ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জেলা পরিষদ নির্বাচন

মনোনয়নপত্র আজকের মধ্যে জমা দিতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

মনোনয়নপত্র আজকের মধ্যে জমা দিতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে। প্রার্থীরা অনলাইন অথবা সরাসরি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। তবে প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার না হলে তিনি এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এছাড়াও যারা এ মাসের ২০ নবেম্বরের মধ্যে ভোটার হননি তারাও জেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ৬১টি জেলা পরিষদের নির্বাচন। এদিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ১৫টি সদস্য পদ ও ৫টি সংরক্ষিত সদস্য পদে ভোট গ্রহণ করা হবে। সংরক্ষিত পদে শুধুমাত্র নারীরাই অংশ নিতে পারবেন। ভোট প্রদানের সুবিধার্থে প্রতিটি জেলাকে ১৫টি ওয়ার্ডে ভাগ করতে ইতোমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটাররা এলাকাভিত্তিক ওয়ার্ডে তার ভোট প্রদান করবেন। স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই এ নির্বাচনে ভোট প্রদান করবেন। প্রার্থীরা নির্বাচনে কোন ভোট প্রদান করতে পারবেন না। আবার নির্বাচিত কোন প্রতিনিধি পদে থেকেও এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তাকে পদ থেকে পদত্যাগ করেই নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন, এম আবু ওসমান চৌধুরীসহ অন্তত তিনজন ভোটার স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছেন। ভোট সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার পর এ ধরনের ঠিকানা স্থানান্তরের আবেদন আমলে নিচ্ছে না কমিশন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিজ এলাকার ভোটার না হওয়ার কারণে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন না। অন্যসব স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন বর্তমানে দলীয় ভিত্তিতে হলেও জেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে নির্দলীয় ভিত্তিতে। তবে নির্দলীয় হলেও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে তারা এ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে বিএনপি অংশ না নেয়ায় এ নির্বাচন হয়ে পড়ছে অনেকটা একতরফা। আবার আওয়ামী লীগ থেকে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র দেয়ায় স্বতন্ত্র বা দল থেকে বিদ্রোহীরা এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ নির্বাচনে যেহেতু ভোটার হবেন একজন জনপ্রতিনিধি তাই বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র নির্বাচন করেও লাভ হবে না। কারণ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে পৌরসভা, উপজেলা এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নির্বাচিত প্রতিনিধির বেশিরভাই আওয়ামী লীগ দলীয়। ফলে দলের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচনে লাভবান হবে না। গত ২০ নম্বের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী দেশে প্রথমবারের মতো ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীরা আজকের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করবে ৩ ও ৪ ডিসেম্বর। ১১ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ধরা হয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের চেয়ারম্যান পদের বিপরীতে ২০ হাজার টাকা জামানত হিসেবে দাখিল করতে হবে। অপরদিকে যারা সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচন করবেন তাদের জামানত দিতে হবে ৫ হাজার টাকা করে। তবে এ নির্বাচনে প্রস্তাবক ও সমর্থক হিসেবে থাকবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। যারা এ নির্বাচনে ভোট প্রদান করবেন। একজন প্রস্তাবক ও সমর্থক একজনের বেশি প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থক হতে পারবে না। তবে একজন প্রার্থী তার পক্ষে একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে মাত্র একটি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জামানত হিসেবে দাখিল করতে পারবেন। একের অধিক মনোনয়নপত্র দাখিল করলে তাকে বাকি মনোনয়নপত্রের জন্য জামানত দাখিল করতে হবে না। প্রার্থীরা সরাসরি অথবা অনলাইনে মনোনয়পত্র জমা দিতে পারবেন। তবে অনলাইনে কেউ মনোনয়পত্র জমা দিলে বাছাইয়ের দিনে তাকে অবশ্যই মনোনয়নপত্রের মূলকপি দেখাতে হবে। নির্বাচনের সময় প্রতি জেলাকে ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিভক্ত করে এ ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে হবে একটি করে ভোটকেন্দ্র। ভোটহগ্রহণ চলবে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। স্থানীয় সরকারের চার ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এ নির্বাচনে ভোট দেবেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদে। ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার সংখ্যা রয়েছেন প্রায় ৬০ হাজারের মতো। সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা রয়েছে সাড়ে চার হাজার। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ১৩ জন করে ভোটার বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। এ হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদেই ভোটার রয়েছেন প্রায় ৬০ হাজারের কাছাকাছি। এছাড়া ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে প্রায় দেড় হাজার, ৩২০টি পৌরসভায় সাড়ে ৫ হাজার এবং ১১টি সিটি কর্পোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন। যারা এ নির্বাচনে ভোট দেবেন। এতদিন জেলা পরিষদে অনির্বাচিতদের নিয়োগ দেয়া হতো। আইন পাস হওয়ার পর এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন। ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ আইন করা হয়। এই আইনে একজন অনির্বাচিত ব্যক্তিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সরকার নিয়োগ প্রদান করত। ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনে নতুন আইন করে। নতুন এই আইনের অধীনে কোন বিধিমালা না থাকায় এতদিন জেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। ফলে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে অনির্বাচিত প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার।
×