ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বৃদ্ধি পাবে আমদানি পণ্যের ব্যয়

লাইটারেজ জাহাজের ভাড়া বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২ জানুয়ারি ২০১৭

লাইটারেজ জাহাজের ভাড়া বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রাম বন্দরের নৌপথে পণ্য পরিবহনের লাইটারেজ জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি)। ২০১২ সালের ৩ জুনের পর আবার এ ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। অথচ গত জুলাই মাস থেকে লাইটারেজ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকরের কথা থাকলেও সেটা এখনও কার্যকর করতে পারেনি ডব্লিউটিসি। দেশের বাইরে থেকে বড় পণ্যবাহী জাহাজ এলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙরে অবস্থান নিতে হয়। কেননা জাহাজগুলো বড় হওয়ার কারণে সরাসরি বন্দরের জেটিতে পণ্য খালাস করতে পারে না। সেক্ষেত্রে বহিঃনোঙরে পণ্য খালাস করে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। বন্দরের এক হিসাবে দেখা যায়, আমদানি করা পণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে বহন করতে হয়। ডব্লিউটিসির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ৭৫০টি লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের নিজস্ব লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে প্রায় ১৮০টি। সিমেন্ট ক্লিংকার, পাথর, কয়লা, ডাল, চাল, গমসহ আমদানি করা সকল পণ্য লাইটারেজ জাহাজে পরিবহন হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙর থেকে সারাদেশের ২৯টি নৌরুটে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য পরিবহন করা হয়। ডব্লিউটিসির বর্ধিত ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পণ্য পরিবহনে টনপ্রতি সর্বনিম্ন ৫৭ থেকে সর্বোচ্চ ১৩৩ টাকা ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মেঘনা, মুক্তারপুর, কাঁচপুর, নিতাইগঞ্জ রুটে শিল্পের কাঁচামাল সিমেন্ট ক্লিংকার ও সø্যাগ পরিবহনে টনপ্রতি ভাড়া ৪৮৮ টাকা হলেও আজ থেকে ওই ভাড়া ৬০ টাকা বাড়িয়ে ৫৪৮ টাকা করা হয়েছে। এখানে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ১২.২৯ শতাংশ। এদিকে চট্টগ্রাম থেকে খুলনা, নোয়াপাড়া ও শিরমনি রুটে টনপ্রতি ১৩৩ টাকা বাড়িয়ে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০৭ টাকা। এক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ছে প্রায় ২০ শতাংশ, যেটা অন্যান্য রুটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আমদানিকারকদের সিমেন্ট ক্লিংকার ও সø্যাগ ছাড়া অন্যান্য আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে আগের মতোই বাড়তি ভাড়া দিতে হবে বলে জানা গেছে। লাইটারেজ জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি সম্পর্কে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল লাইটারেজ জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা অযৌক্তিক। কারণ তারা এককভাবে ভাড়া বাড়াতে পারে না। দেশের আমদানি করা পণ্যের বেশিরভাগ এ জাহাজগুলোর মাধ্যমে খালাস করা হয়। এখন জাহাজ ভাড়া বাড়লে আমদানি করা পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাবে, যেটা সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত। সুতরাং জাহাজ মালিকদের আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল। তবে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কো-কনভেনার সফিক আহমেদ বলেন, জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য সহজাত দ্রব্যের দাম বাড়লেও আমরা ২০১২ সালের ৩ জুনের পর আর কোন ভাড়া বাড়াইনি। সম্প্রতি নৌপরিবহনমন্ত্রী লাইটারেজ জাহাজের শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর কথা জানান। কিন্তু আমরা সেটাও করতে পারিনি। এজন্য আমরা বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়িয়েছি। তবে আমরা আশা করছি শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরি দ্রুত দিতে পারব। ভাড়া বাড়ানো ছাড়া আমাদের অন্য কোন পথ নেই। তবে লাইটারেজ জাহাজের একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ধিত বেতন এখনও আমাদের মালিকপক্ষ দেয়নি। মন্ত্রীর আশ্বাসের পর আমরা এখনও আগের বেতনে কাজ করে যাচ্ছি। এতে পরিবার নিয়ে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। যদি দ্রুত মালিকপক্ষ আমাদের বর্ধিত মজুরি প্রদান না করে তাহলে আমরা আবার ধর্মঘটের মতো আন্দোলনে যাব। এদিকে আমদানিকারকরা জানান, একদিকে লাইটারেজ জাহাজ সঙ্কট অন্যদিকে জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি পণ্য পরিবহনে বেশ জটিলতা সৃষ্টি করবে। সারাবছর চাহিদা অনুযায়ী লাইটারেজ জাহাজ সরবরাহ করতে পারে না ডাব্লিউটিসি। এজন্য আমাদের পণ্য খালাস করতে পারি না। এদিকে পণ্য খালাস করতে না পেরে বিদেশ থেকে জাহাজ বন্দরে আটকে থাকলে প্রতিদিন অতিরিক্ত জরিমানা গুনতে হচ্ছে আমাদের। এজন্য আল্টিমেট ক্ষতি আমাদের বহন করতে হয়। অন্যদিকে বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে সেটার মাসুল কিন্তু সাধারণ মানুষকে গুনতে হবে। বন্দরের এক হিসাবে দেখা গেছে, গত বছর মোট ৩ কোটি ৮ লাখ টন পণ্য আমদানি করা হয়, যার মধ্যে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের লাইটারেজ জাহাজ পণ্য পরিবহন করেছে প্রায় দেড় কোটি টন। বাকি পণ্য ব্যক্তিগত জাহাজে পরিবহন করা হয়। সুতরাং বর্ধিত ভাড়া আজ থেকে চালু হলে শত কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে আমদানিকারকদের। এদিকে বন্দরের বহিঃনোঙরে লাইটারেজ জাহাজ সঙ্কট কাটিয়ে নতুন করে লাইটারেজ জাহাজ তৈরি করার পরামর্শ দেন তারা। এতে সঙ্কট কেটে গেলে জাহাজের জন্য অতিরিক্ত জরিমানা গুনতে হবে না।
×