ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণহত্যার নাম ছিল খরচা খাতা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬

গণহত্যার নাম ছিল খরচা খাতা

একাত্তরে নীলফামারীতে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর অপারেশন খরচা খাতার গণহত্যার শিকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাসহ হতভাগ্য বাঙালীদের গণকবর এখনও অযতœ-অবহেলায় পড়ে আছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আর সাধারণ বাঙালীদের রক্তে ¯œাত বধ্যভূমিগুলো ওই এলাকার মানুষের কাছে স্বজন হারানোর অন্তহীন বেদনা জাগানো স্মৃতি। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থানে পাক সেনা ও তাদের দোসররা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, নাম দিয়েছিল অপারেশন খরচা খাতা। হাজার হাজার মানুষকে গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে তারা। ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল জলঢাকায় গোলনা ইউনিয়নের কালীগঞ্জ এলাকায় রাজাকার আলবদরের সহযোগিতায় পাকিস্তানী সেনারা তিনশ’রও বেশি নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সরে যেতে থাকা মানুষগুলোকে হত্যার পর সেখানেই মাটিচাপা দেয়া হয়। স্থানটি কালীগঞ্জ বধ্যভূমি বলে পরিচিতি পায়। কালীগঞ্জ হত্যাকা-ের শহীদদের স্মরণে সেখানে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিসৌধ। তবে বধ্যভূমির চারপাশের বেহাল দশা। ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে যেখানে সেখানে। সামনেই রয়েছে দোকান। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, বছরের একদিন পরিষ্কার করা হলেও বাকি দিনগুলো পড়ে থাকে চরম অবহেলায়। জেলা শহর থেকে কালীগঞ্জ বধ্যভূমির দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। জলঢাকা উপজেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কালীগঞ্জ বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হামিদুল ইসলাম বলেন, দিনটির কথা শুনলে গা শিউরে ওঠে। পাকিস্তানী বাহিনী বাঙালীদের ওপর যে বর্বরতা চালিয়েছে, তা ভুলবার নয়। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি। জলঢাকা উপজেলার ৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের ছোট্ট বাজার, যার বর্তমান নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু হাট। এখানে হত্যা করা হয়েছিল কাঁঠালী, বালাগ্রাম ও জলঢাকার তিন শতাধিক সনাতন ধর্মের মানুষ। সৈয়দপুরের তপন কুমার দাস বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশে এমন কোন জনপদ নেই যেখানে বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারদের বর্বরতার কাহিনী নেই। ১৩ জুন আমাদেরকে ভারতে নেয়ার উদ্দেশ্যে সকাল ৬টায় রেলস্টেশনে এনে ৪টি বগিতে ঠাসাঠাসি করে তোলা হয়। আমরা তখন অনুমান করলাম কি হতে যাচ্ছে। ট্রেন এসে গোলাহাট মাঠের মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে থেমে পড়ল। ওরা কিলঘুষি মেরে বলে, নামো সবাই। আমরা তখন বললাম, আমাদের গুলি করে মারো। তখন তারা বলল, গুলির অনেক দাম। তখন তারা একে একে নামিয়ে তলোয়ার দিয়ে কাটতে শুরু করল। আমরা মেয়েদের বললাম, তোমরা গায়ে আগুন লাগাও। আমি জানালার সাটার ভেঙ্গে লাফিয়ে পড়লাম ট্রেনের পূর্ব পাশের নিচু জায়গায়। হত্যা চলছিল পশ্চিম পাশে। প্রায় ১০-১৫ ফিট নিচে পড়ে দেখি, অনেকেই আমার মতো লাফিয়ে পড়তে গিয়ে গুলি খেয়েছে। আমরা বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে পালিয়ে ২১ জন বেঁচে যাই। সেদিন ৪১৩ হিন্দু মাড়োয়ারি নারী ও মুসলিম পুরুষকে গোলাহাট বধ্যভূমিতে আনা হয়েছিল। Ñতাহমিন হক ববী নীলফামারী থেকে
×