ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল দ্বীপে রূপ নিচ্ছে মহেশখালী, বদলে যাবে চেহারা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬

ডিজিটাল দ্বীপে রূপ নিচ্ছে মহেশখালী, বদলে যাবে চেহারা

ফিরোজ মান্না ॥ রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মহেশখালী। মাত্র ৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপটিকে ‘ডিজিটাল দ্বীপ’ হিসেবে গড়ে তোলার সমীক্ষা প্রায় শেষ। পান চাষের জন্য এ দ্বীপের পরিচিতি দেশবাসীর কাছে অনেক আগে থেকে থাকলেও-এবার দ্বীপটি বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিতি পাবে ডিজিটাল দ্বীপ হিসেবে। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে দ্বীপের বাসিন্দাদের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘কনভার্টিং মহেশখালী ইন টু ডিজিটাল আইল্যান্ড’ শীর্ষক এক ব্যতিক্রমী প্রকল্প হাতে নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কোরিয়ার টেলিকম কোম্পানি ‘কোরিয়ান টেলিকম’ (কেটি) ও ‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশন’ (আইওএম)। আগামী বছরের শুরুর দিকে দ্বীপটি পুরোপুরি ডিজিটাল দ্বীপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, কনভার্টিং মহেশখালী ইন টু ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্পের সমীক্ষা প্রায় শেষের পথে। এখন কোরিয়ান টেলিকম ও আইওএম গোটা দ্বীপটিকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসবে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কেটি ও আইওএম সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কেটি ডিজিটাল করার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। আর আইওএম এলাকার মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটাতে কাজ করবে। পুরো প্রকল্পের ব্যয় কেটি বহন করবে। মহেশখালী দ্বীপ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পর আরও কয়েকটি দ্বীপকে ডিজিটাল করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তি থেকে দেশের কোন এলাকাকে বাদ রাখা হবে না। এ জন্য মডেল হিসেবে প্রথমে মহেশখালী দ্বীপকে ডিজিটাল করা হচ্ছে। ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্পের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মহেশখালী বাংলাদেশের অংশ হলেও এলাকাটি অনেকটা বিচ্ছিন্ন। দ্বীপটিকে আমরা বিচ্ছিন্ন রাখতে চাই না। পুরো দ্বীপকে ডিজিটাল করে এলাকার জীবন মান ও মূল ভূখ-ের সঙ্গে যুক্ত করতে চাই। এখানে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ সেবা তৈরি করা হবে। এখানকার মানুষের সঙ্গে আর শহরের মানুষের কোন পার্থক্য থাকবে না। সমান সুযোগ সুবিধা তারা ভোগ করবেন। এতে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। তারা তখন ঘরে বসেই বিশ্বকে এক ভূখ- হিসেবে ভাবতে পারবেন। তাদের আর নদী-সাগর বিচ্ছন্ন করে রাখতে পারবে না। কোরিয়ান টেলিকম ও আইওএম এ দ্বীপটির মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণেই গোটা দ্বীপটি ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। এতদিন এখানে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক দিয়ে অল্প কিছু মানুষ ইন্টারনেট সেবা নিতে পেরেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সব মানুষই অল্প মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পাবে। এ প্রকল্পের লক্ষ্য তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে মহেশখালী দ্বীপের প্রান্তিক মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো। প্রকল্পের আওতায় মহেশখালী দ্বীপের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটির আওতায় নিয়ে আসা হবে। একই সঙ্গে এলাকার মানুষকে দেয়া হবে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনের নানা সেবা। কনভার্টিং মহেশখালী ইন টু ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্পটিকে একটি মডেল হিসেবে দাঁড় করানো হবে, যাতে অন্যান্য প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকাকে ডিজিটালে রূপান্তরে এ মডেলটি অনুসরণ করা যায়। উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যাকবোন অবকাঠামোসহ মহেশখালী ও কক্সবাজার এলাকার মানুষের চাহিদা বিশ্লেষণ করে পর্যটন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে। অন্যদিকে আইওএম এলাকায় মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সরকারের অন্যান্য সংস্থা, কেটি ও আইওএম’র সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। দেশে এই প্রথম একটি দ্বীপ ভূমিকে পুরোপুরি ডিজিটাল করা হচ্ছে। এ রকম আরও যেসব এলাকা রয়েছেÑ পর্যায়ক্রমে ওই সব এলাকাও ডিজিটাল প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
×