ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন সমর্থন অপরিহার্য

আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় রাশিয়ার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় রাশিয়ার উদ্যোগ

মস্কোয় গত সপ্তাহে রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গভীর আফগান সঙ্কট নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ ব্যক্ত করা হয়েছে। আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতায় ক্রমবর্ধমান নৈরাশ্যের মধ্যে আফগানিস্তানের ওপর রুশ কূটনৈতিক শন্তি ব্যক্ত করায় সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে এ বৈঠক। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এটি তৃতীয় দফা আলোচনা। খবর ডন অনলাইনের এ বিষয়ে উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে জঙ্গী ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের অশুভ প্রভাব ছড়িয়ে পড়ার হুমকি। কিন্তু এ নতুন জোট আফগান সংঘাতের কোন রাজনৈতিক সমাধান বের করতে সমর্থ হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও কাবুল সরকারকে পরবর্তী আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তারপরও আগের বৈঠকগুলোতে এ সরকারকে অন্তর্ভুক্ত না করায় শান্তি প্রক্রিয়ার ওপর একটা মন্দ প্রভাব পড়বে। মস্কোর উদ্যোগে এ শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, এটা বিস্ময়ের বিষয় নয়। তারপরও এটা এখনই ধারণা করার সময় আসেনি যে, এ নতুন জোট পাকিস্তান, চীন ও আফগানিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তিতে এক চার দেশীয় জোটে পরিবর্তিত হবে। আফগান তালেবান বিদ্রোহীদের আলোচনার টেবিলে বসানোর উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর প্রায়, এক বছর ধরে চতুর্ভূজ জোটের আলোচনা স্থগিত হয়ে আছে। গত মে মাসে সিআইএয়ের ড্রোন হামলায় তালেবান প্রধান মোল্লা আখতার মনসুর নিহত হওয়ার পর আলোচনা আবারও শুরু হওয়ার প্রত্যাশা শেষ হয়ে যায়। এটা স্পষ্ট যে, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা না থাকলেও এর নীরব সমর্থন ছাড়া কোন শান্তি উদ্যোগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, আফগানিস্তানে দেশটির এখনও ১০ হাজার সৈন্য বিদ্রোহ বিরোধী অভিযানে তৎপর রয়েছে। ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক ক্ষমতার হাত বদলের সঙ্গে বিষয়টা আরও জটিল হয়ে পড়বে। ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অন্যান্য বৈদেশিক নীতির মতো আফগান নীতির বিষয়ে সম্পূর্ণ একটা গোলমেলে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে মনে হচ্ছে। তিন দেশীয় জোটের মস্কো বৈঠকে বিদ্রোহী নেতাদের ওপর আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। কাবুল সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে তালেবানের এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। তালেবান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বানে মস্কো আলোচনায় দৃশ্যত সন্তোষ প্রকাশ করেছে। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রে মতামতের প্রয়োজন রয়েছে। চীন আফগানিস্তানে খনি উত্তোলন ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রধান বিনিয়োগকারী দেশ হয়ে এখন কিছু সময়ের জন্য আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে জড়িত হয়েছে। দেশটির কাবুল সরকার ও তালেবান উভয়ের সঙ্গে রয়েছে সুসম্পর্ক। আফগান দৃশ্যপটে রাশিয়া হয় তো নতুন করে প্রবেশ করেনি। কিন্তু তা হলেও দেশটির উদ্যোগ আইএসের হুমকির বিরুদ্ধে এক আঞ্চলিক জোট গঠনে ভূমিকা রাখবে এবং ভূমিকা রাখবে ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপটের পরিবর্তনে। নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে সিরিয়া ও আফগানিস্তানের ওপর ওবামা প্রশাসনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা প্রকাশ করলেও ভবিষ্যত মার্কিন নীতি বিশেষ করে আফগান নীতি বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা যায় না। বর্তমান আলোচনার ধরন বা ফরমেট পরিবর্তনে এ সবকিছুর সুযোগ নিয়েছে মস্কো এবং আফগান সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগে বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনের চেষ্টা করছে দেশটি।
×