ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

বছরের ফ্যাশন ধারা

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

বছরের ফ্যাশন ধারা

জনপ্রিয়তা পেয়েছে গাউন গাউন পোশাকটিকে অতীতে যদিও পশ্চিমা দেশের পোশাক হিসেবেই ধরা হতো, তবে এখন ভারত বা আমাদের দেশের তরুণীদের মাঝেও এই পোশাক বেশ জনপ্রিয়। বস্তুত গাউন বলতে আমরা একটা লম্বা লেন্থ বিশিষ্ট পোশাককে বুঝি যা ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের ভিত্তিতে অনেক রকম হয়ে থাকে। অনেকে মনে করেন গাউন শুধু লম্বা উচ্চতার মেয়েদের জন্য বেশি মানানসই। কিন্তু বর্তমানে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত করে সব ধরনের মেয়েরাই এই পোশাক পরিধান করে থাকে। বিভিন্ন দেশের ও বিভিন্ন সময়ের চাহিদা ও ফ্যাশনের ওপর ভিত্তি করে এই গাউন ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বিশেষ করে আমাদের দেশের দিকে খেলায় করলে দেখা যাবে এই দেশের মেয়েরা গাউনের সঙ্গে ওড়না ও লম্বা স্যালোয়ার পরতে বেশি কমফোর্টেবল অনুভব করে। চলতি বছরে গাউনের জনপ্রিয়তা পেয়েছে অনেক। গাউনেও এসেছে ফিউশন। কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া তরুণীদের হাত ধরে এর জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কামিজের সঙ্গে গাউনের এক ফিউশন হয়েছে। ফিরে আসছে খাদি ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়’- খাদি সঙ্গী করা হয়েছিল স্বদেশী আন্দোলনে। সেই খাদিই এখন অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পেরিয়ে হয়ে উঠেছে বাঙালির অন্যতম ফ্যাশন-প্রতীকে। কার্পাস তুলা থেকে হাতে কাটা সুতা তারপর সেই সুতা থেকে হাতে চালানো তাঁতে বোনা হয় কাপড়। এই কাপড়ই হলো খাদি বা খদ্দর। স্বদেশিয়ানা এবং আমাদের ঐতিহ্য এ দুটি বিষয় একই সঙ্গে বহন করে চলেছে আমাদের খাদি। আর হাল আমলের ফ্যাশনেও আছে এর কদর। খাদি বা খদ্দর একসময় কেবল একহারা পাঞ্জাবির ফ্যাশনেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন খাদির ব্যবহারে বৈচিত্র্য বেড়েছে অনেক। হাতে কাটা সুতা সহজলভ্য না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে কাপড়ের একপাশে হাতে কাটা সুতা ও অন্য পাশে যন্ত্রে বোনা সুতা দিয়েও তৈরি হচ্ছে খাদি কাপড়। চলতি বছর পোশাকের এই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলে দু’দিনব্যাপী ফ্যাশন শোর আয়োজন করা হয়। তরুণ-তরুণীদের ফ্যাশনে পছন্দের উপাদান হয়ে উঠেছে খাদি। তবে শীতের সময় সবারই খাদি কাপড়ের প্রতি একটু বেশি আগ্রহ দেখা যায়। পরতে যেমন আরাম, তেমনি খাদিতে রয়েছে স্বদেশিয়ানার ষোলআনা। সালোয়ার-কামিজে খাদি কাপড় একটু ভারি গড়নে চললেও এগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে ওড়নাগুলো খাদি সুতোতেই তবে একটু অন্য ধরনের বুননে পাওয়া যাচ্ছে। খাদি পোশাকে টাইডাই এবং স্ক্রিনপ্রিন্টের ব্যবহারও লক্ষণীয়। অনেকে আবার একটু এমব্রয়ডারি করা খাদির কামিজ পছন্দ করেন। দেশী ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে আড়ং, নিপুণ, কে ক্রাফট, প্রবর্তনা, রঙ, দেশাল, বাংলার মেলা, বিবিয়ানা, যাত্রা, অন্যমেলার মতো আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন নকশায় খাদি কাপড় ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। গত এক দশকে খাদি বা খদ্দরের নববিকাশ বেশ লক্ষণীয়। এ ব্যাপারে ডিজাইনার চন্দ্রশেখর সাহা বলেন, ‘খাদি বা খদ্দরে রয়েছে এক ধরনের অমসৃণতা। মসৃণ কাপড়ে খাদির সুতা ব্যবহার করে অমসৃণ টেক্সচার এনে প্রথমে বুননে বৈচিত্র্য এনেছিল কে ক্র্যাফট।’ জামদানি মসলিন মিহি সুতায় বোনা সূক্ষ্ম যে কাপড়ের দুনিয়াজোড়া খ্যাতির কথা আজকের বাঙালী জেনেছে ইতিহাসের পাতা থেকে, সেই মসলিন আবার ঢাকায় ফিরছে! আড়াইশ কাউন্টের চেয়ে মিহি সাদা সুতা দিয়ে মসলিন তৈরি করা হতো শত বছর আগে। রাজ পরিবারের মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে থাকা এই শাড়ি বোনা হতো কার্পাসের সুতায়। এজন্য এক সময় বৃহত্তর ঢাকার মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীর সংলগ্ন অঞ্চলে হতো ফুটি কার্পাসের চাষ। সেই সুতা তৈরি হতো নদীতে নৌকায় বসে, উপযোগী আর্দ্র পরিবেশে। ব্রিটিশ শাসনামলে কল-কারখানা থেকে সাশ্রয়ী কাপড় আসায় একসময় হারিয়ে যায় দীর্ঘ সময় নিয়ে মসলিন তৈরির তাঁত ও সুতা। সেই সুতা ফিরিয়ে আনতে সরকার গত বছর ১২৪০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে, যার কাজ শুরু হবে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। নতুন রূপে সামনে আসবে ফ্যাশনে হারানো ঐতিহ্য। জামদানিও কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত একধরনের সূক্ষ্ম বস্ত্র। পরতে আরামদায়ক আর অতি মসৃণ এই শাড়ি আজকাল ফিউশন ধর্মী করে ক্রেতাদের সামনে হাজির করা হচ্ছে। নতুন ডিজাইনের জামদানি শাড়ি পাওয়া যাবে গুলশানের প্রিয়ালী বুটিক হাউসে। পুরো শাড়ি জুড়ে ছবির ক্যানভাস। শাড়ির ওপর হ্যান্ড প্রিন্ট করে জামদানি শাড়ির ডিজাইনে তৈরি হয়েছে ফিউশন। প্রিন্ট স্কার্ট ও শার্টে ফ্যাশন ফ্যাশন প্রিয়রা সব সময়ই চান নতুন কিছু। আর এ সময়ের অন্যতম ফ্যাশন হচ্ছে চেক প্রিন্ট। চেক স্কার্ট, সাদা শার্ট ও উজ্জ্বল চেক পেনসিল স্কার্টকে আরও প্রমিনেন্ট করে ফিউশন রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। শার্টকে স্কার্টে ইন করে পরলে বেশ মানাবে। এছাড়া চেক স্কার্ট ও ক্রপ টপ চেক স্কার্টের সঙ্গে স্কিনি ক্রপ টপ এখন ট্রেন্ডি। এতেও বেশ বোল্ড লুক আসে। বিশেষত রাতের পার্টির জন্য পারফেক্ট ড্রেস বলা যায় এই কম্বিনেশনকে। চেক প্যান্ট ও শার্ট কম্বিনেশন সবসময়ই চলে। সময়ের সঙ্গে ফ্যাশন এখন এমন যে, ট্রেন্ড কোনো দেশভেদে পরিবর্তন হয় না। বিভিন্ন দেশে ডিজাইনের বিভিন্ন পরিবর্তন থাকলেও মূল ট্রেন্ডের পরিবর্তন সারা বিশ্বে প্রায় একই সঙ্গে ঘটে। কামিজ আর শার্টের বেলায়ও ব্যতিক্রম নয়। ট্রেন্ড এখন প্রিন্টেড ডিজাইনের। বিভিন্ন মোটিফ দিয়ে করা প্রিন্টেড কামিজ ও শার্ট এখন ফ্যাশনে পুরোপুরি ইন। মোটিফ একটি শৈল্পিক ব্যাপার। এখানে ডিজাইনারের কল্পনার বহিঃপ্রকাশ থাকে। প্রিন্টের রঙ হালকা হলে কাপড় গাঢ়, প্রিন্ট জমকালো হলে কাপড় রাফের মধ্যে বেশি মানায়। তবে মোটিফের প্রিন্ট ক্যাজুয়ালি পরাই ভালো। ফরমালে তা শতভাগ মানানসই নয়। এ ক্ষেত্রে জিন্স প্যান্ট অথবা চিনোস নিতে পারেন। স্ক্রিন প্রিন্টের মধ্যেই বেশি ফোটে মোটিফ ডিজাইন। এবছর ছিল এই প্রিন্টেড পোশাকের ফ্যাশন। ক্ল্যাসিক ফ্যাশন হারিয়ে যায় না কখনই। ছেলেদের ফ্যাশন চেইনে ঘুরেফিরে ক্ল্যাসিকই বেশি জোরালো। সব ঋতুতেই ফ্যাশনের বড় জায়গা শার্ট আর কামিজের জন্য। তবে সময় এবং ট্রেন্ডের খাতিরে পরিবর্তন আসে ডিজাইনে, কাপড়ে এবং প্যাটার্নে।
×