র দুই বছরের লাভের টাকা থেকে ৬ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বিপিসি। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালীর দেনা বাবদ তিন হাজার ৮৫ কোটি টাকা, পেট্রোবাংলার পাওনা এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা, ভ্যাটের ৬০৩ কোটি টাকা, ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল ইউনিট-২) জমি কেনা বাবদ ২৩৫ কোটি টাকা এবং লভ্যাংশ হিসেবে সরকারকে এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। জ্বালানি বিভাগ বলছে, বিপিসি বেশ কিছু নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরমধ্যে ইআরএল ইউনিট-২, ঢাকা-চট্টগ্রাম তেল পাইপ লাইন, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল নির্মাণ, ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত তেল পাইপ লাইন, পায়রা বন্দর এলাকায় একটি নতুন তেল পরিশোধনাগার নির্মাণের জন্য বিপিসির অর্থ সংস্থান করতে হচ্ছে। এখন কর পরিশোধ করতে হলে এসব প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে জ্বালানি বিভাগ থেকে কর আদায় না করার জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়েছে।
×