ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অধিকাংশ দল এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে

নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে শক্তিশালী ইসির তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে শক্তিশালী ইসির তাগিদ

শাহীন রহমান ॥ দল-মত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দলের একটাই চাওয়া- শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন। যার অধীনে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। যে নির্বাচন নিয়ে কোন মহল থেকে প্রশ্ন উঠবে না। কমিশনে যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন তারাও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, সৎ, নিরপেক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এমনই মতামত তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পক্ষ থেকে ইসি গঠনে ভিন্ন ভিন্ন মতামত তুলে ধরেন। তাদের মতামতে ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। রাষ্টপতির সঙ্গে আলোচনায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই মনে করছে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। এজন্য কমিশনে যারা নিয়োগ পাবেন তাদের সৎ, যোগ্য এবং সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। তারা মনে করছেন কমিশন শক্তিশালী হলে এবং নির্বাচন পরিচালনায় ইসি তার ক্ষমতা স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে পারলে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না। আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই বিদায় নিচ্ছে কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। তার আগে রাষ্ট্রপতিকে গঠন করতে হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। কমিশনের গঠন কাঠামো কেমন হবে তা আলোচনা করতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সবার সঙ্গে আলোচনায় গ্রহণযোগ্য মতামতের ভিত্তিতে নিয়োগ দেবেন নতুন নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন হয়েছে। এতে তারা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর বেশি জোর দেয়ার পাশাপাশি ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানিয়েছেন। তবে এখনও কিছু দলের সঙ্গে সংলাপ বাকি রয়েছে। সংলাপ শেষ হলে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবেন। দেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার একমাত্র রাষ্টপতির হাতে। রাজনৈতিক দলগুলো কেবল এ বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরতে পারেন। রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী যাকে যোগ্য মনে করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশন ও অন্য কমিশনার নিয়োগ দেবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানে নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন প্রণয়নের কথা বলা হলেও দেশ স্বাধীনের ৪৬ বছরে এ বিষয়ে কোন আইন প্রণয়ন হয়নি। এতদিন রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছানুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশন ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দিয়ে আসছেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে সব দলের মতামত নিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেয়া হয়। যদিও বর্তমান কমিশন নিয়োগের সময় কোন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠেনি। তবে পরবর্তীতে এ কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয় বিএনপির পক্ষ থেকে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়া বিএনপির আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে তাদের মতামতগুলো রাষ্ট্রপতিকে জানিয়ে দিয়েছেন। এসব রাজনৈতিক দলের পক্ষে থেকে বিভিন্ন প্রস্তাবনা রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া হলেও বিএনপি বাদে প্রায় সবাই নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন প্রণয়নের কথা গুরুত্বে সঙ্গে তুলে ধরেছেন। প্রয়োজনের অধ্যাদেশ জারি করে কমিশন গঠন করা যেতে পারে বলে মতামত দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপ্রতির সঙ্গে তাদের আলোচন ফলপ্রসূ হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তারা শুধু তাদের মতামত জানিয়েছেন। সবার আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি যেভাবে মনে করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ প্রদান করবেন। গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। প্রথমেই তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। বিএনপি অবশ্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় বসার আগেই দলীয় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ইসি গঠনে তাদের মতামত তুলে ধরে। পরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে। বিএনপির পক্ষ থেকে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায়। তবে বিএনপি ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের কথা না বললেও সব দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগের প্রস্তাব করেছে। এর আগে সার্চ কমিটির মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি বাছাই করার জন্য তারা রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানান। নির্বাচন কমিশন গঠনে বাছাই কমিটি গঠন ছাড়াই, নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও আইন সংশোধনের জন্য দলের পক্ষ থেকে ১৩ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এতে প্রছন্নভাবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের কথা উঠে এসেছে। নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বপালনের সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতা এনে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়। সংসদে প্রতিনিধিত্ব রয়েছে বা ইসির নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেই বাছাই কমিটি ও কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। যার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে জামায়াতে ইসলামের নাম উঠৈ এসেছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে জোটগতভাবে রাজনীতি করে আসছে। যদিও আদালতের আদেশে ইসির পক্ষ থেকে জাময়াতের নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অন্য দলগুলো আলোচনায় অংশ নিলেও জামায়াতকে এ আলোচনায় ডাকা হয়নি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসি গঠন নিয়ে আলোচনা শেষে বিএনপি মহসচিব সাংবাদিকদের বলেন, তাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা এ আলোচনাকে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে বলা হয় বিএনপি ইসি গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে যে প্রস্তাব দিয়েছে তা নির্বাচন কমিশন গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনাকালে দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতিকে চিঠির মাধ্যমে জানান, আমরা মনে করি আমাদের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। জাতির অভিভাবক হিসেবে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে আপনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন সে উদ্যোগ সফল হবে। গত ১১ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে এ বৈঠকে নেতৃত্বে দেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি ই-ভোটিংয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে ইসি গঠনে চারদফা সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাষ্ট্রপতিকে দলের পক্ষ থেকে ১১ দফা প্রস্তাবও দেয়া হয়। সেখানে নির্বাচনকালীন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি কেবল আবশ্যকীয় দৈনন্দিন কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথা বলা হয়। বৈঠকে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতিকে বলেন, রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি যেরূপ বিবেচনা করবেন, সেই প্রক্রিয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রদান করবেন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগের প্রতি আওয়ামী লীগের সার্বিক সমর্থন থাকবে। ভবিষ্যতে নির্বাচন নিয়ে কোন বিতর্ক হোক আওয়ামী লীগ তা চায় না। জনগণ যাকে চাইবে, তারা নির্বাচিত হয়ে সরকার পরিচালনা করবে, সেটাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা। পরে সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে সম্ভব হলে এখনই একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন অথবা অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে। সময়স্বল্পতার কারণে আগামী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সময় যাতে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়, সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে এখন থেকেই সেই উদ্যোগ গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমান বিরাজমান সকল বিধিবিধানের সঙ্গে জনমানুষের ভোটাধিকার অধিকতর সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং প্রবর্তন করা যায় উল্লেখ করেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি ইতোমধ্যে ২৩ রাজনৈদিক দলের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন করেছেন। নতুন করে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার জন্য চিঠি দিয়েছেন। ইসির নিবন্ধিত ৪০ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। কারণ এদিনেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য তিনজন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে বাকি অন্য জনের মেয়াদ। ফলে রাষ্ট্রপতিকে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন ইসি নিয়োগ শুরু করতে হবে। যারা ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন। তবে এখন পর্যন্ত যেসব রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছে তারা সবাই নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, সংবিধানের আলোকে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ইসি নিয়োগ দিতে হবে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও কমিশন গঠনে সংবিধান মেনে আইন প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে। তারা আগামী সংসদে এ বিষয়ে আইন তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে কমিশন গঠনে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের প্রস্তাব তাদের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া জাসদ, গণফোরাম, ন্যাপ, এলডিপি, ইসলামী ঐক্যজোট, বিএনএফ, তরিকত ফেডারেশন, বিজেপি, বাসদ, বিকল্পধারা, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য দলও আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে। ওয়ার্কার্স পার্টি কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পীকার, প্রধান বিচারপতি ও এ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করেছে। তবে বিএনপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকে আইনের কথা বলা না হলে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে কমিশনে নিয়োগ দেয়া এবং সার্চ কমিটির মাধ্যমে যোগ্যব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের এখতিয়ার মহামান্য রাষ্ট্রপতির। তবে এই নিয়োগ হতে হবে ‘উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান রচনার ৪৬ বছর পরেও এমন একটি আইন কোন সরকারই প্রণয়ন করেনি। যার ফলে সংবিধান বার বার লঙ্ঘিত হয়েছে। তাই সংবিধান নির্দেশিত এ আইনটি প্রণয়ন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। তারা বলেন, যথাযথ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। যদিও ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগ পদ্ধতি) আইন, ২০১১ শিরোনামে একটি আইনের খসড়া রেখে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এ বিষয়ে আর কোন কাজ হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে কোনরূপ উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তারা বলেন, আইনের অনুপস্থিতির কারণে অতীতে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সরাসরি নিয়োগে দিয়েছেন। কারণ সাংবিধানের ৪৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করতে হয়। তবে এবারে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ইসি নিয়োগ আইন প্রণয়নের কথা খুব জোরেশোরে উচ্চারিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতিকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসি নিয়োগে আইন হলে এ বিষয়ে সব জটিলতা ও বিতর্কের অবসান হতে পারে। কারণ নির্বাচন কমিশনের ওপরই নির্ভর করছে আগামী সব নির্বাচন কেমন হবে।
×