ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রই সমস্যায় পড়বে ॥ নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ বেজিং

বৈরিতার বেড়াজালে ট্রাম্প ও চীন

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

বৈরিতার বেড়াজালে ট্রাম্প ও চীন

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও বৈরিতা পূর্ণই হবে বলে মনে হয়। সোমবার এ দুই পক্ষের বাকযুদ্ধ তীব্র রূপ নেয়। কারণ চীনের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক অবস্থানের ওপর ট্রাম্পের আক্রমণের কড়া জবাব দেয় বেজিং। ওই বাকযুদ্ধে বিশ্বের দুটি বৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এক নতুন ও আরও বৈরী সম্পর্ক দানা বেঁধে ওঠারই আভাস। কারণ ট্রাম্প চীনের বাণিজ্য ও মুদ্রানীতি চ্যালেঞ্জ করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে এগিয়ে যাবেন। চীনা কর্মকর্তারা শুক্রবার রাতে এবং শনিবার সকালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইংওয়েনের সঙ্গে ট্রাম্পের নজিরবিহীন ফোন কলকে খাটো করেই দেখান। সাবেক রিপাবলিকান সিনেটর ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বব ডোলের উদ্যোগেই ওই ফোন কলের ব্যবস্থা করা হয় বলে ট্রাম্পের অন্তর্বর্তী টিমের এক কর্মকর্তা জানান। এ কালের সময় তাদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াও চীন ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিয়ে কথা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এমন এক ব্যক্তি এ কথা জানান। চীনরা সে জন্য ট্রাম্পকে নয়, তাইওয়ানকেই দোষারোপ করেন। কিন্তু তারা গত সপ্তাহান্তে চীনকে লক্ষ্য করে ট্রাম্পের পোস্ট করা কয়েকটি টুইট নিয়ে তাদের অসন্তোষ ব্যক্ত করেন। এসব টুইট তিনি চীনের মুদ্রানীতি ও দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক উপস্থিতির সমালোচনা করেছিলেন। সোমবার এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কাং আভাস দেন যে, বেজিংয়ের অসন্তোষের কথা ট্রাম্পের টিমের সদস্যদের কাছে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃস্থানীয় পত্রিকা পিপলস ডেইলি সোমবারের বৈদেশিক সংস্করণের প্রথম পাতায় ছাপানো এক ভাষ্যে বলেছে, ট্রাম্প ও এর অন্তর্বর্তী টিমের স্বীকার করা উচিত যে, চীন মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করা হলে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই সমস্যা সৃষ্টি করা হবে। মার্কিন চীন বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্প ও বেজিং দুটি দেশের মধ্যে নতুন সম্পর্কের সীমারেখা প্রতিষ্ঠাও করার চেষ্টা করছেন বলে মনে হয়। এ সম্পর্কে ২০০৯ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অনুসৃত সম্পর্কের তুলনায় বেশি বৈরিতাপূর্ণ হবে বলে মনে হয়। হোয়াই হাউসে কর্মকর্তারা গত সপ্তাহান্তে চীনা কর্মকর্তারা কাছ থেকে বহুকল রিসিভ করেন। এতে চীন ট্রাম্পের আচরণ নিয়ে অভিযোগ করেন। চীন বলে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এর সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা ও নিশ্চয়তা এর জন্য প্রয়োজনীয়। ওবামা প্রশাসনের এক উর্ধতন কর্মকর্তা একথা জানান। চীনারা ট্রাম্পের নীতিগত অভিপ্রায় নিয়েও দিক নির্দেশনা চাচ্ছিলেন। আর হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা সেই অভিপ্রায় জানেন না বলে উল্লেখ করেন। প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা এ কথা জানান। সিআইএর সাবকে চীন বিষয়ক বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার জনসন বলেন, আপনারা চীনের প্রতি মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গত আট বছর খুব বেশি নিশ্চয়তা দেখে এসেছেন। কিছু অনিশ্চয়তা ভাল জিনিস কিন্তু খুব বেশি অনিশ্চয়তা ভয়ের কারণ। ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মধ্য এপ্রিলের চীনের সঙ্গে তার প্রথম প্রকৃত পরীক্ষার সময় আসবে। তখন অর্থ দফতর অন্যান্য দেশের আচরণ সম্পর্কে এক মুদ্রা রিপোর্ট প্রকাশ করবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে প্রচার অভিযানে ট্রাম্প চীনকে ‘মুদ্রার এক কারসাজিকারী’ বলে অভিহিত করার সংকল্প ব্যক্ত করেন। এরূপ ঘোষণার ফলে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা করার প্রয়োজন হবে এবং সেটি বেজিংয়ের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার এক পদক্ষেপ হতে পারে। ট্রাম্প তার প্রচার অভিযানে চীনকে এর মুদ্রা ও বাণিজ্য নীতি নিয়ে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চীনের রফতানি পণ্যের ওপর শতকরা ৩৫%-৪৫% ভাগ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। নির্বাচিত হলে ট্রাম্প ঐসব প্রতিশ্রুতিতে নমনীয় হবেন কিনা তা স্পষ্ট ছিল না। কিন্তু সাইয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের কথাবার্তা চীনের প্রতি ট্রাম্পের মনোভাব নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের আগেই মার্কিন চীন উত্তেজনা বৃদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দুটি দেশের মধ্যে যে কোন সহযোগিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি নিয়ে ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মধ্যে মার্কিন চীন সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হলো। উত্তর কোরিয়ার সমস্যা নিরসনের জন্য ট্রাম্পের জন্য চীনের সাহায্যের প্রয়োজন হবে। সাইয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের কোন কল এবং এরপর ট্রাম্পের টুইটে মুদ্রার মূল্যমানের কারসাজি, যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি পণ্যের ওপর মাত্রাতিরিক্ত কর আরোপ এবং দক্ষিণ চীন সাগরের মধ্যে বিরাট সামরিক কমপ্লেক্সে নির্মাণের দায়ে চীনকে অভিযুক্ত করার ফলে বেজিংয়ে বিরাট অনিশ্চয়তা ভার দেখা দিয়েছে। ওবামার প্রথম মেয়াদে অর্থদফতরে চীনে নিযুক্ত দূত ডেভিড ডলার একথা বলেন। -ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
×