ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫০ বিলিয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে উচ্চমূল্যের পোশাক তৈরি করতে হবে

শ্রমিক আন্দোলন পোশাক খাতকে নতুন সঙ্কটে ফেলবে

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

শ্রমিক আন্দোলন পোশাক খাতকে নতুন সঙ্কটে ফেলবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বর্তমান শ্রমিক আন্দোলন পোশাক খাতকে নতুন সঙ্কটে ফেলবে বলে জানিয়েছেন সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর বাংলাদেশ এ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রির (সিইবিএআই) প্রধান নির্বাহী এবং বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা যখন এগিয়ে যাচ্ছি, তখন হঠাৎ শ্রমিক আন্দোলন পোশাক খাতকে নতুন সঙ্কটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সোমবার রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে ‘তৈরি পোশাকের রফতানি ৫০ বিলিয়নে নিয়ে যেতে সিইবিএআইয়ের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। আতিকুল ইসলাম বলেন, রানা প্লাজার পর আমাদের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের প্রত্যেকটি কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরির দিকে যাচ্ছে। কিন্তু এ সময়ে শ্রমিক আন্দোলন বায়ারদের জন্য নেতিবাচক বার্তা। শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করা কোন সমাধান নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সব কারখানাতেই শ্রমিক নেতা রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা এগুলো সমাধান করতে পারি। তবে কাজ বন্ধ করা কোন সমাধান হতে পারে না। বায়াররা এখন বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের উত্তরপ্রদেশে যাওয়ার কথা ভাবছে বলেও হতাশা প্রকার করেন বিজিএমইএর সাবেক এই সভাপতি। ২০২১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাকের রফতানি ৫০ বিলিয়নে নিয়ে যেতে পাঁচটি পি নিয়ে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি। এ পাঁচটি পির মধ্যে রয়েছে- পোর্ট (বন্দর), পপুলেশনের (জনসংখ্যা বা শ্রমিক), পাওয়ার (শক্তি), প্লেস (জায়গা) এবং পলিটিক্স (রাজনীতি)। আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের জনসংখ্যার কর্মদক্ষতা বাড়াতে হবে, পোশাক কারখানায় পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুৎ দিতে হবে, কর্মপরিবেশ উন্নত করতে হবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। তিনি জানান, বিশ্বের ১০টি সেরা পোশাক কারখানার মধ্যে ৭টি কারখানাই বাংলাদেশের। এটি উন্নতির লক্ষণ। গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিইবিএআই’র পরিচালক রেজাউল হাসনাত ডেভিড। বৈঠকে বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসানসহ সিইবিএআই’র অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করছেন ঢাকার আশুলিয়ার তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সেখানে ১৩টি কারখানায় কাজ বন্ধ রেখেছেন তারা। ডিরোজ, পাইওনিয়ার, ওয়াশিং ডিজাইন, পলমল গ্রুপ, আইডিয়াজ, সাফা নিট, ডংজিয়ান, এনভয়সহ ১০টি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কারখানা থেকে বের হয়ে গেছেন। আর সেতারা গ্রুপ, বান্দো ডিজাইন, স্টার লিংক ক্রিয়েশন কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে ভেতরে অবস্থান করছেন। আলোচনায় বক্তারা বলেন, তৈরি পোশাক খাতের গবেষণা এবং উন্নয়ন এখন পর্যন্ত বিদেশী গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। তাদের নির্দেশনা অনেক সময় দেশীয় উদ্যোক্তাদের ভুল পথেও নিয়ে যাচ্ছে। এ কথা বলেছেন সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর বাংলাদেশ এ্যাপারেলস ইন্ডাস্ট্রির (সিইবিএআই) পরিচালক রেজাউল হাসনাত ডেভিড। সিইবিএআই পরিচালক রেজাউল হাসনাত ডেভিড বলেন, ‘দেশীয় উদ্যোক্তাদের ভুল পথে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো- তারা সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে নিজেরাই জানেন না। এমনকি কোন্ কোন্ বিষয় জানেন না, সেটাও তারা বুঝতে পারেন না। আর এ কারণেই তৈরি পোশাক খাতে নিজস্ব গবেষক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান জরুঈ। আইএলও, সিআইডিএ এবং এইচএ্যান্ডএমের সহায়তায় তৈরি প্রতিষ্ঠান সিইবিএআই বাংলাদেশে সে কাজটি করে যাচ্ছে।’ সভায় বিজেএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশ মূলত টি-শার্ট, সোয়েটার, জ্যাকেট, শার্ট এবং ট্রাউজার- এ পাঁচ ধরনের পণ্য তৈরির ওপর নির্ভরশীল, যা তৈরি পোশাক খাতের মোট রফতানির প্রায় ৭৯ শতাংশ। বাংলাদেশকে এখন ক্রীড়া পোশাক, স্যুট, অন্তর্বাসসহ উচ্চমূল্যের পোশাক তৈরি করতে হবে। পণ্যে নানা বৈচিত্র্যকরণে জোর দিতে হবে। পাশাপাশি দক্ষতা বাড়ানো, অবকাঠামো নির্মাণসহ পোশাক খাতের বিদ্যমান বাধা দূর করার প্রতিও নজর দিতে হবে। তাহলেই ২০২১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা অধ্যয়ন অনুষদের ডিন প্রফেসর শিবলী রোবায়েত-উল ইসলাম বলেন, ‘৫০ বিলিয়ন রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উপায় নির্ধারণের জন্য বিজিএমইএকেই গবেষণা করতে হবে। এছাড়া তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য এখন একটি আলাদা মন্ত্রণালয় প্রয়োজন।’ সিইএবিআই সভাপতি আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘পোশাক খাতে বাংলাদেশ অনেক ভাল কাজ করলেও এর কোন ব্র্যান্ডিং হচ্ছে না। এখনও পোশাক খাতের বাংলাদেশ মানে রানা প্লাজা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশর ব্র্যান্ডিং অনেক জরুরী।’ শুধু সস্তা শ্রমের দেশ হিসেবে পোশাক তৈরি করে নয়, পোশাক খাতের ‘পূর্ণাঙ্গ সমাধানদাতা’ হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিত করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষতা বাড়ানো, অবকাঠামো নির্মাণসহ পোশাক খাতের বিদ্যমান বাধা দূর করার প্রতিও নজর দিতে হবে। তবেই ২০২১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে জানান অন্য বক্তারা।
×