ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গাইবান্ধায় নিশ্চিহ্নের পথে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬

গাইবান্ধায় নিশ্চিহ্নের পথে

একাত্তরে মহকুমা শহর গাইবান্ধায় অন্যতম টর্চারসেল এবং বধ্যভূমি ছিল স্টেডিয়াম সংলগ্ন নির্মাণাধীন গুদামে। বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী তৎকালীন হেলালপার্ক প্যাভিলিয়নে ক্যাম্প স্থাপন করে গুদাম ঘরকে নির্যাতন সেল হিসেবে ব্যবহার করে। প্রতি রাতেই নিরীহ লোকজন ধরে এনে হানাদার বাহিনী নৃশংসভাবে তাদের হত্যা করে মাটি চাপা দিয়েছে। মেয়েদের ধরে এনে সেখানে দিনেরবেলায় বেঁধে রাখা হতো। আর রাতে তাদের ওপর চলত পাশবিক নির্যাতন। যখন তারা নির্যাতন আর বর্বরতায় মরণাপন্ন হয়ে পড়ত, তখন গুলি করে নয়ত পেটে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করত। নির্যাতন শেষে হত্যা করে সেখানে পুঁতে রাখা হয়। ওই গুদাম চত্বরই নয়, স্টেডিয়ামের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে এবং হেলালপার্ক সংলগ্ন লাইনের ধারে শত শত নারী-পুরুষকে গুলি অথবা বেয়নেট চার্জ করে হত্যার পর মাটিচাপা দিয়ে পুঁতে রাখা হয়। এই টর্চার সেলটি এখনও বধ্যভূমির মর্যাদা পায়নি। এখনও সেখানে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মারক চিহ্ন হিসেবে গড়ে ওঠেনি কোন স্মৃতিস্তম্ভ। শুধু ২৬ মার্চ এবং বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদদের স্মরণে এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে মোমবাতি প্রজ্ব¡লন করে বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটি। এছাড়া পলাশবাড়ির সড়ক ও জনপদ বিভাগের রেস্ট হাউসের পেছনের গুদাম ছিল গাইবান্ধার অন্যতম টর্চারসেল ও বধ্যভূমি। এই রেস্ট হাউসে ক্যাম্প স্থাপন করে বর্বর পাকবাহিনী। তারা অসংখ্য বাঙালী নারী-পুরুষকে ধরে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করে। গুদামের ঘরগুলোতে মেয়েদের বেঁধে রেখে তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাত। এক পর্যায়ে তাদের হত্যা করে পুঁতে রাখা হয় গুদামের আশপাশের জমিতে। স্বাধীনতার দীর্ঘকাল পেরিয়ে গেলেও এই টর্চারসেল এবং বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া, রেলওয়ে জংশনে পাক সেনারা ঘাঁটি গেড়ে টর্চারসেল গড়ে তোলে। বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রেনযোগে সেখানে ধরে আনা হয় অসহায় নারী-পুরুষ। তারপর তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে এক সময় গুলি করে হত্যা করা হয়। পুঁতে রাখা হয় রেললাইনের আশপাশে। এমনকি ১৯৭১ সালে লোকোশেডের কয়লার ইঞ্জিনের চুল্লিতে জীবন্ত মানুষ ঢুকিয়ে পুড়িয়ে মারারও নজির রয়েছে। গাইবান্ধা জেলায় ৩০টিরও বেশি এমন টর্চারসেল ও বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। যেখানে মুক্তিযোদ্ধাসহ নিরীহ নারী-পুরুষকে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হয়। ঐতিহাসিক এসব মুক্তিযুদ্ধের স্মারক অবহেলিত হয়ে কালের কড়াল গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের পাখেয়া গ্রামে ’৭১-এর ১৮ অক্টোবর রাজাকাররা সাত গ্রামবাসীকে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। সেই বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ না করায় এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক জিএম চৌধুরী মিঠু জানান, এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেয়া না হলে কালের বিবর্তনে একদিন হারিয়ে যাবে। Ñআবু জাফর সাবু গাইবান্ধা থেকে
×