ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটি

নাশকতার অভিযোগে নয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

নাশকতার অভিযোগে নয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানের ইঞ্জিনে অয়েল (লুব্রিকেন্ট) সিস্টেমের একটি নাট-বোল্ট খোলা থাকার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিমানের পরিচালক (প্রকৌশল) উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে সাসপেন্ড ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। বিমানবন্দর থানার ওসি নূরে আজম মিয়া জানান, অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকা-ের অভিযোগে বিশেষ আইনে এ মামলা দায়ের করা হয়। এখন আসামিদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ব্যারিস্টার তানজিমুল বারী, মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিমানের এমডি ও বিমান মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে মামলার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। ওই বৈঠকে বিমানের সাসপেন্ড ৯ কর্মকর্তা ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মঙ্গলবার কেবিনেট বৈঠকের পর ফ্লাইটে ত্রুটির ঘটনায় তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা করার ব্যাপারে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেলে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জনকণ্ঠকে বলেন, মামলার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিমুল বারীর নেতৃত্বে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব এসএম গোলাম ফারুকের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ফ্লাইটে ত্রুটির বিষয়ে তিনটি তদন্ত কমিটির জমা পড়া প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, মামলায় বিমানের নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদনে যে নয়জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে- তাদের সবাইকে আসামি করা হবে। এর বাইরে অজ্ঞাত বেশ কয়েকজন আসামি থাকতে পারে। উল্লেখ্য, বিমানের নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে- চীফ ইঞ্জিনিয়ার (প্রোডাকশন) দেবেশ চৌধুরী, চীফ ইঞ্জিনিয়ার (পরিদর্শন ও মান নিশ্চিতকরণ) এসএ সিদ্দিক ও প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (মেইনটেন্যান্স এ্যান্ড সিস্টেম) বিল্লাল হোসেন। এর আগে সাসপেন্ড করা হয় বিমানের প্রকৌশল শাখার ইঞ্জিনিয়ার এসএম রোকনুজ্জামান, সামিউল হক, লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন ও টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমানকে। এ নয়জনই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হয়। গত ২৭ নবেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৭৭ বিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাতে জরুরী অবতরণ করে। ত্রুটি মেরামত করে সেখানে চার ঘণ্টা অনির্ধারিত যাত্রা বিরতির পর ওই উড়োজাহাজেই প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরা বুদাপেস্টে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে এটাকে নিয়তি বলে উল্লেখ করলেও পরে বলেছেন, মনুষ্য সৃষ্টি যান্ত্রিক ত্রুটি। তারপর এ ঘটনার তদন্তে নতুন মাত্রা যোগ হয়। মন্ত্রণালয়ের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এনএসআইয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসানকে। এই তিনটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেই বিমানের নাট-বোল্ট ঢিলা হবার ঘটনা মুনষ্যসৃষ্ট বলে নাশকতার সন্দেহে এ মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
×