ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের দুই মামলার রায় ১৬ জানুয়ারি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের দুই মামলার রায় ১৬ জানুয়ারি

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ অবশেষে দেশব্যাপী আলোচিত সাত খুনের দুটি মামলার রায় দেয়ার দিন ধার্য করা হলো। দিনটি হচ্ছে আগামী ১৬ জানুয়ারি ২০১৭। এদিন চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে আদালত। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এ মামলার বিচারক নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ আসামি পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। ৩৮ কর্মদিবসে শুনানি, সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। এই মামলার রায় কী হয় দেশ ও দেশের বাইরের প্রবাসীও এ রায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি নূর হোসেনসহ সকল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি করেন। এদিকে নিহতদের পরিবারের পক্ষে প্যানেল মেয়র নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি জানান, তারা সাত হত্যার সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, চার্জশীটভুক্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ১২ আসামি পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। গত ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাসহ ৭ জনকে অপহরণের তিন দিন পর তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। বুধবার শেষ দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুরু হয়। এদিন ৭ খুনের ঘটনায় গ্রেফতার র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা এম এম রানা, বজলুর রহমান ও আসাদুজ্জামানের পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক সম্পন্ন করেন। এর আগে টানা ৫ দিন সাত হত্যাকা-ে জড়িত ৩৫ আসামির পক্ষে তাদের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক শেষ করেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে এই মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন, র‌্যাবের চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট কর্নেল (অব) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানাসহ ২৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। গত ২১ নবেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন তাদের প্রথম দিনের যুক্তিতর্ক শেষে আদালতের কাছে সব আসামিকে রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকরের আবেদন জানান। আদালত সূত্র জানিয়েছে, সাত হত্যা মামলায় ১২৭ জনের মধ্যে ১০৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া ১৯জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী (পিপি) এ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, তারা আদালতে প্রমাণ করতে পেরেছেন হত্যাকা-ে র‌্যাবের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন। তিনি জানান, এতে বাদীরা ন্যায় বিচার পাবেন এবং আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে। বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন জানান, তারা এ মামলায় প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন আসামিরা এ হত্যাকা-ে সম্পৃক্ত এবং প্রত্যাশা যে আসামিদের সর্ব্বোচ্চ সাজা হবে। আসামি পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট সুলতানুজ্জামান জানান, আসামিরা এ হত্যা মামলায় জড়িত ছিলেন না, এটা তিনি আদালতে প্রমাণ করতে পেরেছেন। তিনি মনে করেন, ১৬ জানুয়ারির রায়ে আসামি পক্ষ ন্যায় বিচার পাবে। এদিকে পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানিয়েছেন, এ মামলায় তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে (৮ এপ্রিল ২০১৫) চার্জশীট প্রদান করতে পেরেছেন। এবং পলাতক ১২ আসামিকেও দ্রুত গ্রেফতার করতে পারবেন। চার্জশীট অনুযায়ী মামলার রায় বাদীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হবে বলে তিনি আশাবাদী। ২৩ আসামি কারাগারে ॥ নূর হোসেন, লে. কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আরিফ হোসেন ও লেঃ কমান্ডার (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) এম এম রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরগুজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হিরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়ব, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, এসআই পুর্ণেন্দু বালা, ল্যান্স কর্পোরাল রহুল আমিন, এএসআই বজলুর রহমান, হাবিলদার (বিজিবি) নাছির উদ্দিন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, সৈনিক নুরুজ্জামান, কনস্টেবল বাবুল হাসান, সৈনিক আসাদুজ্জামান নুর, নূর হোসেনের সহযোগী মর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু ওরফে মিজান, রহম আলী, আবুল বাশার। এখনও পলাতক ১২ আসামি ॥ আদালতে অভিযুক্ত ৩৫ জনের মধ্যে নূর হোসেন ছাড়া এখনও পলাতক ১২ জন এখনও আসামি গ্রেফতার হয়নি। এদের মধ্যে ৮ জন র‌্যাবের সদস্য ও ৪ জন নূর হোসেনের সহযোগী। পলাতক আসামিরা হলো-অবসরপ্রাপ্ত র‌্যাব সদস্য কর্পোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আব্দুল আলিম, মহিউদ্দিন মুন্সী, আল আমিন শরিফ, তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান, নূর হোসেনের সহযোগী মোঃ সেলিম, সানা উল্লাহ ছানা, শাহজাহান ও জামাল উদ্দিন।
×