ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ বাঙালীর মহা অর্জনের দিন ১৬ ডিসেম্বর আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় বাংলা নামের দেশটি। রাজধানী শহর ঢাকার রেসকোর্স ময়দান সেই দুর্লভ মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে আছে। খোলা মাঠে হাজার হাজার মানুষের সামনে পাকিস্তানের বর্বর বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। আজ রাজধানীবাসী মনে করবে ফেলে আসা দিনের ইতিহাস। সারা দেশের মতো ঢাকাও আজ উদ্বেলিত। শহরজুড়ে থাকবে উৎসব অনুষ্ঠান। গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন আয়োজন চলছিল। আজ তা কয়েক গুণ হয়ে ধরা দেবে। বিজয় দিবসের সকালে শোভাযাত্রা বের করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হবে বর্ণাঢ্য পদযাত্রা। দেশের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও জাতীয় ভিত্তিক সংগঠনগুলোর কর্মীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন। জাতীয় পতাকার রঙে সেজে শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করবে তারা। আগের দিন বৃহস্পতিবার জোটের কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, দারুণ এক উৎসবের আমেজ। সবাই মিলে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিজয় দিবস উদযাপনের। শোভাযাত্রা ছাড়াও ঢাকার পাঁচটি জায়গা থেকে বিজয় দিবস উদাপন করবে জোট। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গত কয়েকদিন ধরেই চলছিল ‘মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালা। সপ্তাহব্যাপী বিজয় উৎসবের ষষ্ঠ দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘বাংলাদেশ জেগে ওঠো’ শীর্ষক আবৃত্তি প্রযোজনা নিয়ে আসেন আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের শিল্পীরা। আশরাফুল হাসানের গ্রন্থনায় প্রযোজনাটির নির্দেশনা দেন সৈয়দ শহীদুল ইসলাম। প্রতিদিনের মতোই এদিনের আয়োজনের সূচনা হয় ‘মুক্তিযুদ্ধ : তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে তরুণ প্রজন্মের ভাবনার কথা জানায় ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান, ফরাহ্্ দোলন ও মান্্তাসা আহমেদ। এদিনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্বে দেশাত্মবোধক গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করেন মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী। সব শেষে পথনাটক ‘খেয়াপারের মাঝি’ মঞ্চস্থ করে রঙ্গপীঠ নাট্যদল। সাজ্জাদ রিপনের রচনায় নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন গোলাম জিলানী। একই দিন মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠে ছিল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। এতে অংশ নেয় বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা), মনের জানালা বাপসা, সঙ্গীতসমাজ কল্যাণপুর, ঝিনুক শিশু-কিশোর সংঘ, সপ্তসুর সঙ্গীত একাডেমি, দিনা লায়লা সঙ্গীত একাডেমি, মৃদঙ্গ নৃত্যালয়, বধ্যভূমির সন্তানদল ও গ্রিনফিল্ড স্কুল এ্যান্ড কলেজ। আজ বিজয়ের দিনেও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে থাকবে বর্ণাঢ্য আয়োজন। বিজয় দিবসে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে জাতীয় জাদুঘর। নিয়াজীর আত্মসমর্পণের সাক্ষী ঐতিহাসিক টেবিলটি আরও ভাল করে দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এবার সেই টেবিলটির কথা। হ্যাঁ, এইটুকুন টেবিল। অতি সাধারণ দেখতে। এতই সাধারণ যে, ব্যবহার শেষে এটির কথা কেউ আর মনে রাখেনি। খোলা আকাশের নিচে সারারাত পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সকালে এক সাধারণ তরুণ ভাগ্যিস কুড়িয়ে ঘরে তোলে। আর তাতেই রক্ষা। টেবিল নয় শুধু, রক্ষা পায় বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস! এ টেবিলেই আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন পাকিস্তান ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল নিয়াজী। বাঙালী বুঝে পেয়েছিল স্বাধীন ভূখ-। অন্য সময় টেবিলটি জাতীয় জাদুঘরের ৩৮ নম্বর গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে এটি স্থাপন করা হয়েছে জাতীয় জাদুঘরের লবিতে। সুন্দর সরু পায়ে ইতিহাসটি যেন দাঁড়িয়ে আছে! সেগুন কাঠে তৈরি টেবিলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ ফিট। উচ্চতা ৩ ফিট এবং প্রস্থে এটি ২ ফিটের মতো। টেবিরের গায়ে বিশেষ কোন কারুকাজ নেই। চার কোনায় সামান্য ডিজাইন করা। হাল্কা হলুদ রংয়ের বার্নিশ। পুরনো বার্নিশ। কোথাও কোথাও রং উঠে গেছে। গায়ে লেগে আছে মোমের দাগ। বলপয়েন্টে ঘষে দু-তিনটি নামও উৎকীর্ণ করেছেন কেউ কেউ। তারপরও সরল সৌন্দর্য আর আভিজাত্য দারুণ চোখে পড়ে। আজ জাদুঘরে গিয়ে টেবিলটি খুব কাছে থেকে দেখতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
×