ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টাম্পাকো ট্র্যাজেডি

স্বজনদের পাশে দাঁড়ালেন টঙ্গী বিসিক শিল্পোদ্যোক্তারা

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২৭ নভেম্বর ২০১৬

স্বজনদের পাশে দাঁড়ালেন টঙ্গী বিসিক শিল্পোদ্যোক্তারা

নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী ॥ টাম্পাকো দুর্ঘটনায় হতাহত ও নিখোঁজদের স্বজনদের আর্থিক অনুদান দিয়েছেন টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরির কারখানা মালিকরা। শনিবার দুপুরে বিসিকের ডেসকো সাবস্টেশন প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে নগদ অনুদান বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল উপস্থিত থেকে নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৭ হাজার টাকা ও আহতদের ১১ হাজার টাকা করে নগদ অনুদানের টাকা বিতরণ করেন। এছাড়া স্থানীয় রেডিসন পোশাক কারখানার নিহত শ্রমিক (পথচারী) আসমার পরিবারকে নগদ ৫০ হাজার টাকার অনুদান দেয়া হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফন করার অজুহাতে আসমার নাম জেলা প্রশাসনের তালিকায় ছিল না। ফলে এ পর্যন্ত কোন অনুদান পায়নি আসমার পরিবার। আসমার পরিবারকে অনুদান দেয়ার জন্য বিভিন্ন শ্রমিক ও মানবাধিকার সংগঠন দাবি জানিয়ে আসছিল। এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলও সংশ্লিষ্টদের সুপারিশ করেন। শনিবার বিসিক মালিক সমিতির অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এমপি জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, আসমার পরিবার যেহেতু এ পর্যন্ত কোন সহায়তা পায়নি তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে আসমার পরিবারকে নগদ ৫০ হাজার টাকার অনুদান দেয়া হলো। এদিকে টাম্পাকো কর্তৃপক্ষ এখনও দুর্গত শ্রমিকদের পাশে না দাঁড়ানোয় বিস্ময় প্রকাশ করে এমপি জাহিদ আহসান রাসেল বক্তৃতায় বলেন, কারখানা ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও মালিক ধ্বংস হননি তা আমরা ভাল করেই জানি। টাম্পাকোর উপার্জন দিয়ে মালিক বহু অর্থসম্পত্তির মালিক হয়েছেন। শ্রমিকরা যখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন মালিক তখন বিলাসী জীবনযাপন করছেন। ন্যূনতম মানবতাবোধ থাকলে কোন মালিকই এমন নিষ্ঠুর হতে পারেন না। এমপি আরও বলেন, আমি অনুষ্ঠানে থেকেই মোবাইলে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই টাম্পাকোর হতাহত শ্রমিকদের পরিবারকে সরকার ঘোষিত অনুদানের চেক বিতরণ করা হবে। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা বিসিক’র উপব্যবস্থাপক আলহাজ আবুল বাশার, টঙ্গী বিসিক ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম, টঙ্গী বিসিক মালিক সমিতির সহসভাপতি রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল টিউব কারখানার সাবেক সিবিএ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ও তার সহোদর শ্রমিক মালিকানায় পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান বিকম মতি প্রমুখ। এদিকে নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা স্থানীয় সংসদ সদস্যের হাত থেকে অনুদানের অর্থ নেয়ার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিখোঁজ শ্রমিক রফিকুলের স্ত্রী নার্গিস দ্রুত ডিএনএ টেস্ট সম্পন্ন করতে এমপির সহায়তা চেয়ে বলেন, ‘স্যার স্বামীর লাশটা পাইলেও তো শান্তি পাইতাম।’ উল্লেখ্য, টঙ্গী বিসিকের টাম্পাকো ফয়েল কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এতে প্রতিষ্ঠানটির চারটি ভবনের তিনটি ধসে পড়ে। ঘটনার পর একটানা দীর্ঘ ৪ দিন ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট রাত-দিন চেষ্টা চালিয়ে ওই কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা ১২ সেপ্টেম্বর উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ আরও একজনের লাশ থাকার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গত ১০ অক্টোবর উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়। টাম্পাকো দুর্ঘটনায় ৪২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৭৫ জন। সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়া ৮ লাশ ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢামেক মর্গে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই ৮ লাশসহ এখনও নিখোঁজ আছেন ৯ জন। কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগ করে সংঘটিত দুর্ঘটনায় শ্রমিক হতাহতের অভিযোগে কারখানার মালিককে প্রধান আসামি করে টঙ্গী মডেল থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
×