ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেশ কয়েকটি দাবি পেশ

নাসিক নির্বাচনে সেনা মোতায়েন চেয়ে এবার ইসিতে চিঠি বিএনপির

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

নাসিক নির্বাচনে সেনা মোতায়েন চেয়ে এবার ইসিতে চিঠি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন চেয়ে এবার ইসিতে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে বিএনপি। চিঠিতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু করতে ভোটের ৭ দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া সব প্রার্থীর জন্য সমান নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টিসহ সরকার সমর্থিত প্রার্থী এবং অন্য প্রার্থীরা নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গ করছে কি-না তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিটি ইসি সচিব মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহর কাছে পৌঁছে দেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। চিঠিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়াও নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বিএনপির পক্ষ থেকে আরও একাধিক দাবি জানানো হয়েছে। অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- এ নির্বাচনে বিএনপিসহ অংশ নেয়া সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা, অস্ত্র উদ্ধার, ভোটারদের নিরাপদে আসা-যাওয়া, ভোট কারচুপি রোধ, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা, নির্বাচনের ১০ দিন আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তালিকা সরবরাহ, নির্বাচনে দায়িত্ব পালনরত কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাৎক্ষণিক বদলির ব্যবস্থা, পোলিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ও কেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা। তবে জানা গেছে, বিভিন্ন দাবি নিয়ে ইসিতে বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দিলেও মূলত তিনটি দাবিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সেনা মোতায়েনেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি এবং সরকার সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে কি-না তা খতিয়ে দেখার বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। ইসিতে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়ার আগেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানানো হচ্ছে। এ বিষয়ে দলের পল্টন কার্যালয়ে একাধিকবার এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তার কথা দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি মনোনয়নপত্র জমার দিন বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলেন। অবশ্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভী নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করেন। বিএনপির পক্ষ থেকে এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের একাধিকবার দাবি জানানো হলেও ইসির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। যদিও অনানুষ্ঠিকভাবে ইসি সচিব জানিয়েছেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোন প্রয়োজন দেখছেন না তিনি। এছাড়াও প্রধান নির্বাচন কমিশনারও জানিয়েছেন, নাসিক নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ইসির বৈঠক হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ১৪ ডিসেম্বর নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে এবং এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পর্যালোচনা করতে বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছে। ইসি সচিব জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় উৎসবমুখর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোন্ কোন্ বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে তা ১৪ ডিসেম্বরই জানা যাবে। নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে ইসি। এছাড়াও ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী এলাকায় বৈধ অস্ত্র জমা দেয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে দোষারপের রাজনীতিও শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে উভয়ই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই এ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারী বাসভবন গণভবনে ঘরোয়া বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সংসদ সদস্যদের অংশ নেয়ার বিষয়কে আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। অবশ্য ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি। কারণ রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ঘরোয়া মিটিং করতেই পারে। এটা নির্বাচনী এলাকায় হয়নি। যদিও ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সাংসদসহ সরকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি নির্বাচনী এলাকায় তারা কোন ঘরোয়া বৈঠকেও অংশ নিতে পারবেন না। তবে ইসি সচিব এর আগে জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যেহেতু সরকারী সুবিধভোগী নন, তাই তিনি নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন। তবে বিধি অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে কোন জনসভা, মিছিল, সমাবেশ, শোডাউনের সুযোগ নেই তার। আইন অনুযায়ী শুধু পথসভা করতে পারবেন।
×