ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাথর সরবরাহে সমঝোতা

পশ্চিমাঞ্চল রেলে কোটি টাকা গচ্চার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

পশ্চিমাঞ্চল রেলে কোটি টাকা গচ্চার আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাথর সরবরাহের দরপত্রে এবার সমঝোতার অভিযোগ উঠেছে। প্রাক্কলিত দরের চেয়ে বেশি দরে দরপত্র ফেলা হয়েছে। গত সোমবার এই দরপত্র ফেলার শেষদিন ছিল। তবে আগের রাতে ঠিকাদারদের মধ্যে সমঝোতা হয়। ঠিকাদারদের হিসাবমতে, এই সমঝোতার কারণে সরকারের এক কোটির বেশি টাকা গচ্চা যাবে। অথচ কয়েক মাস আগে একই ধরনের কাজের জন্য ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কম দরে কাজ দেয়া হয়েছে। আগের মতো প্রতিযোগিতামূলক দরে কাজ দেয়া হলে সরকারের তিন কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। জানা গেছে, গত ৫ ডিসেম্বর পশ্চিম রেলের ‘এইচ বিম’ সরবরাহ ও স্থাপনের ২০ কোটি টাকার কাজেও একইভাবে সমঝোতা হয়। তখনও নির্ধারিত মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র ফেলে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম রেলের হরিয়ান, রায়গঞ্জ, মুলাডলী ও যশোর স্টেশনে পাথর সরবরাহের জন্য ১০ নবেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র কেনার শেষদিন ছিল গত রবিবার। এই চার গ্রুপের কাজের জন্য প্রতি গ্রুপে ১৮ থেকে ২০টি করে দরপত্র বিক্রি হয়েছে। প্রতি গ্রুপের তিন হাজার ২০০ ঘনমিটার করে পাথর সরবরাহের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সূত্রমতে, রবিবার রাতে ঠিকাদারদের মধ্যে সমঝোতা হয়। সোমবার দুপুর ১২টায় জমা দেয়ার শেষদিনে প্রতিটি গ্রুপ থেকে মাত্র তিনটি করে দরপত্র জমা দেয়া হয়। এতে ঠিকাদাররা ৫ হাজার ৮০০ থেকে ৬ হাজার টাকা ঘনমিটার হিসাবে দর দিয়েছে। সেই হিসাবে প্রতি গ্রুপের তিন হাজার ২০০ ঘনমিটার পাথরের জন্য এক কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার থেকে শুরু করে এক কোটি ৯২ লাখ টাকা পর্যন্ত দর হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে তারা প্রায় ২৭ লাখ টাকা পর্যন্ত বেশি দর দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে কুষ্টিয়া, বগুড়ার সান্তাহার ও গাইবান্ধার বামনডাঙ্গায় একই ধরনের কাজ শুরু হয়েছে। ওই ঠিকাদাররা প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কম দরে কাজ নিয়েছে। সেই দরে প্রতি ঘনমিটার পাথরের দাম পড়েছিল তিন হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা। এ রকম প্রতিযোগিতামূলক দরে কাজ দিলে চার গ্রুপের কাজে তিন কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হতো। ঠিকাদারদের একাংশের অভিযোগ, চোখের সামনে প্রতিযোগিতামূলক দরে আগের কাজগুলো চলমান থাকতেই সমঝোতার মাধ্যমে সরকারের অর্থ লোপাটের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপের কাছ থেকে মধ্যস্থতাকারীরা ১৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। এ ব্যাপারে দরপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পশ্চিম রেলের কোন কর্মকর্তা সরাসরি তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তবে প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী বলেন, বেশি দরে দরপত্র ফেলা হয়েছে, এমন খবর তিনি পাননি। তবে যারা আগে ৪৫ শতাংশ কম দরে কাজ নিয়েছিল, তারা এখন আর কাজ করতে পারছে না। তারা নয়ছয় করে কাজ করতে পারবে না। এ বিষয়ে রেলওয়ের ট্রাক সাপ্লাই অফিসার (টিএসও) মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতিটি গ্রুপে তিনটি করে দরপত্র পড়েছে। প্রাক্কলিত দরের চেয়ে বেশি দর দেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটি হলেও হতে পারে। তবে তারা কত দর দিয়েছে, এ প্রশ্নে তিনি কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
×