ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধ মশক নিধন কার্যক্রম ড্রেনের স্লাব ভেঙ্গে একাকারনিত্য দুর্ভোগে নগরবাসী

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন থমকে গেছে নাগরিক সেবা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন থমকে গেছে নাগরিক সেবা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীর সব ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম হঠাৎ করেই স্থবির হয়ে পড়েছে। অর্থ সঙ্কটসহ নানা কারণে নাগরিক সেবা দিতে পারছেন না নগরসংস্থা সিটি কর্পোরেশন। ফুটপাথের সøাব খসে পড়ছে, নালা পরিষ্কার না করায় মশাদের উৎপাত বাড়ছে, অনেক এলাকায় রাতের বেলাও জ্বলে না বাতি, অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো বেহাল দশায় পরিণত হলেও সিটি কর্পোরেশন কোন সংস্কার কাজও করতে পারছে না। এতে নাগরিক বিড়ম্বনা চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে নাগরিকরা। রাজশাহী নগরীর প্রধান সড়কগুলোয় আধুনিক ফুটপাথ নির্মাণ করা হলেও দুই বছরের মধ্যে এগুলো ভেঙ্গে টাইল উঠে যাচ্ছে ক্রমেই। রাজশাহী নগরীর রেলওয়ে স্টেশন এলাকার ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে পদ্মা হোটেল পর্যন্ত আধা কিলোমিটার রাস্তা সংলগ্ন ড্রেনের স্লাব ভেঙ্গে অন্তত ২৮টি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কের স্লাব উঠে মরণ ফাদে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত উন্মুক্ত ড্রেনের মধ্যে পড়ে আহত হচ্ছেন পথচারীরা। দুই বছর যাবৎ এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হলেও তা সংস্কারের কোন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে স্থানীয়রা এসব স্লাবের পরিবর্তে কাঠ আর বাঁশ দিয়ে লাল নিশানা টনিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোকে কিছুটা ঠিক করে রেখেছেন। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় সরজমিনে গিয়ে ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে পদ্মা হোটেল পর্যন্ত প্রধান সড়কের দক্ষিণ পাশের ফুটপাথের বেহাল অবস্থা দেখা গেছে। ড্রেনের ওপরের অধিকাংশ সøাব নষ্ট হয়ে গেছে। ড্রেনের মধ্যে ময়লা আবর্জনা জমে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করার দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী আলী আকবর বলেন, নগরীর বিভিন্ন ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার উপায় নেই। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না। ফলে জনগণকে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। তবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, ফুটপাথ সংস্কারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, দ্রুতই তা বাস্তবায়ন করা হবে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে মশা মারার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শীতের মধ্যেও মশার যন্ত্রণায় নগরবাসী ছটফট করছেন। দিনে-রাতে মশার অত্যাচার থেমে নেই। একটু আঁধার স্থানেই মানুষের ওপর হামলে পড়ছে মশা। অথচ সিটি কর্পোরেশন এ নিয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। এমনকি নগরীর ড্রেনগুলো পরিষ্কারেরও কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও ভাঙ্গা ড্রেনের পানি রাস্তার ওপরে উঠে জমা হয়ে থেকে সেখানে জন্ম নিচ্ছে মশা। নগরবাসীর অভিযোগ, গোটা নগরীর উন্নয়ন কাজ থমকে গেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়রের অযোগ্যতার কারণে। একজন কাউন্সিলর হয়ে গোটা নগরী চালাচ্ছেন। এই অবস্থায় নগরীর উন্নয়ন তো দুরুহ ব্যাপার, সামান্য মশাও মারতে পারছেন না মেয়র। ফলে নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। আবার অফিস-আদালতেও মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অফিসের টেবিলের নিচেই যেন মশারা ওঁৎ পেতে থাকে। নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল ওহাব বলেন, মশা নিধন করা জরুরী। কিন্তু কে করবে? এখন তো ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিয়ে চলছে সিটি কর্পোরেশন। মশা যিনি মারতে মারেন না, তিনি আবার নগরীর উন্নয়ন করবেন কিভাবেÑ প্রশ্ন রাখেন আব্দুল ওহাব। রাসিক সূত্র জানায়, নগরের ড্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোন কার্যক্রম আপাতত নেই বললেই চলে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ড্রেনের পানি উপচে পড়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আবার ড্রেনের ভিতরেও ময়লা-আবর্জনা জমে এককাকার। রাসিক সূত্র জানায়, সরকারী বরাদ্দ কমে যাওয়ার কারণে এই বেহাল দশা। অর্থ সঙ্কটে নগরীর উন্নয়ন কাজ একেবারে থমকে আছে। একজন কাউন্সিলর মেয়রের দায়িত্ব পালন করায় তিনি ঠিকমতো বরাদ্দও পাচ্ছেন না। এসব বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মোঃ মামুন জানান, অর্থ সঙ্কটের কারণে বর্তমানে নগরীতে মশক নিধন বন্ধ রয়েছে। শেষ কতদিন মশা মারার ফগার চলেনি নগরীতে তার তথ্য দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, নগরীর সেবামূলক কোনো কাজ করতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন। তিনি বলেন, দফায় দফায় নগরবাসীর ওপর করের মাত্রা বৃদ্ধি করলেও নগর উন্নয়নে পুরো ব্যর্থ এখন নাগরিক সেবাদানকারী সংস্থা সিটি কর্পোরেশন। নগরীতে আর মশা মারা হয় না। ড্রেন পরিষ্কার হয় না। তিনি বলেন, সবকিছু স্থবির হয়ে আছে কর্পোরেশনের অদক্ষ প্রশাসনের কারণে। তিনি দ্রুত নাগরিক সেবা বৃদ্ধির দাবি জানান। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযম উল আযিম জানান, তেল সঙ্কটের কারণে নগরীতে মশক নিধন কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। তেল সঙ্কট উত্তরণের পর আবারও মশক নিধন কার্যক্রম শুরু হবে। আর অর্থ সঙ্কটের কারণে অনেক উন্নয়ন কার্যক্রমেও হাত দেয়া যাচ্ছে না। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন শীঘ্রই সিটি কর্পোরেশন সঙ্কট কাটিয়ে উঠবে। নগারিকরা যথাযথ সেবা পাবেন।
×