ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বেনাপোলে স্বাগতম গেট নির্মাণ

সাড়ে সাত কোটি টাকা জলে যেতে বসেছে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

সাড়ে সাত কোটি টাকা জলে যেতে বসেছে

আবুল হোসেন, বেনাপোল থেকে ॥ যশোরের বেনাপোল পৌরসভার ‘স্বাগতম গেট’ নির্মাণকাজ চলছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ গেটটি নির্মাণ শুরু হয়েছে এক বছর আগে। বেনাপোল পৌরসভার পূর্ব সীমান্ত আমড়াখালির কাছে এই গেটটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু বিপত্তি বেধেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আপত্তিতে। বিভাগটি বলছে, তাদের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে ফটকসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে, যা মহাসড়ক আইন ১৯২৫-এর পরিপন্থী। গত ২৫ অক্টোবর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী ইকবাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে গেটটি সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। আগামীতে সড়কটি চার লেনে উন্নীত হবার প্রস্তাব রয়েছে। এতে স্বাগতম গেটটি ভাঙ্গতে হবে। অন্যদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, জেলা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে দৃষ্টিনন্দন ফটকসহ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজে বাধা সৃষ্টি হবে না। বেনাপোল পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, দাতা সংস্থা বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের অর্থায়নে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ওপর বেনাপোল পৌরসভার প্রবেশমুখে বেনাপোল পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় গেটটির নির্মাণকাজ চলছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে সাত কোটি ৪৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। তবে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়তে পারে। গত বছরের ১৫ জুন বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে সড়ক পথে যাত্রীবাহী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যান চলাচলের লক্ষ্যে ‘বিবিআইএন’ মোটরযান চুক্তি হয়। ওই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার হিসেবে বেনাপোলে এ গেটটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে ফুটপাথ, টোলঘর, এক্সিবিশন হল, দুই তলা গেস্ট হাউস, রেস্টুরেন্ট, কফি হাউস, পাবলিক টয়লেট, গাড়ি পার্কিং, সিটিং প্লেস, মিনি পার্ক, হ্যান্ডিক্রাফট স্টল থাকবে। গত বছরের ১ নবেম্বর ঝিনাইদহের ‘এমএলটিএমকেএমআরজেভি’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়। ইতোপূর্বে যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহাজান খান এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব বেনাপোল বাইপাস সড়কের অগ্রগতি পরিদর্শনকালে তাদের তোরণ কমপ্লেক্সের বিভিন্ন স্থাপনার নক্সা ও স্থান দেখানো হয়। তারা মৌখিকভাবে বর্তমানে নির্মীয়মান স্থানটি চিহ্নিত করে কাজ করার জন্য বলেন। সওজ বলছে, মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। এ কারণে ফটকটি ভাঙতে হতে পারে। এ সংক্রান্ত চিঠি গত ২৫ অক্টোবর বেনাপোল পৌরসভার মেয়রকে দেয়া হয়। গেটটি অপসারণ হলে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা জলে যাবে। পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, ‘যশোর-বেনাপোল সড়কের জায়গার মালিক জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের অর্থায়নে দৃষ্টিনন্দন ফটকসহ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। চার লেন সড়কের ওপরেই ফটকটি করা হচ্ছে। যে কারণে স্থাপনাটি মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজে বাধার সৃষ্টি করবে না। তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিক ও বাণিজ্যিক কারণে বেনাপোলের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বেনাপোলকে আধুনিক মডেল পৌরসভায় রূপ দেয়ার জন্য যা কিছু করার তাই করা হচ্ছে। দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ বেনাপোল বন্দর, কাস্টমস হাউসে আসেন নানা কাজে। হাজার হাজার মানুষ বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত করে। তাদের দৃষ্টি কাড়তে প্রবেশদ্বারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রবেশদ্বারটি বহির্বিশ্বের কাছেও বেনাপোল তথা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরবে।’ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ কবীর জানান, বেনাপোল পৌরসভাকে যানজটে সৃষ্টি না করে, এমন শর্তে প্রবেশদ্বার নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। যেহেতু বেনাপোল সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে সেহেতু জনস্বার্থে সওজ প্রয়োজন মনে করলে প্রবেশদ্বারটি ভেঙ্গে ফেলতে পারে।
×