ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রিহ্যাব ফেয়ার-২০১৬ উদ্বোধন

আবাসন শিল্পের সমস্যা সমাধানে তিন পক্ষের সঙ্গে বসবেন অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

আবাসন শিল্পের সমস্যা সমাধানে তিন পক্ষের সঙ্গে বসবেন অর্থমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবাসন শিল্পের সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে জমির মালিক, আবাসন নির্মাতা ও গ্রাহক- এই তিন পক্ষের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, আবাসন মানুষের মৌলিক অধিকার। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সবার আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভূমিহীন, হতদরিদ্র ও শহুরে বস্তিবাসীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে সজাগ আছেন। সরকারের নিজস্ব উদ্যোগের পাশাপাশি আবাসন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলা ‘রিহ্যাব ফেয়ার-২০১৬’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জ্বালানি, বিদ্যুত ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাংসদ নুরুন নবী চৌধুরী শাওন। এ সময় রিহ্যাবের অন্য উর্ধতন কর্মকর্তারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বরিশাল ও ভোলার বন্যাদুর্গতদের মাঝে রিহ্যাবে কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্বের (সিএসআর) অংশ হিসেবে নির্মাণ করা ৬৫টি টিনশেড ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে আবাসন খাতে অর্থায়নের সমস্যা দূর করতে সরকারের কাছে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ তহবিল গঠনের দাবি জানানো হয়। এছাড়া জমির রেজিস্ট্রেশন ফি ১৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা এবং রিহ্যাব সদস্যদের নির্মিত আবাসিক ভবনে বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক হার প্রয়োগের দাবি জানানো হয়। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, আবাসনে অর্থায়নের জন্য পাকিস্তান আমলে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন গঠন করা হয়েছিল। আবেদন গ্রহণ করা হলেও বর্তমানে কয়েকটি কারণে সরকারী এ প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রদান কার্যক্রম বন্ধ আছে। এ বিষয়েও শীঘ্রই করণীয় ঠিক করা হবে। রিহ্যাব সদস্যদের উদ্দেশ করে অনুষ্ঠানে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমি মন্ত্রী থাকতে নতুন করে আবাসিকে আর কোন গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করে যে অর্থ আপনারা জমা দিয়েছেন, তা তুলে ফেলুন। তহবিল গঠনের দাবি বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার টাকা নিয়ে বসে আছে। আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ এখন ৩৫ বিলিয়ন ডলার। তবে এই টাকা আপনাদের দিলে সরকার ও জনগণ কতটুকু ও কীভাবে লাভবান হবে সেটাও আপনাদের বিবেচনায় নিতে হবে। এজন্য সরকার ও আবাসন খাত সংশ্লিষ্টদের একই গতিতে চলতে হবে। আবাসন ব্যবসায়ীদের কোড অব ইথিকস মেনে চলার ওপর জোর দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আবাসন বিষয়ে একক কোন আইন নেই। তবে সুনামই এ ব্যবসার সব। গ্রাহককে ঠকালে এ ব্যবসায় টিকে থাকা যাবে না। আবাসনে রেজিস্ট্রেশন ফি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি স্বীকার করে এ ব্যাপারে আগামী বাজেটে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ‘স্বপ্নীল আবাসন, সবুজ দেশ, লাল সবুজের বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে আয়োজিত পাঁচ দিনের এই মেলায় মোট ১৭৫টি স্টল থাকছে। এর মধ্যে ৩০টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে রিহ্যাব। এবারের মেলায় কো-স্পন্সর হিসেবে অংশগ্রহণ করছে ২৪টি প্রতিষ্ঠান। বিকেলে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও ক্রেতা-দর্শনার্থীরা সকাল ১১টা থেকেই মেলায় আসতে শুরু করেন। অন্যদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলায় প্রবেশ করা যাবে। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্লট ও ফ্ল্যাটে মূল্য ছাড়, উপহারসহ নানা সুবিধা দেবে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ২০০১ সাল থেকে ঢাকায় রিহ্যাব এই মেলার আয়োজন করে আসছে। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৯টি মেলা সম্পন্ন করেছে রিহ্যাব। এছাড়া রিহ্যাব ২০০৪ সাল থেকে বিদেশে হাউজিং মেলার আয়োজন করছে। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১২টি এবং যুক্তরাজ্য, দুবাই, ইতালি, কানাডা ও কাতারে একটি করে রিহ্যাব হাউজিং মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রিহ্যাব জানিয়েছে, প্রতিবছরের মতো এবারও মেলার দর্শনার্থীদের জন্য দুই ধরনের টিকিট থাকছে। সিঙ্গেল এন্ট্রি টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের মূল্য রাখা হয়েছে ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী সর্বোচ্চ পাঁচবার মেলায় প্রবেশ করতে পারবে। এন্ট্রি টিকিটের র‌্যাফেল ড্রতে প্রতিদিন থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার। এ বছর মেলা শেষে প্রতিদিন রাত ৯টায় র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে। আর টিকিট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করা হবে দুস্থদের সাহায্যার্থে।
×