ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল ‘আয়নাবাজি’

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬

দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল ‘আয়নাবাজি’

গৌতম পাণ্ডে ॥ সাফল্য-ব্যর্থতা মিলিয়েই আর একটি বছর পার করল ঢাকাই সিনেমা। হাঁটি হাঁটি করে ঢাকাই চলচ্চিত্র পার করল আরও একটি বছর। ফেলে আসা বছরে ঢাকাই চলচ্চিত্রের হালচাল সম্পর্কে এবার হিসাব-নিকাস করার পালা। অনেকের মতে ফিরে দাঁড়াচ্ছে ঢাকাই চলচ্চিত্র। বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকাই চলচ্চিত্র নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। এই অভিযোগ মূলত ব্যর্থতার আর ভেঙ্গে পড়ার। প্রতিবছর নতুন প্রত্যাশা নিয়ে আরম্ভ হলেও দিন শেষে ব্যর্থতার পালা ভারি করে বছর শেষ করতে হয়। এখন দেখার বিষয় এই বছর ঢাকাই চলচ্চিত্র কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে! পেছন থেকে ঘুরে আসা যাক। প্রযোজক এবং পরিবেশক সমিতির তথ্যমতে, গত বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে দেশে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬৩টির মতো। যার ভেতর ছিল একক নির্মাণের দেশী চলচ্চিত্র ছাড়াও যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র। যদি তার আগের বছরের কথা উল্লেখ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে ২০১৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল সর্বসাকুল্যে ৭৬টির মতো চলচ্চিত্র। বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় দেশে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমেছে। চলতি বছর ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে ৫৬টি চলচ্চিত্র। আরও একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাহলে সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৭। শুধু সংখ্যার দিক থেকে চলচ্চিত্র কমেনি, সেই সঙ্গে কমেছে মান এবং ব্যবসা। তবে এখানে তৃপ্ত হওয়া যায় এই কথা ভেবে যে, ব্যবসায়িক ব্যর্থতার সমূহ সম্ভাবনা জেনেও প্রযোজকরা অর্থ লগ্নি করছেন। আবার একই সঙ্গে অতৃপ্তির বিষয় হলো প্রযোজকরা চলচ্চিত্রের পেছনে অর্থ লগ্নি করলেও দর্শকের রুচির দিকটি বিবেচনায় রাখেননি। অপাত্রে অর্থলগ্নি এবং মানহীন চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে সারা বছর ঢালিউড তেমন কোন সম্ভাবনার চলচ্চিত্র উপহার দিতে পারেনি। তবে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের মধ্যে কিছু চলচ্চিত্র ছিল ব্যতিক্রম, যা দর্শকরা বেশ ভালভাবে গ্রহণ করেছে। আবার কিছু চলচ্চিত্র ব্যবসায়িকভাবে সফল না হলেও প্রশংসিত হয়েছে। যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘শিকারী’ এবং ‘বাদশা’ এ বছর মুক্তি পাওয়া ব্যবসাসফল দুটি চলচ্চিত্র। এছাড়া ‘রাজা-৪২০’, ‘বসগিরি’, ‘শুটার’ ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী-২’ বেশ ভাল চলেছে। ঢাকার বলাকা, পূর্ণিমা, আনন্দ প্রভৃতি সিনেমা হলগুলোর ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে, কিছু তথ্য বেরিয়েছে চলচ্চিত্রবিষয়ক কিছু পত্রিকাতেও। যদিও উল্লিখিত সিনেমা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক সমালোচনায় সরব ছিল। বছরের শেষের দিকে সব মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রকে ছাড়িয়ে যায় অমিতাভ রেজা পরিচালিত ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রটি। এই বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে অবহিত করা হচ্ছে এটিকে। এর বিপরীতে ছবিটির বিরুদ্ধে ছিল নকলের অভিযোগ এবং ত্রুটিপূর্ণ কাহিনী নিয়ে। গৌতম ঘোষ পরিচালিত যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘শঙ্খচিল’ দুই বাংলায় সমাদৃত হয়েছে, কিন্তু ব্যবসা করতে পারেনি। চলচ্চিত্রের প্রযোজক এমনটাই বলেছিলেন এক সাক্ষাতকারে। এ ছাড়া ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হলেও প্রশংসিত হয়েছে মেহের আফরোজ শাওন পরিচালিত হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘কৃষ্ণপক্ষ’ এবং তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘অজ্ঞাতনামা’। রেদওয়ান রনির ‘আইসক্রিম’ চলচ্চিত্রটিও প্রশংসিত হয়েছে। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তির কয়েকদিন পর প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছর বেশকিছু কলকাতার চলচ্চিত্র আমদানি করা হয়েছে। আমদানিকৃত চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘বেপরোয়া’, ‘বেলাশেষে’, ‘কেলোরকীর্তি’। বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে কলকাতার এসব ছবি মুক্তির বিরোধিতা বিষয়ে সরগরম ছিল বিএফডিসি। অনেককে এই চলচ্চিত্র বিনিময়কে শুভংকরের ফাঁকি বলে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে। চলতি বছর মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র সম্পর্কে অনেকের বক্তব্য, বছরের সেরা ছবি ‘অজ্ঞাতনামা’। ‘আয়নাবাজি’ও বেশ ভাল। কিন্তু কথা হলো সাধারণ দর্শক যদি ১০০ টাকার টিকেটে চকচকে মাসালা ছবি দেখতে পায় সে ক্ষেত্রে তারা অল্প বাজেটের চলচ্চিত্র দেখবে কেন? তাই যৌথ প্রযোজনার বিষয়ে আরও ভেবে দেখা উচিত। নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক চলতি বছরের চলচ্চিত্র নিয়ে বলেন, যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রগুলো ভাল করেছে। শিকারী, বাদশা তার উদাহরণ। লোকাল প্রোডাকশনগুলো তেমন সফল হয়নি’। ভাল না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি উত্তরটা এভাবে দেন, লোকাল প্রোডাকশনগুলোর লুক ভাল ছিল। তবে স্ক্রিনপের দুর্বলতার কারণে সফল হয়নি। বছরের শেষের দিকে ৫০টি সিনেমা হলে মুক্তি পায় এসএ হক অলিকের কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য ও নির্দেশনায় নির্মিত ‘এক পৃথিবী প্রেম’ চলচ্চিত্রটি। এতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। এটিএম শামসুজ্জামানের সঙ্গে ‘এক পৃথিবী প্রেম’ চলচ্চিত্রে আরও যে চারজন বিশিষ্ট শিল্পী অভিনয় করেছেন তারা হলেনÑ সৈয়দ হাসান ইমাম, আবুল হায়াত, আমিরুল হক চৌধুরী ও শর্মিলী আহমেদ। চলচ্চিত্রে আর অভিনয় করেছেন আইরিন, আসিফ নূর, বিপাশা কবিরসহ অনেকে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সাল ঢাকাই চলচ্চিত্র রংহীনভাবে পার করেছে। হাতে গোনা কয়েকটি চলচ্চিত্র ব্যবসা করলেও সেগুলো আশাজাগানিয়া নয়। আসছে নতুন বছর দেশীয় চলচ্চিত্র নতুনভাবে জেগে উঠতে পারবে কিনা, সেটা সময় বলে দেবে। তবে একথা নিশ্চিত করে বলা যায়, আগামী বছরটি হবে ঢাকাই চলচ্চিত্রের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর।
×