ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাঁওতালদের রোপণ করা ধান কাটছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ॥ ক্ষোভ, উত্তেজনা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

সাঁওতালদের রোপণ করা ধান কাটছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ॥ ক্ষোভ, উত্তেজনা

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২৪ নবেম্বর ॥ হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে অবশেষে গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের সাঁওতালদের রোপণ করা জমির ধান কাটা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় মিলের শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা শুরু করে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ। ধান কাটার সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি রাজস্ব) শফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল হান্নান, গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সুব্রত কুমার সরকার, দু’জন ম্যাজিস্ট্র্রেট, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিসহ চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। এ সময় ওই এলাকায় সম্ভাব্য গোলযোগ এড়াতে প্রয়োজনীয় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ধান কাটা নিয়ে সাঁওতালদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও উত্তেজনা থাকলেও তাদের পক্ষ থেকে কোন রকম বাধার সৃষ্টি করা হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সামাদ জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ইতোপূর্বে একাধিকবার সাঁওতালদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে প্রশাসনের সহযোগিতায় ধান কেটে নেয়ার জন্য তাদের বলা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের পক্ষ থেকে কোন সাড়া মেলেনি। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানকে তাদের কাছে পাঠানো হলে তারা ধান কেটে নেয়ার জন্য দুটি শর্ত আরোপ করেন। শর্তগুলো হচ্ছে- ইক্ষু খামারে ২ কি.মি. এলাকা জুড়ে বসানো কাটা তারের বেড়া তুলে ফেলতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। যা কোনক্রমেই সম্ভব ছিল না। সেজন্য হাইকোর্টের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই ধান কেটে নেয়া হচ্ছে। কেটে নেয়া ধানগুলো যথারীতি বস্তায় সংরক্ষণ করে সাঁওতালদের তা নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হবে। অন্যথায় একজন জামিনদারের কাছে ধানগুলো সংরক্ষিত রেখে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে বলে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে সাহেবগঞ্জ বাগদা আদিবাসী ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সহ-সভাপতি ডাঃ ফিলিমন বাসকে ও কোষাধ্যক্ষ রাফায়েল হাসদা মোবাইল ফোনে জানান, তারা ধান কেটে নিতে আগ্রহী ছিলেন। এজন্য তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জানিয়েছিলেন যে, কাটা তারের বেড়া সরিয়ে তাদের রাস্তা করে দিতে, যাতে তারা সহজেই ধান কেটে নিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু প্রশাসন তাদের কথার কোন কর্ণপাত না করেই মিল কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করছে ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এটা কিছুতেই ঠিক হলো না বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, উপজেলা ভূমি প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সরেজমিনে জরিপ মোতাবেক সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকায় বসতি স্থাপনকারী সাঁওতালরা ৪৫.৫০ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলেন। যা ইতোমধ্যে পেকে কাটার উপযোগী হয়েছে। এদিকে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকায় সাঁওতালদের বসতি স্থাপন, উচ্ছেদ ও হামলার মূল হোতা গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সাহেবগঞ্জ ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি শাকিল আকন্দ বুলবুল ঘটনার ক’দিন পর থেকেই ঢাকা যাওয়ার কথা বলে এলাকা থেকে উধাও হয়ে গেছেন। ফলে তার অনুপস্থিতিতে ওই ইউনিয়নের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর হোতা সাহেবগঞ্জ ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী প্রধানও উধাও হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের সাঁওতালদের অন্যতম অভিযোগ, সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকায় তাদের পৈত্রিক ভূমি উদ্ধারের নামে ওই এলাকায় বসতি স্থাপন এবং এজন্য দরিদ্র সাঁওতালদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় এবং পরবর্তীতে মিল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশ করে তাদের উচ্ছেদের জন্য সেই মূল হোতা বলে সাঁওতালদের অভিযোগ। উল্লেখ্য, গত ৬ নবেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের আখের বীজ কাটাকে কেন্দ্র করে খামারের জমি দখলকারী আদিবাসী সাঁওতালের সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারী ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এ সময় সাঁওতালদের নিক্ষিপ্ত তীর-ধনুকের আঘাতে ৮ পুলিশ তীরবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত সাড়ে ৩শ’ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে।
×